মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বিএনপির বড় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা আ.লীগের সতর্কতায় বিফল: তথ্যমন্ত্রী   সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিতে কাজ করছে সরকার: কাদের   নাটোরে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ জনের মৃত্যু   ‘কিছুই করি নাই শ্রেণিটা’ চোখ থাকতেও দেখে না: প্রধানমন্ত্রী   রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম: পরীমনি   সৌদি আরবের ক্লাবে যোগ দিলেন রোনালদো   বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকী বিলুপ্ত প্রায়
পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৩৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

ও বউ ধান ভানেরে ঢেকিতে পার দিয়া ঢেকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া ও বউ ধান ভানরে। গ্রাম বাংলার গৃহবধূদের কণ্ঠে আগে প্রায়ই শোনা যেত এ ধরণের সুর আর ঢেঁকির ঢিপ ঢিপ শব্দ। ঢেঁকির তালে কত গান ও কত প্রবাদ গাওয়া হতো গ্রাম্য মেয়েদের। ঐতিহ্যবাহী সেই ঢেঁকি বিলুপ্তি প্রায়। খুলনার পাইকগাছায় প্রতিটি গ্রামে আশির দশকে ঢেঁকি দিয়ে চাল তৈরি, চিড়া, আটা, গম, জব, পায়েসের চালের গুঁড়ো, খির তৈরির চাল বানানো হতো। সেই ঢেঁকি আজ অপ্রয়োজীন হয়েছে ইঞ্জিনচালিত মেশিনের কাছে। 

বর্তমান যান্ত্রিকতার যুগে এই চিরচেনা সুর যেন প্রায়ই হারিয়ে গেছে। এক সময় জেলার প্রত্যন্ত গ্রামা লে প্রায় সকল বাড়িতে ছিল ঢেঁকি। কিন্তু এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। গ্রামের দরিদ্র অসহায় নারীদের উপার্জনের প্রধান উপকরণ ছিল ঢেঁকি। গ্রামের বিত্তশালীদের বাড়িতে যখন নতুন ধান উঠতো তখন এ দরিদ্র নারীরা ঢেঁকিতে ধান ছেঁটে চাল বানিয়ে দিতো। তা থেকে তারা যা পেতো তা দিয়েই ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার চলে যেতো। ঢেঁকিতে ধান ভানতে গিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের হাসি-তামাশার কথা বলতো ও গান গাইতো। কিন্তু ৮০ দশক হতে খুলনার দক্ষিণ অ ল পাইকগাছা-কয়রার আবাদি জমিতে ধানের পরিবর্তে লোনা পানিতে চিংড়ি মাছের চাষ আসায় ঢেঁকির ব্যবহার কমে যায়। কোনো আবাদি জমিতে আর ধান চাষ হয় না। সে ক্ষেত্রে ধান মাড়াই করার কোনো সুযোগ নেই। অল্পকিছু জমিতে ধান চাষ হলেও সেটা মাড়াই হয় মেশিনে। 

গ্রামের ফাঁকা স্থানে বা কোনো রকম ছাউনি দিয়ে বাড়ির এক পাশে তৈরি করা হতো ঢেঁকি ঘর। শীত মৌসুমে ধান ভাঙার পাশাপাশি কলাই বড়ি বানাতে ঢেঁকি ব্যবহার হতো। সন্ধ্যা হতে গভীর রাত পর্যন্ত অথবা খুব ভোরে উঠে নারীরা ঢেঁকিতে পাড় দিত। সকালের ঘুম ভাঙতো তখন ঢেঁকির ক্যাচ-কুচ, ডুক-ঢাক শব্দে। ঢেঁকি দিয়ে ধান ভাঙতে সর্বনিম্ন দুই জন নারী হলেই চলতো। কেউ পাড় দেয়, কেউ এলে দেয়। এভাবেই চলে ধান ভানার কাজ। বাড়িতে অতিথি এলে ঢেঁকিতে ধান কুটার তোড়জোড় শুরু হতো। এই নিয়মে চিড়ে, ছাতু তৈরি করা হতো। তারপর গভীর রাত অবধি চলতো রকমারি পিঠা-পায়েস বানানো আর সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে খাওয়ার আমেজটা ছিল খুবই উপভোগ্য। 

ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত, পোলাও, জাউ আর ফিরনী ছিল অত্যন্ত সুস্বাদু। ঢেঁকিতে কোটা চিড়া আর চালের গুড়ির পিঠার কোন জুড়ি ছিল না। অন্যদিকে ঢেঁকিছাটা চালে প্রচুর ভিটামিন রয়েছে বলে চিকিৎসকরা রোগীকে তা খাওয়ার পরামর্শ দিতেন। পিঠা বানানোর অন্যতম উপকরণ চালের গুড়ো বানাতে দু’এক গ্রাম খুঁজলেও ঢেঁকির দেখা মেলা না। প্রত্যন্ত গ্রামা ল থেকে এখন ঢেঁকি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। দুদশক আগেও গ্রামগঞ্জের বাড়িতে দু’একটি ঢেঁকি দেখা যেত। এখন ঢেঁকির পরিবর্তে আধুনিক ধান ভাঙ্গার রাইচ মিলে চাল কোটার কাজ চলছে। আবার ডিজেলের মেশিন ছাড়াও ভ্যাম্যমাণ ভ্যান গাড়িতে শ্যালো ইঞ্জিন নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ধান মাড়াই করা হয়। ফলে গ্রামের দরিদ্র নারীরা যারা ধান ভেঙে জীবিকা নির্বাহ করতো তারা বিকল্প পথ বেছে নেওয়া ছাড়াও অনেকে ভিক্ষা করে দিন পার করছে। 

উপজেলার খড়িয়া গ্রামের সন্ধ্যা রানী (৪০), লতিকা (৪০), মনিরা বেগম (২৮), লাভলি আক্তার (৪০), তপতীসহ (৪২) অনেকে জানান, ঢেঁকিতে ভাঙা চাউলের গুড়ার পিটা-পায়েসে স্বাধ ছিল অতুলনীয়। ঢেঁকির অভাবে অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও পিঠা তৈরি করে খাওয়া হয় না। তাছাড়া এখন আর কারোর বাড়িতে ঢেঁকি পাওয়া যায় না। গ্রামা লের বাসিন্দারা সকল আবাদি জমিতে চিংড়ি চাষের পাশাপাশি ধান চাষের জন্য দাবি জানিয়েছেন। তারা যেন ধান চাষের মাধ্যমে প্রাচীন কালের ঐতিহ্য ঢেঁকি ফিরিয়ে আনতে পারে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]