চলনবিল অধ্যাষিতু সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী ‘বাউত উৎসবে’ মেতেছেন শৌখিন মাছ শিকারিরা। অনেকে ‘পলো উৎসব’ নামেও চেনেন। কুয়াশাঢাকা ভোরের হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। হেমন্তের কাকডাকা ভোরে পলো, বেসাল, বাদাই জালসহ মাছ ধরার নানা উপকরণ নিয়ে চলনবিলে গোমানি নদীতে ছুটে আসছেন দূর দূরান্তের শৌখিন মৎস্য শিকারিরা। লোকজ রীতিতে হৈ হুল্লায় বিলের জলে মনের আনন্দে চলছে মাছ শিকার।
সরজমিনে দেখা যায়, চলনবিল অধ্যাষিতু তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের ধামাইচ, নওখাদাঁ, কুন্দইল,কাটাবাড়ি খালে এ উৎসবে শত শত মাছ শিকারি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একসঙ্গে মৎস্য শিকার করছেন। তাদের হাতে ছিল পলো, চাক পলো, নেট পলো, ঠেলা জাল, বাদাই জাল, লাঠি জালসহ মাছ ধরার নানা সরঞ্জাম। বিলপাড়ে সমবেত হওয়ার পর একসঙ্গে বিলে নেমে মাছ ধরার আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেন শিশু-কিশোর, যুবক, বৃদ্ধসহ নানা বয়সী মানুষ। শৌখিন মাছ শিকারিরা একত্রিত হয়ে সারিবদ্ধভাবে বিলে পলো, ঠেলাজাল, বেরজাল দিয়ে মাছ শিকার করেন। এ সময় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ শোল, বোয়াল, গজার, রুই, কাতলা, চিতল, পুঁটি, খৈলসা, শিং, টেংরা, পাবদা মাছ ধরা পড়ে। দুপুরের দিকে মনে বেশ আনন্দ নিয়ে গন্তব্যস্থানে ফিরে যান শিকারিরা।
বাউত উৎসবের মৎস্য শিকারী মোঃ আলম সেখ জানান, তারা গ্রামের শিশু,কিশোর,যুবক ও বয়স্করা মিলে প্রতি বছর শখের বসে মাছ শিকারের জন্য আসেন। এখানে অনেক আনন্দ হয়। মাছ কেউ পাই আর নাই বাউতের একটা উৎসব হয়। এজন্যই আমরা আসি।
মোঃ আনিছ মন্ডল জানান, দল বেঁধে মাছ ধরার এ আয়োজনে মৎস্য শিকারিদের ডাকা হয় বাউত। তাদের ঘিরেই উৎসবের নামকরণ। ভোরের আলো ফুটতেই বিলা লের পূর্বনির্ধারিত এলাকায় দলবেঁধে মাছ শিকারে নামেন বাউতেরা। কার্তিক মাসের শেষে শুরু হয়ে বিলে পানি থাকলে তা চলে পৌষ মাস পর্যন্ত। শতশত মানুষ একসঙ্গে মাছ ধরার আনন্দই আলাদা। মাছ সবাই পায় না। একজন পেলে আনন্দ ভাগাভাগি করেন সবাই। কে মাছ পেল আর কে পেল না, তা নিয়ে কোনো দুঃখ নেই কারো। প্রতিবছর আনন্দের জন্য, মাছ ধরার জন্য, এ সময়টার অপেক্ষায় থাকেন তারা।