মোংলায় ৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন ও শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমের মালামাল ক্রয় সংক্রান্ত বিষয় সরকারী বরাদ্ধের প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা আতœসাতের ঘটনায় শেষ হয়েছে প্রতিনিধি দলের সরেজমিনে তদন্ত। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গঠিত এ তদন্ত কমিটি পৌরসভা সহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে মালামাল ক্রয় খরচের বিল ভাউচার ও সংস্কারের স্থান ঘুরে দেখেন তারা। সরকারী এ বরাদ্ধের টাকা শিক্ষা কর্মকর্তাগন বা অন্য কেউ উৎকোচ গ্রহন কিংবা কি কি সমস্যা রয়েছে তা শহরের কাইনমারী প্রাঃ মডেল স্কুলে সকল প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে লিখিত নেয়া পর তাদের দীর্ঘ সময়ের তদন্ত সমাপ্ত করেণ। শিশুদের শিক্ষা সরঞ্জাম না কিনে সরকারী অর্থ আত্মসাতের ফলে ভেঙ্গে পরেছে এ এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাবস্থা। তাই কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সঠিক তদন্তে ব্যাবস্থা নেয়ার দাবী স্থানীয়দের।
মোংলা প্রাঃ শিক্ষা অফিস সুত্রে জানায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরে মোংলা ৭১ টি সরকারী প্রাথমিক স্কুলগুলো সংস্কার, ক্রিড়া সামগ্রী ক্রয় ও স্লিপের জন্য দুই কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয় সরকার। এছাড়া ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ এ দুই বছর সহ মোট ৩ অর্থ বছরের সাড়ে ৫কোটি টাকা দিয়ে নাম মাত্র খরচ দেখিয়ে বাকী টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে উপজেলা প্রাঃ শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন্ত কুমার পোদ্ধার, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান ও ৭১জন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এদিকে, যে সকল স্কুলে মাইনার মেরামত কাজের দুই লক্ষ টাকা করে বরাদ্ধ হয়েছে, সরকারী নিয়োমানুযায়ী উপজেলা প্রকৌশলী প্রতিটি স্কুলে গিয়ে কাজের প্লান তৈরী করে দিবে এবং সে মতে স্কুল কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিলে বিদ্যালয়ের সকল কাজ সমাপ্ত করবে। শেষ হলে পুনরায় প্রকৌশলী নিজ চোখে দেখে কাজটি সম্পুর্ন হয়েছে বলে ছাড় পত্র নেয়া এবং সেই ছাড় পত্র পাওয়ার পর শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুলের চেক প্রদান করবে। কিন্ত সে নিয়ম কোনটাই পালন করেনী শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও প্রধান শিক্ষকরা। কাজ না করেই স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতিদের না জানিয়ে এ তিন সিন্ডিকেট মিলে ভুয়া কাগজ পত্র তৈরী করে সরকারী টাকা আত্মসাত করেছে বলে অভিযোগ উঠে তাদের বিরুদ্ধে। শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন্ত পোদ্ধার ও পুস্পজিৎ মন্ডল সহ কয়েকজন মিলে গেল বছরগুলোর তুলনায় এ বছর প্রায় ৯০ শতাংশ টাকাই দুর্নীতির করে পকেট ভারী করেছে।
তবে শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন্ত পোদ্ধার ও উপজেলা প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান এ দুজনে একে অপরকে দোষারুপ করছেন। শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, প্রকৌশলীর নির্দেশনায় সহকারী প্রকৌশলী লাবিব হোসাইন’র হাত থেকে ছাড় পত্র পেয়েই সকল স্কুলের প্রধান শিক্ষককে টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে। কাজ সম্পুর্ন হওয়া আর না হওয়ার সরকারী নিয়োমানুযায়ী এর দায়ভার উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের। আর প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান ও লাবিব হোসাইন বলছে, স্কুল মেরামতের প্লান তৈরী করে দেয়া হয়েছে কিন্ত ছাড় পত্র দেয়া হয়নী। আমাদের স্বাক্ষর জাল করেই এমন দুর্নীতি করেছে মোংলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা।
সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া এমন অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে সর্ব মহলে আলোড়ণ সৃষ্টি হয়। তাই সত্য ঘটনা উদঘটনের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বিভাগীয় পর্যায় উর্ধতন কর্মকর্তরা সরে জমিনে তদন্তে নামেন। বেশ সময় নিয়ে স্কুল কমিটি নেতৃবৃন্দ, অভিভাবক, স্কুলের ছাত্র/ছাত্রী, সহকারী শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন এ তদন্ত কমিটির প্রতিনিধি দল।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোংলা উপজেলায় যোগদানের পর তার মিলে পুস্পজিৎ মন্ডল। এর পর থেকে বিভিন্ন অনিয়োম ও দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পরেন তারা। আঞ্চলিকতার দোহাই দিয়ে বহু অনিয়োমের মাধ্যমে কোমল মতি মিশুদের শিক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ের টাকা আত্মসাত করেছে বলে বেশ কিছু তথ্য বেড়িয়ে আসছে এবারের তদন্তে। আর এ শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রত্যাক্ষ ও পরক্ষভাবে সহায়তা করতে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পুস্পজিত মন্ডল বলে অভিযোগ করেণ সহকারী শিক্ষকরা। সহকারী শিক্ষক পুস্পজিৎ মন্ডল ও গুরুদাশ ঠাকুরের বিরুদ্ধে ইতি পুর্বে বহু লিখিত অভিযোগও রয়েছে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যলয়। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশও অমান্য করার প্রমান রয়েছে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে।
তদন্ত কমিটি প্রধান, মাগুরা জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ বাবুল আক্তার বলেন, মোংলার ৭১টি স্কুলের গত তিন অর্থ বছরের সরকারের বরাদ্ধের টাকা কোন কোন ক্ষাতে খরচ করা হয়েছে তার সকল কাগজ পত্র যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। শিক্ষকগণ কাজের যে কাগজ পত্র জমা দিয়েছে এবং এর সাথে সংশ্লিষ্টদের জবানবন্ধী সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সকল প্রধান শিক্ষকদের মৌখিক কথা লিখিত আকারেও নেয়া হয়েছে। তবে সরকারের দপ্তরে দেয়া অভিযোগুলোর তদন্তে অধিকাংশরই সত্যতা মিরেছে বলে জানান এ কর্মকর্তার।
মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশ বলেন, এখানে নতুন যোগদান করেছি, কিন্ত এসেই প্রাথমিক স্কুলের শিশুদের শিক্ষার বিকাশ উন্নয়নে সরকারের দেয়া অর্থ আতœসাতের খবর পেলাম। তদন্ত চলছে, প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিবেদন জমা দয়ো হবে। তবে যারা তদন্ত করছে, সৎ ও নিষ্ঠার সাথে প্রতিবেদন দেয়ার দাবী করবো। আর সত্যতা পেলে শিশুদের টাকা আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দেন এ কর্মকর্তা।
মোংলা উপজেলার ৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৩ হাজাহর ৫৪২ জন শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে।