চলনবিল এলাকা জুড়ে সরিষার ক্ষেত হলুদ ফুলে একাকার হয়ে গেছে। কৃষকরা আশা করছেন এবার বাম্পার ফলনের। এ কারণে কৃষকরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি কর্মকর্তারাও। এ বছরে চলনবিলের চারটি উপজেলাসহ সিরাজগঞ্জে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্র জানায়।
জানা যায়, এ বছর চলনবিলের তাড়াশ, সিংড়া, উল্লাপাড়া উপজেলার মাঠে মাঠে সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর সরিষা আবাদে তেমন কোনো পোকার আক্রমণ না থাকায় কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। তুলনামূলক এ বছর সরিষার আবাদ অনেক ভালো হয়েছে। তাছাড়া সময়মত সার-কীটনাশক ব্যবহারের কারণে সরিষার আবাদ করতে কৃষকের কোনো প্রকার বেগ পেতে হচ্ছে না। পোকার আক্রমণ থেকে সরিষা রক্ষা করতে জেলা কৃষি অফিস থেকে আগেই বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল বলে কৃষকরা জানান।
তাড়াশ উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি লক্ষমাত্রা অজির্ত হয়েছে। চলতি বছরে তাড়াশ উপজেলায় ৫ হাজার ২শত হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা ছিল। কিন্ত লক্ষমাত্রার চেয়ে ৬হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে।
তাড়াশ উপজেলার ঘরগ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম জানান বলেন, চলনবিলা লে দ্রুত বন্যার পানি নেমে যাওয়ার কারণে আগাম সরিষার চাষ করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, একসময় চলনবিলের কৃষকরা শুধু ইরি-বোরো এক ফসলী আবাদ করে হাজার হাজার হেক্টর জমি পতিত রাখত। কালের বিবর্তনের সাথে সাথে এ অ লের কৃষকদেরও বুদ্ধির বিকাশ ঘটেছে। তারা বিগত দেড় যুগ ধরে ইরি-বোরো, আমন, ভূট্টা, ও সরিষার আবাদে ঝুঁকেছে।
তাড়াশ উপজেলার ধাপ-তেতুলিয়া গ্রামের কৃষক আবু সায়েম বলেন, ৮ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি ফলনও ভাল হয়েছে। বিশেষ করে এখন পর্যন্ত কোনো পোকার আক্রমণ দেখা দেয়নি। সব কিছু ঠিক থাকলে এবার প্রতি বিঘা জমিতে ৬-৭ মণ হারে, এমনকি তারও বেশি সরিষা ঘরে তুলতে পারবেন বলে তিনি জানান।
তাড়াশ পৌর এলাকার ভাদাস গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, ৩বিঘা জমিতে তিনি সরিষার আবাদ করেছেন। সময়মত বীজ, সার পাওয়ায় এবং বন্যার পানি যথাসময়ে নেমে যাওয়াতে চলনবিলে ব্যাপকহারে সরিষার আবাদ হয়েছে। তাছাড়া এবছর সরিষার গাছ যে সুন্দর দেখা যাচ্ছে তাতে ঘনকুয়াশা, খুব বেশি শীত না পড়লে এবং কীট-পতঙ্গের আক্রমন না হলে সরিষার আশাতীত ফলন হবে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার লুনা জানান, এ বছর কৃষককে সরিষা চাষে ব্যাপক সচেতন করা হয়েছে। সরিষা চাষের পদ্ধতি ও পোকার আক্রমন হলে কি করনীয় সে বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করেছেন। বিভিন্ন গ্রামে কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ও উঠোন বৈঠক করেছেন। তাছাড়া কর্মকর্তারা সব সময় মাঠে থেকে কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।