বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কঠিন শর্ত মেনে নেবে না বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বুধবার (৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা জানান।
সরকার আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছে, তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্ব সংকট এখন আমাদের জাতীয় জীবনে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংকট, ডলার সংকট, রিজার্ভে চাপ পড়েছে। দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। ব্রিটেনের মতো দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় ৮০ শতাংশ বেড়েছে। ১০ দশমিক ১ শতাংশ মূল্যস্ফীতি।
তিনি বলেন, সেখানে আমাদের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ ছিল, সর্বশেষ এটি ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, কিছুটা কমেছে। আমাদের এখানে দ্রব্যমূল্যের বাড়ার গতিটা একটু কমেছে। আশা করছি, আস্তে আস্তে স্বস্তিদায়ক হবে। শান্তি কথাটা আমরা মুখে যতটা বলি, বাস্তবে ততটাই কঠিন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রতিফলন বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে থাকবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে। টাকার তো প্রয়োজন। আইএমএফের ঋণ আমরা গ্রহণ করবো। তবে কঠিন শর্ত আমরা মেনে নেব না। টাকার জন্য খুব হার্ড প্রি-কন্ডিশন মেনে নেওয়া সহজ নয়। আলাপ-আলোচনা চলছে।
‘কথাবার্তা চলছে, যেটা যৌক্তিক সেটাই হবে। এই মুহূর্তে টাকা নিতে হবে, বিকল্প নেই। অর্থ আমরা নেব, তবে কঠিন শর্তে নয়।’
কঠির শর্ত কী- জানতে চাইলে কাদের বলেন, অ্যাপ্লাই ইয়োর কমনসেন্স। কঠিন শর্ত যেটা লাগবে, সেটা দিয়ে কেন? আপনি একজন সাধারণ মানুষ, আপনি বুঝেন যে শর্তটা কী? আইএমএফের অতীতের ব্যাপারেও আমরা জানি। আইএমএফের শর্তগুলো কী হতে পারে, কোন শর্তটা মানলে দেশের আরও ক্ষতি হতে পারে, এমন শর্ত আমরা মানব না।
বৈশ্বিক সংকট প্রসঙ্গে সড়কমন্ত্রী বলেন, সামনে অর্থনৈতিক বড় সংকট আসছে। সরকার সেটি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেকের তুলনায় বাংলাদেশ এখনও স্বস্তিদায়ক অবস্থানে আছে। সংকটের আলামত আছে বলেই প্রধানমন্ত্রী বারবার এটি উল্লেখ করছেন।
আওয়ামী লীগের সম্মেলন বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল জাঁকজমক হবে না। কারণ, বৈশ্বিক সংকট চলছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে সারা দেশের কাউন্সিলগুলো শেষ করা হবে। জাতীয় কাউন্সিলের জন্য ১১টা উপকমিটি হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন বিষয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্র বিকাশমান প্রক্রিয়া। আমাদের চেষ্টা আছে, আছে ভুলত্রুটি এবং সংশোধনের চেষ্টাও। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। কমিশন যেটা আছে, সেটা ‘আজিজ মার্কা’ কমিশন নয়। আইনগতভাবে কমিশন কাজ করবে। এই কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপির আপত্তি কোথায়?
বঙ্গবন্ধু টানেল খুলে দেওয়া প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, আগামী ২৬ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু টানেলের আংশিক খুলে দেওয়া হবে।
এ সময় তিনি উল্লেখ করে বলেন, ১০০ সেতু উদ্বোধন একসঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় আগে হয়েছে বলে মনে হয় না। পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তের প্রকাশ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো যে সংকটে দেশ রয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসা নয়। বরং রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায় যাওয়াই বিএনপির লক্ষ্য।
বরিশালে বিএনপির সমাবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বরিশালে বিএনপির সমাবেশের সময় দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কি না জানি না। বাড়াবাড়ি হলে বিষয়টি ভালোভাবে নেওয়া হবে না, খোঁজ নিচ্ছি।
বিএনপির সমাবেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা যারা পরিবহন মালিক, তারা বাস ধর্মঘট করেছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেখানে জাপা, বিএনপি নেতা ও শাজাহান খান আছেন, তাদের জিজ্ঞেস করুন। আমার এটা জানা নেই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি সমাবেশের মাধ্যমে প্রস্তুত হচ্ছে। কিন্তু সরকার ভয় পায় তাদের আগুনসন্ত্রাসকে। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বললেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে। তাদের টাকার উৎস ও কাকে কত দেওয়া হবে, সেটার হিসাব করছে তারা, সেটাও আমরা জানি।