বুদ্ধিজীবীদের হত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়: অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া
প্রকাশ: বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:২৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষদিকে দেশের শিক্ষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও নানা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পেশাজীবীদের টার্গেট করে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা। যদিও মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা জুড়েই তারা সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবীদেরও হত্যা করেছে। এগুলো ছিল পরিকল্পিত, হিসাব করা এবং ঠাণ্ডা মাথার হত্যাকাণ্ড যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানি সৈন্যদের কবল থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রামরত জাতির মেরুদণ্ডকে পঙ্গু করে দেওয়া।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৯১৬তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (নীলদল) সাবেক সভাপতি, লাইফ এন্ড আর্থ সাইন্স অনুষদের প্রাক্তন ডিন অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া, জার্মান আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল, ইতালি আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রসুল কিটন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিনিয়র সাংবাদিক, ভোরের পাতা সংলাপের সমন্বয়ক মাকসুদা সুলতানা ঐক্য।
অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, এই ভূখণ্ডের বাঙালিকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ২৩ বছর আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে ও ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের নেতৃত্বদানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেছিলেন এবং এই ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিলেন এবং ২ লাখ মা-বোনদের ইজ্জত হারাতে হয়েছিল। আজকে এই ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিল তারপরেও আমরা প্রতি বছর আজকের দিনটাকে আলাদা করে পালন করি। কারণ আজকের দিনটার আলাদা একটা প্রেক্ষাপট আছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষদিকে দেশের শিক্ষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও নানা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পেশাজীবীদের টার্গেট করে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা। যদিও মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা জুড়েই তারা সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবীদেরও হত্যা করেছে। কিন্তু ডিসেম্বরের শুরুতে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে তারা আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের তালিকা করে নির্মূল করার ঘৃণ্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং সে অনুযায়ী আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়। নিশ্চিত পরাজয়ের আগমুহূর্তে চূড়ান্ত আঘাত হানে অদূর ভবিষ্যতের স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার অভিপ্রায়ে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নিঃস্ব করার উদ্দেশ্য থেকে। তারা চেয়েছিল, স্বাধীনতা পেলেও এ জাতি যেন কোনোভাবেই মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। সে সময়ে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে যে নতুন দেশটি সংযুক্ত হবে তখন যাতে মেধাগত দিক থেকে এই দেশটি কখনো মেরুদণ্ড সোজা করে না দাঁড়াতে পারে সেটাই ছিল আসলে তাদের লক্ষ্য।