প্রকাশ: শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:০৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
'বাংলাদেশ’ যে দেশটি একসময় পরিচিত ছিল তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে, সময়ের সাথে সাথে সেই বাংলাদেশ আজকে হাজারও বিস্ময়ের উৎস। স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে আমাদের অর্থনীতি ছিল শুধুমাত্র কৃষি নির্ভর, কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের পর রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানার মাধ্যমে অর্থনীতির চিত্র বদলে যেতে থাকে। "মেড ইন বাংলাদেশ" ট্যাগটি বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছে, আমাদের ছোট্ট দেশটিকে বিশ্বজুড়ে একটি মর্যাদাপূর্ণ ব্র্যান্ডে পরিণত করেছে। বর্তমানে দেশীয় কর্মসংস্থানের প্রায় ৬৫% ও বৈদেশিক আয়ের প্রায় ৮১% অর্জিত হয় পোশাক শিল্পের মাধ্যমে। তৈরি পোশাক শিল্পের কারণে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষাধিক মানুষের, যার মাঝে ৮০% রয়েছেন নারীরা। সুতরাং দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখতে পোশাক শিল্পের কোনো বিকল্প নেই।
কিন্তু বৈশ্বিক সংকটে এখন অনেক রপ্তানিমুখী কারখানায় কমছে ক্রয়াদেশ। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে খরচ বাড়ছে কারখানায়। এসব কারণে তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রধান ক্রেতা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো, তাই এইসকল দেশে বিক্রি কমলে তার প্রভাবও এ দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের ওপর পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং, প্রস্তুতি এখন থেকে নিতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে কমপ্লায়েন্স প্রতিপালনের সাথে বেশ কিছু নীতিগত সহায়তা ও নগদ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
ফলে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে তৈরি পোশাক হতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪২.৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বিগত অর্থবছরের চেয়ে ৩৫.৪৭% বেশি এবং মোট পণ্য রপ্তানির ৮১.৮১%। কিন্তু এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে সবার আগে দরকার উপযুক্ত পরিবেশ এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার। একটি উৎপাদনমুখী শিল্প হিসেবে তৈরি পোশাককে টিকিয়ে রাখতে হলে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। প্রথমত, আমাদের দেশের পোশাক শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের একটি অংশ যেন দেশেই উৎপাদন করা হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
যেমন বলা যায়, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে নাইকি, অ্যাডিডাস ও পুমার পণ্য তৈরির ক্রয়াদেশ পেয়ে আসছে বিভিন্ন পোশাক কারখানায়। তবে সাম্প্রতিক কাতারে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ফুটবলের জার্সি তৈরির কাজ পায়নি তারা। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বিশ্বকাপে খেলা দলগুলোর খেলোয়াড়দের জার্সি তৈরি হয়েছে প্লাস্টিকের বোতল পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণে উৎপাদিত কৃত্রিম তন্তুর কাপড়ে। চীন ও ভিয়েতনামের কারখানায় এগুলো তৈরি করলেও বাংলাদেশ এখনো এই সেক্টরে নবীন বলা যায়। সুতরাং বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের এখন চ্যালেঞ্জ নিতে হবে এবং কৃত্রিম তন্তুর কাপড় ও পোশাক উৎপাদনে আরও বেশি বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। আবার বিদেশি ক্রেতাদের আকর্ষণের জন্য এখন আমাদের প্রতিটি পোশাক কারখানায় পরিবেশবান্ধব বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ স্থাপনা (ইটিপি) তৈরি করতে হবে এবং আমাদের পোশাক শ্রমিকদের দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে।
সুখবর হল, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডাব্লিউটিও) প্রকাশিত বিশ্ব বাণিজ্য পরিসংখ্যান পর্যালোচনা ২০২২-এ দেখা যায়, বাংলাদেশ ২০২১ সালে বৈশ্বিক তৈরি পোশাক রপ্তানি বাজারে আবারও দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। ২০২০ সালে ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে তৃতীয় অবস্থানে ঠেলে দিয়ে দ্বিতীয় হয়েছিল। পরিশেষে, আমাদের দেশের নীতিনির্ধারক ও শিল্প উদ্যোক্তাদের মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে তৈরি পোশাক খাতে অগ্রগতির এই ধারা চলমান থাকবে, এই আশা আমাদের জনগণ করতেই পারে।