মুক্তিযুদ্ধের সমর্থন করায় পরিবারসহ হত্যা করা হয় পুলিশ ইন্সপেক্টর শামসুদ্দিন সরদারকে
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:১৩ পিএম আপডেট: ০৮.১২.২০২২ ৯:১৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
জরাজীর্ণ এ বাড়িটি সাক্ষী হয়ে রয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধের। এ বাড়িটি তৎকালীন নওগাঁ জেলার সান্তাহার পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর শামসুদ্দিন সরদারের। ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন যুদ্ধের সমর্থনে পাকিস্তানি সরকারের চাকরি ছেড়ে দিয়ে শামসুদ্দিন সরদার সপরিবারে এসেছিলেন এই বাড়িটিতে।
১৯৭১ সালে পাকসেনারা সান্তাহার এসে পৌছালে তাদের দোসররা ইন্সপেক্টর শামসুদ্দিন সরদারের তথ্য দেয়। ২২ এপ্রিল দুপুরে ধানকুড়ি গ্রামে আসে পাকহানাদার বাহিনী। সরাসরি শামসুদ্দিনের উঠানে এসে বাড়ির সব সদস্যদের বাইরে আসতে বলে তারা। কথা মতো বাইরে আসে শামসুদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা। পাকসেনাদের মতিগতি বুঝতে পেরে ইন্সপেক্টর শামসুদ্দিন সরদার কারো কোনো ক্ষতি না করার আহ্বান জানান। কিন্তু রক্ত পিপাসুরা সেদিন কোন কথাই শুনেনি। একের পর এক বুলেট ছুড়ে হত্যা করে পরিবারের সব পুরুষদের।
সৌভাগ্যক্রমে সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যান তার ছেলে এডভোকেট সরদার সালাউদ্দিন মিন্টু। সেদিনকার ঘটনা স্মৃতিচারন করতে গিয়ে তিনি জানান, আমার বাবা অনেক লম্বা চওড়া মানুষ ছিলেন। সেদিন পাকহানাদার বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন যে, আমাকে মারেন কিন্তু আমার ভাই-ভাতিজাদেরকে মেরেন না। কিন্তু তারা আমার বাবার আকুতি না শুনে সেদিন লাইনে দাঁড়ানো সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলে। আমিও ছিলাম সেদিন ওই লাইনে। আমার হাতে গুলি লেগে সেখানে পরে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম।
সেদিন সেই নিঃসংশ হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী হয়ে রয়েছে শহীদ শামসুদ্দিনের পরিবারের নারী ও প্রতিবেশীরা।
সেদিন পাকসেনারা নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর ধানকুড়িগ্রাম ছেড়ে গেলেও দুদিন পড়েছিল শামসুদ্দিনসহ ৮ জনের লাশ। পরে তাদের অর্ধগুলিত মরদেহ নিয়ে দেওয়া হয় গণকবর। এরপর থেকে নওগাঁ জেলার প্রথম শহীদ পুলিশ সদস্য হিসেবে শহীদ ইন্সপেক্টর শামসুদ্দিন সরদারের নাম আসে।