নাটোরের গুরুদাসপুরে একটি গোরস্থানের চার কোনায় বাহারি টাইলস ও পাথরের ওপরে খোদাই করে বসানো হয়েছে নামফলক। গোরস্থানের মাঝ খানে তৈরী করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন কোরআন শরীফের প্রতিক। সারিবদ্ধ ভাবে দেয়ালের সঙ্গে লাগানো হয়েছে টাইলস ও পাথরের টুকরো, খোদাই করে লেখা রয়েছে নাম-ঠিকানা ও পরিচয়।
চারদিকে সাজানো রয়েছে আলোক বর্তিকা। দিন কি রাত তা দেখে বোঝার উপায় নেই। প্রতিটি লাইনের মাঝে লাগানো হয়েছে সারিবদ্ধ ফুলের বাগান। হরেক রকমের ফুল দিয়ে সাজানো কবরস্থানটি। পুরুষ,মহিলা আর শিশুদের জন্য নির্ধারিত স্থানগুলোও পৃথক করা হয়েছে। পাশেই করা হয়েছে হাফেজিয়া মাদ্রাসা। ওই মাদ্রসার শিক্ষার্থীরা সকাল বিকেল ফুলের ঘ্রাণ নিতে গিয়ে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে মৃত্যু ব্যাক্তি বিদেহী আত্বার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করেন।
গোরস্থানে মুসুল্লিদের অজু করা আর দাফনের পর হাত ধোয়ায় জায়গা রয়েছে। এছাড়াও দাড়িয়ে জানাজা করার জন্য পাকা করা হয়েছে দাড়ানোর লাইন এবং জানাজায় মৃত্যু ব্যাক্তির মরদেহ রাখার জায়গাটিও টাইলস দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। ঘিরে রাখা হয়েছে স্টিলের তৈরী উপকরন দিয়ে। দুই পাশে রাখা হয়েছে দুটি খেজুর গাছ। এসব যেন সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে পরম মমতায়। প্রথমে দেখে মনে হয়েছে এটি সাজিয়ে রাখা কোনো বেহেস্তি বাগান।
দর্শনার্থীদের কাছে মনে হতে পারে এটা একটি স্বর্গের বাগানের মতো। এটা আসলে মুসলমানদের ধর্মীয় বিভিন্ন মানুষের শেষ ঠিকানা এই কবরস্থান। কবরস্থানটি দেখতে এটাই দৃষ্টিনন্দন যে দূর থেকে দেখলে মনে হবে এ যেন স্বর্গের বাগান। নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের উত্তর নারী বাড়ি কবরস্থানের চিত্র এটি। এই কবরস্থানটি নির্মান করা হয়েছিলো ১৮৮২ সালে। তবে নতুন করে গত তিন বছর যাবত ওই সংস্কারের কাজগুলো করা হয়েছে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ভাষায়, “মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেন গোরে থেকেও মোয়াজিয়ানের আজান শুনতে পাই।” তারই ধারা বাহিকতায় ওই কবরস্থানের পাশেই নির্মাান করা হয়েছে মসজিদ ও মাদ্রাসা।
কবরস্থানের সভাপতি আলহাজ¦ বয়েজ উদ্দিন প্রমাণিক, সাবেক পৌর কাউন্সেলর আব্দুল আলিমসহ বেশ কয়েকজন মুসল্লিরা জানান, মৃত্যুর পরে সব মুসলিমের ঠিকানা হয় কবর। কিন্তু এই কবরস্থানের কথা শুনে ভয়ে ঘুমাতে পারেন না অনেকে। কবরস্থানের কথা শুনলে আমাদের মনে একটা ভিত কাজ করে। তবে গুরুদাসপুরের এই কবরস্থান দেখলে এই ভীতি দূর হবে। কারন কবরস্থানটি একবারেই ভিন্ন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ কবরস্থানগুলোতে চোখে মেলে হাড্ডিগুড্ডি, কবরে গর্ত, অপরিষ্কার জরাজীর্ণ। অথচ এই কবরস্থানটি রাতের বেলা যদি কেউ দেখতে আসে রাত নাকি দিন দেখে বোঝায় উপায় নেই। এলাকাবাসীর সহযোগিতা আর দানবীরদের কারনে এটি করা সম্ভব হয়েছে বলে তারা জানান।
ওই গোরস্থানের সাধারণ সম্পাদক গুরুদাসপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি দিল মোহাম্মদ জানান, মৃত্যুর কথা মনে পড়লেই আমাদের প্রথমেই কবরের কথা মনে পড়ে যায়। অন্ধকার কবরের কথা মনে পড়তেই গা শিউড়ে ওঠে। এমনি একটি কবরস্থানের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়ে কাজ করতে পারায় এলাকা বাসিকে ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে যত দিন এই দায়িত্বে রয়েছি চেষ্টা করে যাব মাদ্রসাসহ ওই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করার। নিঃসন্দেহে উপজেলার সব চেয়ে মনমুগ্ধকর কবরস্থান এটি। দুরদুরান্ত থেকে অনেক লোক আসেন কবরস্থানটির সৌন্দয্য দেখতে। আমরা চেষ্টা করেছি শেষ ঠিকানাটি ভালো করে রাখার যেন এটি দেখে দেশের সকল কবরস্থান পরিস্কার করে রাখেন সবাই।
ওই কবরস্থান সংলঘ্ন হাফেজিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা মাহাদী হাসান জানান, এই কবরস্থানটিতে নারী,পুরুষ,শিশু ও অপমৃত্যদের দাফনের জন্য পৃথক পৃথক জায়গার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া প্রতি শুক্রবার ফজরের নামাজের পর ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও এলাকাবাসীদের নিয়ে কবর জিয়ারত করে বিদেহী আত্বার মাগফেরাত কামনা হয়।