শহীদ আব্দুল আওয়াল,মহান মুক্তিযুদ্ধের অনন্য এক সংগঠক। মুক্তিযুদ্ধকালে নেত্রকোণা দুর্গাপুরে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ফলস্বরূপ পাকহানাদার বাহিনী তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
শহীদ আব্দুল আওয়াল ছিলেন দুর্গাপুরের এম.কে.সি.এম. পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।১৯৬৫ সালে তিনি এম.কে.সি.এম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
তিনি ছিলেন সংবেদনশীল সরল মনের মানুষ। এই স্কুলের প্রশাসনিক কাজের দক্ষতা তার যেমন ছিলো তেমনি শিক্ষার্থী সহ অভিভাবকদের আস্থার নাম ছিলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে খুব প্রিয় ছিলেন 'আওয়াল স্যার' নামে। বিদ্যালয় পরিচালনা ও পড়ানোর ফাঁকে ফুলের বাগান, লেখালেখির চর্চা সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কাজে যুক্ত ছিলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে এই দেশপ্রেমিকের ভূমিকায় ক্ষুদ্ধ হয়ে ১৯৭১ এর ৩ আগষ্ট রাতে মুসলিম লীগের চিহ্নিত রাজাকার কিতাব আলী তালুকদারের নেতৃত্বে রাজাকারের দল তাকে ধরিয়ে দেয় পাকিস্তানি ঘাতক হানাদার বাহিনীর হাতে। হায়েনার দল তাঁকে আটক করে বিরিশিরি পাকিস্তানি ক্যাম্পে নিয়ে টানা তিন দিন নির্যাতন করে। ৭ আগষ্ট মধ্যরাতে তাকে বিরিশিরি বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে লাশটি ভাসিয়ে দেয় সোমেশ্বরী নদীতে। লাশের সন্ধান পাননি তার শুভাকাঙ্ক্ষী ও আত্মীয় স্বজনেরা।
বাংলাদেশের এই বীর সন্তান প্রসঙ্গে প্রবীণ রাজনীতিবিদ দুর্গাপ্রসাদ তেওয়ারী বলেন,আব্দুল আওয়ালের প্রচেষ্টাতে দুর্গাপুরে সে সময় তরুণ-যুবারা সংগঠিত হয়। তারা দৃঢ় চিত্তে দেশমাতাকে মুক্ত করায় সংকল্পবদ্ধ হয়।
সাবেক ডেপুটি কমান্ডার,বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেন তালুকদার বলেন,একজন দক্ষ প্রধান শিক্ষক হিসেবে আওয়াল স্যারকে আমি দেখেছি। তিনি শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক ছিলেন। তিনি ভালো কিছুতে সবসময়ই আমাদের উৎসাহ দিতেন। দুর্গাপুরকে আলোকিত করতে তার অনেক প্রচেষ্টা ছিল। সমাজে তার ভূমিকা ছিল সুদূরপ্রসারী। পাক বাহিনী এখানে এসে তার কাজগুলো সম্পর্কে জানতে পারে। পরে তাকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় গেজেটভুক্ত করতে সরকারের প্রতি দাবি জানাই।
শিক্ষক এ.কে.এম.ইয়াহিয়া বলেন,আওয়াল স্যার ছিলেন শিক্ষানুরাগী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। দুর্গাপুরের কলেজ প্রতিষ্ঠাকল্পে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে তার দারুণ ভূমিকা ছিল। তার নীতি আদর্শ আমাদের অনুসরণ করতে হবে। তার মহৎ কর্মগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।
শহীদ আব্দুল আওয়ালের ছেলে তোফায়েল আওয়াল বলেন,আমার আব্বাকে নিয়ে আমরা গর্বিত। দেশের জন্য তিনি জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি আমার পিতাকে শহীদ বুদ্ধিজীবি হিসেবে সরকারিভাবে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাই।
ইতিহাসের এই সূর্যসন্তানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে শহীদ আওয়াল স্মৃতি সংঘ নামে ২০০৬ সালে তরুণ-যুবকদের উদ্যোগে একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে এটি নানা সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রম করে যাচ্ছে। এছাড়া ছাত্রদের উদ্যোগে ইতোপূর্বে এম.কে.সি.এম. স্কুল প্রাঙ্গণে গড়ে তোলা হয়েছে আওয়াল স্মৃতি তোরণ।