সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে এদেশের রাজনীতিতে সুপ্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সংরক্ষিত সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার ওপর চরম ক্ষিপ্ত হয়েছেন দলটির হাইকামান্ড। বিএনপির স্থায়ী কমিটির কমপক্ষে দুইজন সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভোরের পাতাকে। তবে লন্ডনে পলাতক বিএনপি নেতা, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানের সাথে বিশেষ ঘনিষ্ঠতা থাকায় রুমিন ফারহানার বিরুদ্ধে সরাসরি কেউ মুখ খুলে কিছু বলতে চান না।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, রুমিন ফারহানা খালেদা জিয়ার রাজনীতি করেন না, তিনি সরাসরি তারেক রহমানের রাজনীতি করেন। তাই দলকে বিব্রত করতেই বরাবারের মতো এবারো দেশপ্রেমিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সরাসরি হুমকি দিয়েছেন। যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী কোনো রাজনৈতিক দলের একজন দায়িত্বশীল নেত্রীর কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নারী নেত্রী যার সঙ্গে এক সময় তারেক রহমানের বিশেষ সম্পর্কের গুঞ্জনের পাশাপাশি ঢাকার সাবেক মেয়র পুত্রের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ বের হওয়ার পরও টিকে আছেন রাজনীতিতে, সেই নেত্রীর ঘনিষ্ঠ একজন বলেছেন, রুমিন ফারহানা একজন বেয়াদব প্রকৃতির নেত্রী। তিনি নিজেকে বিএনপির ভবিষ্যত কর্ণধারও দাবি করেন। তার কারণে তারেক রহমানের কাছে কেউ যোগাযোগই করতে পারেন না। সূত্রটি ফরিদপুর অঞ্চলের ওই নেত্রীর বরাত দিয়ে আরো বলেছে, রুমিন ফারহানা যদি দলীয় সত্যিকার অর্থেই বিএনপি করতো, তাহলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হুমকি দিতো। কিন্তু তিনি তো রাষ্ট্রের একটি বাহিনীকে হুমকি দিয়েছেন, তা নিয়ে সত্যিই বিব্রত ও ক্ষিপ্ত বিএনপির হাইকমান্ড।
এদিকে, আবারও মারমুখী হয়ে উঠেছে বিএনপি। সমাবেশে জনসমাগম করতে না পারায় চিন্তিত দলটির হাইকমান্ড। এতে করে দলীয় গোপন বৈঠকে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। যার মধ্যে অন্যতম সিদ্ধান্ত হচ্ছে যত্রতত্র ‘পুলিশকে পেটানো’। কিন্তু এই গোপন পদক্ষেপ মনের অজান্তে ফাঁস করে ফেলেছেন রুমিন ফারহানার একটি বক্তব্যে।
বুধবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার চরশিবপুর গ্রামে এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ইতিপূর্বে র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা হয়েছে সুতরাং পুলিশ ভাইয়েরা সাবধান হয়ে যান। আমার দেশে আপনারা গুলি চালাবেন, আপনাদেরকে এর জবাব একটা একটা করে দিতে হবে। সেই দিন আর বেশি দেরি নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখন পুলিশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চায়। পুলিশের মধ্যে এমন কিছু অতি উৎসাহী সদস্য আছে যারা মনে করে, হাসিনা সরকার থাকলেই তাদের কার্যকলাপের প্রেক্ষিতে প্রমোশনসহ অনন্য সুবিধা পাবে। তারা মনে করে আওয়ামী লীগ থাকলেই লুটপাট অব্যাহত রাখতে পারবে।
এদিকে রুমিনের এই বক্তব্যের পর বিএনপিতে চলছে তীব্র ক্ষোভ। কেননা র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির লবিংয়ের কারণে এটা রুমিনের বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে। সেই সঙ্গে বিএনপি যে পুলিশকে পেটাবে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে আবারও নতুন করে কোনো বিধিনিষেধ দেওয়াবে তার পরিকল্পনা সুস্পষ্ট হয়েছে। এতে করে ক্ষিপ্ত হয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এমনিতেও জনগণের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না, তার উপর রুমিনের এই বক্তব্য আরও কোণঠাসা করে দিলো বিএনপিকে। অনেক প্রচেষ্টার পর পুলিশকে বাগে আনার সকল চেষ্টা নস্যাৎ হয়ে গেল ওনার একটি বক্তব্যে। এভাবে সরকারের তো পতন হবেই না, আর বিএনপির আগামীতে কী হাল হবে সেটা বলা যাচ্ছে না।’