ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া র্যাব-ডিবির জ্যাকেট পরে বাসের গতিরোধ করে ডাকাতি করতো কাউসার বাহিনী। গত তিন-বছরে চক্রটি ঢাকা কুমিল্লা মহাসড়ক এবং মাওয়া হাইওয়ে রোডে ১৫ থেকে ২০ টির অধিক ডাকাতিসহ গৃহ ডাকাতি, সড়কে ডাকাতি, গরুবাহী ট্রাক, মালবাহী ট্রাক ও বিভিন্ন মালামালের গুদামেও ডাকাতি করেছে।
ডাকাত দলের ছয় সদস্যের মধ্যে ৪ জনকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
গ্রেপ্তাররা হলেন ডাকাত দলের সর্দার কাউসার আলী (৩০), সহযোগী আব্দুল্লাহ আল-মামুন (৪০), আলী আকবর (২৪), মো. ইমামুল হক (২৭)। বাকি আরও দুজন এখনো পলাতক রয়েছে।
বুধবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর টিকাটুলিতে র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন এলাকায় জাঙ্গাল গ্রামস্থ সুন্দরবন ফিলিং স্টেশনের পাশ থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালীন তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে দুইটি ডিবি জ্যাকেট, একটি র্যাব জ্যাকেট, দুইটি ওয়াকিটকি সেট, একটি হ্যান্ডকাপ, একটি ভুয়া পুলিশ আইডি কার্ড, একটি এনআইডি কার্ড, দুইটি মানিব্যাগ, একটি লেজার লাইট, একটি ব্যাগ, ছয়টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, ডাকাত দলের সর্দার কাউসার আলী নিজেকে ডিবি পুলিশের এ এস পি পদবী, মো. মামুন ডিবি পুলিশের ওসি, মো. আলী আকবর র্যাবের এসআই এবং মো. এনামুল ডিবি পুলিশের কনস্টেবল পরিচয় দিয়ে ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাতের আঁধারে ঘুরে বেড়ায়।
জন-সমাগমহীন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে সুযোগ বুঝে ডিবি ও র্যাবের জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় চলাচলকৃত যাত্রীবাহী বাসকে লেজার লাইটের মাধ্যমে গতিরোধ করে ভুয়া ডিবি ও র্যাব পরিচয় দিয়ে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল এবং অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্য-সামগ্রী লুটপাট করে।
তিনি বলেন, তাদের মূল টার্গেট নিউমার্কেট এবং পল্টন এলাকার ব্যাংকের কাস্টমার। যখন কোনো এলাকায় ডাকাতির কার্যক্রম পরিচালনা করে তখন ডাকাত দলের সর্দার কাওসার সবাইকে নিয়ে বস্তিতে তাদের ভাড়া করা বাসায় সমবেত হয়ে সেখান থেকে ডাকাতির স্থান রেকি করে। ব্যাংকের গ্রাহক টাকা উত্তোলন করে ফেরার সময় ডাকাত দলের গোয়েন্দা সদস্যরা পিছু নিয়ে নিরাপদ স্থানে আটকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নেয়। এ পর্যন্ত চক্রটি ঢাকা কুমিল্লা মহাসড়ক এবং মাওয়া হাইওয়ে রোডে ১৫-২০ টির অধিক ডাকাতি করেছে।
কাউসার বাহিনীর কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, ডাকাতির দিনে তারা একাধিক ব্যাংকে নজরদারি রাখে। মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলন করে কোনো গ্রাহক বের হলে চক্রের রেকি করা সদস্য পিছু নেন। যাত্রীবাহী বাসে উঠলে তারাও একযোগে উঠে।
এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা অন্য সদস্যদের বিভিন্নভাবে পরিবহনের গতিপথ এবং লোকেশন বলে দেয় ও নিয়মিত আপডেট দিতে থাকে। নিরাপদ স্থানে লেজার লাইটে বাস আটকে ডিবি ও র্যাবের জ্যাকেট পড়ে অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী অথবা হত্যা মামলার আসামি বলে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে তাদের মাইক্রোতে উঠিয়ে নেয়। এরপর টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে ভিকটিমকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
ডাকাত দলের সর্দার কাউসারের নামে বিভিন্ন থানায় তিনটি ডাকাতি মামলা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কাউসার বিভিন্ন সময় বগুড়া থেকে ঢাকায় এসে তার সহযোগীদের সমবেত করে ডাকাতি কার্যক্রম সংগঠিত করে থাকে। সে এবং তার চক্রটি ডাকাতি কার্যক্রমের সুবিধার্থে যাত্রাবাড়ী এলাকার বস্তিতে ভাড়ায় একটি ঘর নিয়ে সেখান হতে তাদের ডাকাতি পরিকল্পনা এবং কার্যক্রম করে থাকে। কাউসার ডাকাতি, ছিনতাই ও চুরি মামলায় ২০২০ থেকে ২০২২ সালে ৭ মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়। জামিনে বের হয়ে সে পুনরায় ডাকাতি পেশায় জড়িয়ে পড়ে। ডাকাতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়েই সে তার জীবিকা নির্বাহ করে।
প্রধান সহযোগী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।