ঠান্ডা ও গরম প্রতিরোধে বেশ আরামদায়ক পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লক নির্মাণে নোকাল নুড়ী পাথর, পাথরের ধুলো, নদীর তলদেশ থেকে নেয়া মোটা বালু, সিমেন্ট ও কখনো ফ্লাই অ্যাশ বা অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করে লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগরে তৈরি হচ্ছে ইটের বিকল্প পরিবেশ বান্ধব কংক্রিট হলো ব্লক। যা দিয়ে সরকারি, বে-সরকারি, অফিস-আদালত সহ ব্যাক্তি মালিকানায় বহুতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, সারা দেশেই প্রচুর পাকা দালান নির্মিত হচ্ছে। সার্বিক সুবিধা বিবেচনায় মানুষ এখন কাঠ, টিনের ঘরের বদলে ইট, সিমেন্টের ঘর বানাচ্ছে। ফলে বেড়ে গেছে ইটের চাহিদা। সাধারণত জমির উপরিভাগের মাটি পুড়িয়ে ইট প্রস্তুত করার কারণে পরিবেশের নানামুখী ক্ষতি হচ্ছে। আবাদী জমির পরিমাণ অপ্রতুল হচ্ছে। ইটভাটায় পোড়ানো বিষাক্ত ধোঁয়া দূষিত করছে বাতাস এবং হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। তাই বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং রিসার্চ ইনিস্টিটিউট (এইচবিআরআই) দীর্ঘ গবেষণায় ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব ব্যয় সাশ্রয়ী কংক্রিট ব্লক তৈরি পদ্ধতি নিয়ে এসেছে। যা সাধারণ ইটের চেয়ে গুণগত মানে ভালো এবং দাম কম পড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ২০২০ সালে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর হইতে ফড়িংদীঘি রোডস্থ কাজীর চওড়া এলাকায় ইকো কংক্রিট প্রোডাকাটস্ নাম প্রতিষ্টানটি ইটের বিকল্প পরিবেশ বান্ধব ১৩ ধরণের কংক্রিট হলো ব্লক তৈরি কার্যক্রম শুরু করেন। সেখানে বিভিন্ন নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নানান রকমের কংক্রিট হলো ব্লক তৈরি করে মাঠ জুড়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এসব কংক্রিট ব্লক ব্যবহারে বিল্ডিং নির্মাণের ব্যয় কম সাধারণ ইটের চেয়ে ৪০ প্রায় ভাগ পর্যন্ত। এগুলো পরিবেশবান্ধব, মূল্যসাশ্রয়ী, ওজনে হালকা, ভূমিকম্প, আগুন ও লবণাক্ততা প্রতিরোধী, অতি উষ্ণ বা অতিশীতল আবহাওয়ার বিপরীতে নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ দেয়। দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যয়সাশ্রয়ী হিসেবে বর্তমান লালমনিরহাটের পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট ও ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন কাজ চলছে।
এমনকি ব্যাক্তি মালিকানায় শহরের মিশন মোড় এলাকার কৃষি ব্যাংক ম্যানেজার হাসান আলীর বহুতলা ভবন সহ বেশ ক’টি ভবনে হলো ব্লক ব্যবহার করা হয়েছে। সদর উপজেলার ভাটিবাড়ী, নয়ারহাট, কুলাহাট, বড়বাড়ী, বুড়িরবাজার, নয়ারহাট, মোস্তফী, তিস্তা এলাকায় অনেক বসতবাড়ি নির্মাণ কাজে এ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। জেলা সদরের বাহিরে আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলার বেশকিছু এলাকায় বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে।
ইকো কংক্রিট প্রোডাকাটস্ এর ম্যানেজিং পার্টনার মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি ভিশন বাস্তবায়নে সরকারি নির্মাণকাজে পরিবেশবান্ধব ব্লক ব্যবহার নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২০১৯-২০ সালে ১০%, ২১ সালে ২০%, ২২ সালে ৩০%, ২৩ সালে ৫০%, ২৪ সালে ৮০%, ২৫ সালে ১০০% বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা ঠিকমত বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বর্তমান আমাদের কোম্পানিতে প্রতি মাসে ব্লক উৎপাদনের সক্ষমতা অনেক আছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা উৎপাদন বাড়াচ্ছি। আমাদের পরিবেশ বান্ধব ব্লক দিয়ে এলাকায় সরকারী ও বে-সরকারী অফিস-আদালত, দোকান-পাট সহ বসত বাড়িও তৈরি করা হয়েছে।
লালমনিরহাট এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আঃ মান্নাফ বলেন, '২০২৫ সালের মধ্যে সব সরকারি নির্মাণ কাজে পরিবেশবান্ধব ব্লক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। আমাদের বেশ কিছু সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে হয়। তাই সরকারি নির্দেশনা ধাপে ধাপে বাস্তবায়নে পরিবেশ বান্ধব কংক্রিট হলো ব্লক ব্যবহার বাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক বলেন, 'চাষযোগ্য জমির উপরিভাগের মাটি ইটভাটায় ব্যবহারের কারণে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। পরিবেশ বান্ধব ইট ও হলো ব্লক ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি ও কৃষিতে জমি রক্ষা পাবে। সেই সাথে কৃষিতে টেকসই উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে।