বন্যা,অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির কারনে জেলার কৃষকদের উৎপাদিত ফসল বা সবজি চাষে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে।ওই ক্ষতি পুঁষিয়ে নিতে জেলার কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলার ৫০ হাজার কৃষকদের মাঝে পর্যায়ক্রমে বিনামুল্যে কৃষি বিজ বিতরণ করে যাচ্ছে।এ ছাড়াও কৃষকদেও দক্ষ করে তোলা জন্য দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষন। প্রশিক্ষন ও বীজ পেয়ে টাঙ্গাইলে শীত মৌসুমের শুরুতেই কৃষকরা সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভাল ফলন ও অধিক লাভের আশায় কৃষকরা তাদের কাঙ্খিত স্বপ্ন বুনতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে তারা।তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা উঁচু ভিটি জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপন ও পরিচর্যায় কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সবজি ক্ষেতগুলো যেন কৃষিপ্রেমী কৃষকদের পদভারে মুখরিত। মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে বেগুন, মুলা,ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, পালং শাক, লাল শাকসহ হরেক রকমের শীতকালীন সবজির বাগান।
শীতকালীন সময়ে বাজারে সবজির দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরা শীত আসার আগেই সবজি চাষ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ধান চাষে কৃষকরা আগের মতো তেমন একটা সুবিধা বা লাভ করতে না পাড়ায় অধিকাংশ কৃষক সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। এছাড়াও এ পেশাটি লাভজনক হওয়ায় অনেক শিক্ষিত বেকাররাও এ পেশায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে শীতকালীন সবজি চাষ করে অতীতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে,টাঙ্গাইল জেলায় এবার মোট ১২ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলা, কালিহাতী উপজেলা, দেলদুয়ার উপজেলা ও সখিপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশী সবজি চাষ করা হচ্ছে। বেগুন, মুলা, টমেটো, শিম, বরবটি, শসা, লাউ, কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষের প্রস্তুতি নিয়ে কৃষকেরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন।ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামে ৫’শ কৃষকদের কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সবজি চাষে পারদর্শী করে তোলা হয়েছে।
সদর উপজেলার বিক্রমহাটি গ্রামের কৃষক মো. সোনা মিঞা, সামছুল হক, হারুণ অর রশীদ জানান, বর্তমানে সবজি চাষে লাভ বেশি পরিশ্রম কম। সবজি চাষে খুব বেশি জায়গারও দরকার হয় না। স্বল্প সময়ে সবজি বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে অধিক টাকা আয় করা যায়। সবজি চাষের ক্ষেত্রে শুধু সঠিক পরিচর্যা ও সেবাযতœ করতে হয়। তাই আমরা আমরা অল্প পূজিতে বেশী লাভের আশায় শীতকালীন সবজি চাষ করছি। প্রতি বছর আমাদের এলাকার শীতকালীন সবজি বেগুন, মুলা, টমেটো, শিম, বরবটি, শসা, লাউ, কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন জাতের সবজি জেলার সীমানা পেরিয়েও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আমাদের উৎপাদিত সবজি রপ্তানি করে থাকি। এবারও আবহাওয়া ভাল থাকলে শীতকালীন সবজি বিক্রি করে কিছুটা লাভের মুখ দেখব।
কৃষকরা আরো জানান, সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের বিক্রমহাটি, সদিলাপুর, রসুলপুর, শালিনা, গালা, গালারচর, বেথইর এলাকায় শীতকালীন সবজি চাষ বেশি হয়। কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে টাঙ্গাইলে এবার সবজি উৎপাদনের বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। এসব সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটানোর পর দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবুল বাশার জানান,বন্যা ,অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টির কারনে এবারে টাঙ্গাইলের কৃষকরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। ওই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে মাঠে প্রান্তরে অনেক সময় ব্যয় করছেন তারা। জমির পরিচর্যার পাশাপাশি বীজতলা তৈরি, চারা উৎপাদন, রোপণের বিষয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে গিয়ে কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়াও জেলার ৫০ হাজার কৃষকদের মাঝে পর্যায়ক্রমে বিনামুল্যে কৃষি বিজ বিতরণ করা হচ্ছে। প্রশিক্ষনের মাধ্যমে কৃষকদের দক্ষ করে তোলা হচ্ছে।