শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বিএনপির বড় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা আ.লীগের সতর্কতায় বিফল: তথ্যমন্ত্রী   সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিতে কাজ করছে সরকার: কাদের   নাটোরে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ জনের মৃত্যু   ‘কিছুই করি নাই শ্রেণিটা’ চোখ থাকতেও দেখে না: প্রধানমন্ত্রী   রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম: পরীমনি   সৌদি আরবের ক্লাবে যোগ দিলেন রোনালদো   বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
মাসে ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত বিআইডব্লিউটিএ!
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের দখলে কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌ-ঘাট
আরিফুর রহমান
প্রকাশ: বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২২, ৯:৫৪ পিএম আপডেট: ১৭.১১.২০২২ ৪:৫৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও সীতাকুন্ড নৌ রুটে থাকা কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটটি ২ বছর ধরে অবৈধ দখলে রেখে পরিচালনা করে প্রতি মাসে ৩০ লাখ টাকা আয় করছে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ। যাত্রী পারাপার ঘাটটি পরিচালনা নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের মধ্যে ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর  ৬ বছরের জন্য সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত ২০২০ সালের ৩ মার্চ গেজেট আদেশের মাধ্যমে ‘মিরসরাই রাসমণি নদী বন্দর’ ও তার সীমানা নির্ধারণপূর্বক এক আদেশ জারি করেন। বাংলাদেশ সরকারের নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের টি এ শাখা এই আদেশনামা তামিলের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। উল্লেখিত প্রজ্ঞাপনটি একটা এসআরও (STATUTORY RULES AND ORDERS)। 

উক্ত প্রজ্ঞাপনে মিরসরাই রাসমণি নদী বন্দরের তফশীল হলো নিম্নরুপ: (ক) উত্তর সীমানা: ফেনী জেলার সোনাগাজী থানাধীন থাকনোয়াজ খামচি মৌজার মহুরী নদী তীর অতিক্রমকারী অক্ষাংশ উ-২২ক্ক ৪৫’ ৩০.। (খ) দক্ষিণ সীমানা: চট্টগ্রাম জেলার থানাধীন দক্ষিণ কাট্টলী মৌজায় রাসমণি ঘাট পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে সন্দ্বীপ চ্যানেল অতিক্রমকারী অক্ষাংশ উ-২২ক্ক ২১’ ০৭.৫০’। এবং (ঘ) ভূভাগের সীমানা: বন্দর সীমানার আওতায় তীরে ভরাটকাল এর সময় বন্দর সর্বোচ্চ পানি সমতল ভূভাগের দিকে ৫০ (পঞ্চাশ) গজ পর্যন্ত। ২০১৩ সালে গুপ্তছড়া কুমিরা ঘাটের ইজারা নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। জটিলতা নিরসনে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের উদ্যোগে স্থানীয় দুই সাংসদ চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) ও চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড), বিআইডব্লিউটিএ ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৪ সালের ২রা ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড ও সন্দ্বীপ উপজেলার গুপ্তছড়া-কুমিরা যাত্রী পারাপার ঘাট পরিচালনা নিয়ে বাংলাদেশ বিআইডব্লিউটিএ ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাথে ৬ বছরের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

২০২০ সালের পয়লা মার্চ ফেনী জেলার সোনাগাজী থানা সংলগ্ন চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই থেকে ডাবল মুরিং থানা পর্যন্ত পুরো এলাকাকে নৌ-বন্দর ঘোষণা করে সরকার। পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ-কে নৌ-ঘাটগুলো পরিচালনার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। তাই আইন অনুযায়ী নৌ ঘাটটি পরিচালনা করবে বিআইডব্লিউটিএ। অপরদিকে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদও তাদের পরিচালনা কার্যক্রম বন্ধ রাখেনি। উল্টো এ নৌ ঘাটের ইজারাদাতা হিসেবে মালিকানা ধরে রাখতে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে তদবির করা অব্যাহত রাখে। বিষয়টি সমাধানে দলীয় প্রভাব খাটানোর মাধ্যমে কয়েক দফা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বসার অভিযোগও রয়েছে।

এদিকে সমঝোতা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং সরকার নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সকল ঘাট রক্ষণাবেক্ষণ ও ইজারা প্রদানে ক্ষমতা দেওয়ায় সমঝোতা স্মারক নবায়ন করতে অনাগ্রহ পোষণ করে বিআইডব্লিউটিএ। এরপর ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বিআইডব্লিউটিএ-র চট্টগ্রাম কার্যালয় সমঝোতা স্মারক নবায়ন না করতে অনুরোধ করেছিল চট্টগ্রাম জেলা পরিষদকে। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি, এমনকি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদও।

এই ঘাটটি সন্দ্বীপের প্রধানতম নৌ রুট হওয়ায় নিজেদের কর্তৃত্ব ছাড়তে রাজি হয়নি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ। এই ঘাটের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব বাবদ আয় ছাড়াও বিভিন্নভাবে আয়ের সুযোগ রয়েছে। ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ইজারা মূল্য প্রাপ্তির মাধ্যমে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে অস্বাভাবিক ভাগা আদায় করে চলেছে। তাই সম্প্রতি যাত্রী ও মালামাল পারাপার ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে লুটেরা ইজারাদার ও মুৎসুদ্ধি ইজারা গ্রহিতা, যা গেজেট আদেশের সুস্পষ্ট বরখেলাপ। 

ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ রাষ্ট্রপতির গেজেট প্রজ্ঞাপনের কারণে মিরসরাই-রাসমণি নদী বন্দরের চলাচলের জন্য নৌপথে চারটি বয়া স্থাপন করেছিল, যা কিছুদিনের মধ্যে বিকল করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়াও গুপ্তছড়া ও কুমিরার জেটিতে লাইটিং, ড্রেজিং ও যাত্রীদের বসার সু-ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। ভাড়া সাধ্যের মধ্যে রাখার জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) যাত্রী স্টিমার সার্ভিস চালু করে যা স্থানীয় সিন্ডিকেটের শিকার।

২০২০ সালের পয়লা মার্চ ফেনী জেলার সোনাগাজী মৌজায় মুহুরী প্রজেক্ট সংলগ্ন নদী তীরবর্তী অংশ থেকে চট্টগ্রামের ডাবলমুরিং থানাধীন দক্ষিণ কাট্টলী মৌজায় রাসমণি ঘাট পর্যন্ত আড়াআড়ি ভাবে মীরসরাই-রাসমণি নদীবন্দর ঘোষণা করে সরকার, যা গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে ওই মাসের গত ৩ তারিখে। একই দিন সরকার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিওটিএ) এই নদী বন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে। ফলে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাথে কোনো চুক্তি নবায়ন করা হয়নি। তাই এই নদী বন্দরের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকে। বিধি অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ইজারাদার থাকতে পারে না। 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌ- নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ কর্তৃক ধার্যকৃত দেশের বিভিন্ন নৌ-পথের যাত্রী ভাড়া আদায়ের একটি তালিকা আছে। সে অনুপাতে গুপ্তছড়া-কুমিরা ১৭ কি.মি. নৌ-পথের পারাপার ও যাতায়াতের জন্য ভাড়া হওয়ার কথা ২৯ টাকা। কিন্তু সরকারি হিসেবের ২৯ টাকার জায়গায় ২৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে, অর্থাৎ ৮ দশমিক ৬২গুণ বেশি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারি গেজেট অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএর মালিকানাধীন এই নদী বন্দর ঘাটটি বিগত ২ বছর যাবৎ চট্রগ্রাম জেলা পরিষদ কোন ক্ষমতাবলে অবৈধ দখলে রেখেছে। কিভাবে তারা প্রতি বছর ইজারা দিয়ে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করছে? কেন বিআইডব্লিউটিএ এই ঘাটটি আইনী পদক্ষেপের মাধ্যমে অবৈধ দখলমুক্ত করতে পারছে না? 

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালামকে ফোন করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি। তবে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির ইকবাল বলেন, ‘ঘাটের মালিকানা নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে আমাদের সমঝোতা চুক্তি আছে। এখন এটি কীভাবে পরিচালিত হবে তা মন্ত্রণালয়ই ঠিক করবে। এই ঘাটে আমাদের প্রচুর বিনিয়োগ আছে।’

বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, সন্দ্বীপের প্রধানতম নৌরুট হওয়ায় এই ঘাটের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব বাবদ আয় ছাড়াও বিভিন্নভাবে আয়ের সুযোগ থাকায় জেলা পরিষদ এই ঘাটটি থেকে নিজেদের কর্তৃত্ব ছাড়তে রাজি নয়। এ কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ইজারা মূল্য প্রদানের কারণে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে অস্বাভাবিক ভাড়া আদায় করছে। এদিকে মালিকানা পাওয়ার আশায় বিআইডব্লিউটিএ ইতোমধ্যে নৌপথে ৪টি বয়া স্থাপন করা হয়েছে।
ঘাটের মালিকানা নিয়ে সরকারি দুই সংস্থা এভাবে কাড়াকাড়িতে লিপ্ত হলেও তাদের ওপর নাখোশ স্থানীয় বাসিন্দারা। বেসরকারি একটি কলেজের প্রভাষক ফছিউল আলম বলেন, ‘জেলা পরিষদ প্রতিদিন লাখ টাকা ইজারা নেওয়া ছাড়া কিছুই করেনি। নিরাপদ কোনো নৌযান দিতে পারেনি তারা। ওঠানামার দুর্ভোগও দূর করতে পারেনি। অথচ প্রতিদিন যাতায়াত করা চার-পাঁচ হাজার মানুষের পকেট থেকে রাজস্বের নামে লাখ টাকা নিয়ে যাচ্ছে তারা।’

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানের কমডোর গোলাম সাদেক ভোরের পাতাকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করি কিছুদিনের মধ্যে সব সমাধান হয়ে যাবে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


আরও সংবাদ   বিষয়:  বিআইডব্লিউটিএ  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]