প্রকাশ: রোববার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:২৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
উন্মুক্ত পরিবেশে বিভিন্ন গাছের ডালপালায়, বাসাবাড়ি ও দালান-কোঠার ছাঁদে এমনকি রাস্তায় রাস্তায় বানরের দল ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য সচরাচর এখন আর চোখে পড়ে না। এক সময় প্রায় স্থানেই বানরের দেখা মিলত। নতুন প্রজন্মের কাছে এখন শুধু তা অতীতের গল্প। তবে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী ইউনিয়নের খাহ্রায় এখনও লোকালয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ক্ষুধার্ত বানরের দল। শতশত বছর ধরে এখানেই বসবাস করছে বন্যপ্রাণী এসব বানর।
নানা প্রতিকূলতার মাঝেও এখানে প্রায় ৪ শতাধিক বানর টিকে রয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমান খাবার না পেয়ে এসব বানর এখন ঢুকে পড়ছে স্থানীয় বসতবাড়ি ঘর ও রাস্তার পাশের দোকানে। সুযোগ পেলেই বানরের দল চুরি করে নিচ্ছে মানুষের খাবার। মাঝে মধ্যে ক্ষুধার্ত বানরদের আক্রমণের ঘটনাও ঘটছে এখানে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আড়িয়াল বিল এলাকার শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী ইউনিয়নের শেষ সীমান্তে খাহ্রা নামক গ্রামটির অবস্থান। খাহ্রা গ্রামের পরেই ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার সীমানায় ঐতিহ্যবাহী চূড়াইন বাজার। দুই জেলার সীমানা মধ্যবর্তী খালের ওপর নির্মিত সেতুটির পূর্ব মাথায় শ্রীনগর উপজেলার খাহ্রা ও পশ্চিম মাথায় নবাবগঞ্জ উপজেলার চূড়াইন বাজার। সেতু এলাকাটি যেন দুই জেলার মানুষের মিলনকেন্দ্র। আর এখানেই বানরের আদি বসবাসের নিরাপদ স্থান। লক্ষ্য করা গেছে, খাহ্রার বিভিন্ন বাসাবাড়ি, দোকানপাট, গাছের ডালে ও রাস্তায় বাননের উপস্থিতি। খাবারের সন্ধানে ক্ষুধার্ত বানরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। মা বানরগুলো শাবক বানরকে কুলে-পিঠে করে হাঁটাহাঁটি করছে। খাবারের সন্ধান পেলেই হাঁকডাক চিৎকার দিতেই জড়ো হচ্ছে বানররা। আবার কোন কোন পথচারী হাতের খাবার দিয়ে যাচ্ছেন বানদের। আবার এসব বানরের সুযোগ পেলে শিশু কিংবা বৃদ্ধদের হাতের খাবার ছিনিয়ে নিচ্ছে।
বাড়ৈখালী ৬নং ওয়ার্ডের খাহ্রা গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ সুধির সাহা (৭০) বলেন, এখানে বানরের অনেক উৎপাত সহ্য করে দোকান চালাচ্ছি। দোকানের চারপাশে নেটজাল দিয়ে আটকিয়ে বসতে হয়। পথচারী রুবেল, বিশ্বজিত, কমল পালসহ এলাকাবাসী বলেন, দিনে বানররা বাড়ৈখালীর খাহ্রা, ভাঙ্গাপোল, মদনখালী ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা নবাবগঞ্জের চূড়াইন বাজার এলাকায় ঘুরাফেরা করে। রাতে খাহ্রা গ্রামের বিভিন্ন গাছে ও বাসা বাড়ির টিনের চালায় ও পাকা দালানে অবস্থান করে। অনাহারে এসব বানরের সংখ্যা দিন দিন কমতে শুরু করেছে। তারা জানান, বানর সুরক্ষার জন্য সরকারিভাবে কোন প্রদক্ষেপ নিতে চোখে পড়েনি। বন্যপ্রাণী বানর টিকিয়ে রাখতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এখনি সঠিক প্রদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তা না হলে সময়ের ব্যবধানে এসব বানর বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
বাড়ৈখালী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইকবাল হোসেন মাস্টার জানান, বানররা খাবার না পেয়ে প্রায় সময়ই খাবার ছিনিয়ে নিচ্ছে। প্রায় সময়ই বাসা বাড়িতে ঢুকে শিশুদের ওপর আক্রমণ করছে। বিভিন্ন কারণেই ক্ষুধার্ত বানরদের উৎপাতে এলাকার সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে শ্রীনগর উপজেলা বন বিভাগ কর্মকর্তা মো. সেলিম হোসেন জানান, পরিবেশের ভারসাম্যর জন্য বন্যপ্রণী রক্ষা জরুরী। আমাদের সেরকম জনবল ও অর্থের যোগান নেই। খ্রাহায় প্রায় ৪ শতাধিক বানর রয়েছে। আগের মত তারা খাবার পাচ্ছেনা। অনাহারে বানরগুলো দিনদিন হিংস্র হয়ে উঠেছে। খাবারের জন্য মানুষের ওপর আক্রমণ করছে। আর আগে এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপর মহলে আলোচনা করা হয়েছে।