প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘরে বদলে গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার ছিন্নমূল রোসনা, শরিফা, অলকা, মাতুয়ারা, সখিনা, হাবিবাদের জীবনমান। তারা একসময় রেলবস্তিসহ বিভিন্ন স্থানে অসহায়ত্বের বসবাস করতেন। কিন্তু তারা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পেয়ে স্থায়ী ঠিকানা পাওয়ায় নিজ উদ্যোগে নানান কর্ম করে অতীতের দুঃখ কষ্টকে ঝেরে মুছে নতুন উদ্যোমে চলতে শুরু করেছেন।
একটা সময় তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের পেটের ভাত জোগাড় করতে পারলেও ঘুমানোর কষ্ট লাঘব করতে পারেনি। আজ তাদের সেই লালিত স্বপ্ন করে দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’র কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা আজ পেটপুরে খেয়ে পাকা বাড়ীতে শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন। পাশাপাশি হাতের কাজসহ বিভিন্ন সব্জি ফলিয়ে সংসারে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন স্বচ্ছলতা।
সরেজমিনে গোমস্তাপুর উপজেলার ভাগলপুর এলাকার দক্ষিণাপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, গত আড়াই বছর আগে এ জায়গাটি দখলমুক্ত করে ভূমিহীনদের জন্য পুকুরের দু’প্রান্তে ১ম পর্যায়ে ১৫ টি ও ২য় পর্যায়ে ১১ টি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়। তারা এখন বসবাস করছে আধুনিক সুবিধাসহ রঙিন টিনের পাকা বাড়িতে। সেই বাড়ির সামনে, পাশে ও বাড়ির আঙ্গিনার ফাঁকা জায়গায় করছে বিভিন্ন শাক-সবজির আবাদ। কেউবা করছে হাঁস মুরগি-গরু-ছাগল পালন আর কেউবা করছেন নকশী কাঁথার কাজ। সময়ের সাথে বদলে গেছে তাদের জীবনমান। তারা দুঃশ্চিন্তা ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে কাজ করে এগিয়ে নিচ্ছে সংসার। সবকিছু মিলিয়ে সরকারের দেওয়া সুবিধা পেয়ে খুশি একসময়ে অন্যের জায়গায় থাকা এসব আশ্রয়হীন মানুষগুলো।
উপহারের ঘর পাওয়া রোসনা বেগম, সালেহা বেগম, সাবিনা খাতুন, অলকা রানী, মাতুয়ারা খাতুন, সখিনা খাতুন, উম্মে হাবিবা সুলতানা, একরামুল হকসহ অনেকেই জানান, বছর দুয়েক আগেও ভাবেননি নিজেদের সুন্দর একটা ঠিকানা হবে। একসময় পুকুর থেকে অথবা অন্য জায়গা থেকে খাবার পানি আনতে হতো। এখন সেখানে সেমি ডিপের মাধ্যমে পানির ট্যাংকি বসিয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছে সরকার। তবে ঘরগুলো বেশি দিনের হওয়ায় ২/১টি ঘরের টিনের স্ক্রু ঢিলা থাকায় সেখান থেকে বৃষ্টির সময় দুয়েক ফোটা পানি পড়তো। তবে তারা নিজেরাই মেরামত করবে। তারা আরো বলেন, গুটি কয়েক পরিবারের সদস্যদের ঘরের সংকুলান না থাকায় তারা টিন দিয়ে অতিরিক্ত ঘর নির্মাণ করেছেন।
প্রতিবন্ধী তপন কর্মকারের স্ত্রী অলকা রানী বলেন, আগে তারা পরিবার নিয়ে আলিনগরের মন্দিরে বসবাস করতেন। কিন্তু ২ বছর আগে দুই শতক জায়গাসহ ঘর উপহার পেয়েছেন। তার স্বামী ভ্যান আর তিনি বিভিন্ন মৌসুমে ধান কুড়িয়ে সংসার চালান। ৩০ বছর বয়সী উম্মে হাবিবা সুলতানাসহ বসবাসরত অন্যান্য গৃহবধূ জানান, তারা বিভিন্ন সব্জি চাষাবাদসহ হাঁস-মুরগি, গরু পালন করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। এর মধ্যে কয়েকজন পরিবার তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, যাতায়াতের রাস্তাটি কাঁচা হওয়ায় বৃষ্টি হলেই কর্দমাক্ত হয়ে পড়ায় চলাচল করতে কষ্ট হয়। এটি পাকা করলে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করা যাবে। তবে তাদের স্বপ্নের নতুন ঠিকানা করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকার কথা জানান তারা। তবে ওই এলাকায় বসবাসকারিরা বলেছেন, আশ্রয়ন প্রকল্পে একটি স্কুল ও একটি মসজিদ করা হলে তাদের সকল আশা পূরণ হতো।
এদিকে গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা খাতুন জানান, আশ্রয়নে থাকা মানুষগুলোর দিকে স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি রয়েছে। তাদের কোন সমস্যা থাকলে তারা যোগাযোগ করলে সমাধান করে দেয়া হবে।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন জানান, আশ্রয়ণে থাকা মানুষগুলো যেন শান্তিতে থাকেন এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল লক্ষ্য। যেন ভালো থাকেন এটাই প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া এবং পাওয়া। কিছু সমস্যা থাকলে তা সমাধান করে দেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে জেলায় ৮৫৮৯ টি পরিবার ঘর পেয়েছে। আরও বাকি২৩০ টি ঘর নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ জেলাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গৃহহীন হিসাবে ঘোষণা করবেন।