প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অভিবাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আইন ও নীতি কাঠামো প্রণয়ন ও সংস্কার করার কাজ করছে।
রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়াও নিরাপদ অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে অভিবাসী বাংলাদেশিদের সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আমাদের সরকার প্রতি উপজেলা থেকে বছরে গড়ে এক হাজার কর্মীকে বিদেশে প্রেরণের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ পালন করা হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। এ দিবস উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী অভিবাসী কর্মী তাঁদের পরিবারের সদস্যবৃন্দসহ অভিবাসন প্রক্রিয়া ও অভিবাসী কল্যাণের সাথে সম্পৃক্ত সকল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া, বৈধপথে প্রেরিত রেমিট্যান্সের গুরুত্বকে উপজীব্য করে এবারের আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘থাকব ভালো, রাখব ভালো দেশ; বৈধপথে প্রবাসী আয়- গড়ব বাংলাদেশ’ যথার্থ হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছি। এ ব্যাংক হতে অভিবাসী কর্মীগণ সহজ শর্তে ঋণ গ্রহণ করতে পারছেন। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ফলে বেকারত্ব দূরীকরণ ও দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। আমি আশা করি, বর্তমান সরকারের অভিবাসনবান্ধব কর্মপরিকল্পনা ও কার্যক্রমসমূহ বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাসী ও তাঁদের পরিবারের কল্যাণ সাধন, দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং বিশ্ব শ্রমবাজারে বাংলাদেশের সুনাম সমুন্নত রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাঙালি জাতি দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানি শাসকদের নিপীড়ন এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে মহান স্বাধীনতা অর্জন করেছে। স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরই জাতির পিতা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেন। সেই ধারাবাহিকতায় আজ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ১৭৪টি দেশে প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন। তাঁদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স এদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারির আপদকালীন সময়েও অভিবাসী কর্মীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদকে শক্তিশালী করেছে এবং অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯ লক্ষ ৬৬ হাজার ৩৩৯ জন কর্মী বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন এবং বাংলাদেশ বৈধ চ্যানেলে প্রায় ২১.০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করেছে। বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণকে উৎসাহিত করার জন্য প্রেরিত রেমিট্যান্সের উপর ইতোপূর্বে প্রদত্ত ২ভাগ প্রণোদনাকে ২.৫ভাগ-এ উন্নীত করা হয়েছে। অভিবাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক আইন ও নীতি কাঠামো প্রণয়ন ও সংস্কার করা হচ্ছে। এছাড়াও নিরাপদ অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। দেশের উন্নয়নে অভিবাসী বাংলাদেশিদের সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আমাদের সরকার প্রতি উপজেলা থেকে বছরে গড়ে এক হাজার কর্মীকে বিদেশে প্রেরণের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে সক্ষম হবেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন। খবর: বাসস