তালা উপজেলার মাঠজুড়ে সবুজের বুকে হলুদ রংয়ের বাগান হয়ে উঠেছে।সেই সাথে কৃষকের চোখে মুখে আনন্দের রেখার সাথে ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা মাঠ।
তালা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,এবছর তালা উপজেলায় সরিষা চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৭ শত ৫০ হেক্টর জমিতে।তবে এবারও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, ২০২১ সালে তালা উপজেলার সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ শত ৬০ হেক্টর যা অতিক্রম করে ৫ শত ৬০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। ২০২০ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪ শত ৬০ হেক্টর ৬২১ মেট্রিক টন সরিষা,২০১৯ সালে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৪শত ১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর ভাল ফলনের জন্য টরি-৭, বারি-১৪ ও ১৫ জাতের সরিষা চাষ করেছেন শতকরা ৯০ ভাগ কৃষক। বাকি ১০ ভাগ চাষ হয়েছে দেশী সরিষাসহ অন্যান্য জাতের।
তালা উপজেলার বিস্তৃত এলাকা জুড়ে সরিষার বাম্পার ফলনের হাতছানি দেখে মনে হয় পৃথিবী তার রঙ হারিয়েছে,শুধু কালের বিবর্তনে হলুদ রঙটা এখনও টিকে আছে। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে সরিষার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা কৃষকদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মাঠে ক্ষেতের পর ক্ষেতে সরিষার আবাদ দেখা গেছে। মাঠের পর মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য। সরিষার ফুলে আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছিরা মধু আহরণ সহ কপোত-কপোতি ও রমণীরা সরিষা ফুলের ক্ষেতে বসে ছবিও তুলছে।তবে অনেক জমিতেই ফুল শেষ হয়ে বীজ দেখা গেছে। বীজগুলো বেশ তরতাজা, যা ভালো ফলনের সম্ভাবনার জানান দিচ্ছে। এক বিঘা জমিতে এক কেজি সরিষার বীজ বপন করতে হয় সার বীজ কীটনাশক সহ সকল খরচ মিলে প্রায় তিন হাজার টাকা ব্যায় হয়ে থাকে। বিঘা প্রতি জমিতে চার থেকে পাঁচ মণ সরিষা ফলন হয়। সরিষা চাষ করতে প্রধানত ৪টি জিনিস প্রয়োজন হয়। এরমধ্যে রয়েছে ভাল বীজ, সার, সেচ ও যতœ।
সরিষা চাষী রফিকুল ও লিটন হুসাইন জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন এখন পর্যন্ত জমিতে বৃষ্টির কারনে সরিষা ফুল ঝরে সামান্য সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে বৃষ্টি আর না হলে ভালো ফলন পেয়ে লাভবান হতে পারবেন।
তালা উপজেলার ইসলামকাটির সোবহান আলী জানান,সরিষা চাষে খরচ ও পরিশ্রম দুটোই কম।মাঝে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে সামান্য কিছু ক্ষতি হলেও এখন সরিষা ক্ষেত ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। আর অল্প কিছুদিন পরেই ফুল থেকে সরিষা দানা হবে। সরিষা আবাদ করতে তেমন বেগ পেতে হয় না,তাই অন্য ফসল চাষীরা ঝুঁকেছেন সরিষা চাষের দিকে। তবে আবহাওয়াসহ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার বাম্পার ফলন হবে।
সরিষা চাষী বুদু মন্ডল জানান, তিনি ২২ বিঘা শতক জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। বিঘা প্রতি জমিতে ১৪ কেজি ইউরিয়া সার, ৮.৫ কেজি পটাশ, টিএসপি ১৮ কেজি, জিপসাম ১২.৫ কেজি, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ২ কেজি, জিংক সালফেট ৩.৭৫ কেজি, বরিক এসিড ৭.৭৩ কেজি ও প্রয়োজন মত গোবর সার মিশিয়ে জমিতে ছড়িয়ে দিয়ে সরিষার বীজ বপন করেন। পরে আরেকবার প্রয়োজন মত সার ওষুধ ও সেচ দিয়েছেন। এতে তিনি ভাল ফলনের আশা করছেন।
ু
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাজিরা খাতুন বলেন,উপজেলার কৃষকদের মাঝে সরকারী ভাবে সরিষা বীজ প্রদান করা সহ উপজেলা বিভিন্ন গ্রামে বা ক্ষেত পরিদর্শন সহ ভাল ফলন পেতে চাষাবাদের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। তালা উপজেলায় এ বছর ৭ শ ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছি।যদি আকস্কিক প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিসাধন না হয় ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে।