পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হয়েছে রাস উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। মঙ্গলবার ভোর ৫ টা ৩০ মিনিটে জাগতিক সকল পাপ মোচনের আশায় সৈকতের নোনা জলে গাঁ ভাসিয়ে এ গঙ্গাস্নান সম্পন্ন করেন হিন্দুর্ধমালম্বীরা। স্নানের আগে সৈকতে মোমবাতী, আগরবাতি, বেল পাতা, ফুল, ধান, র্দুবা, হরতকী, ডাব, কলা, তেল ও সিঁদুর সমুদ্রে জলে র্অপন করে সনাতনী নারীরা।
এসময় উলুধ্বনি ও মন্ত্রোপাঠে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো সৈকত। এছাড়া মাথান্যাড়াসহ প্রায়শ্চিত্ত ও পন্ডিদান করেন অনেক মানতকারীরা। পরে ১৭ জোড়া যুগল প্রতিমা র্দশন করেন হিন্দুর্ধমালম্বীরা। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানেরর মাধ্যমে কুয়াকাটায় রাসলীলা শেষ হলেও কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদনমোহন সবোশ্রমে এ রাস উৎসব চলবে আরও ৫ দিন। এর আগে রাতভর কুয়াকাটার রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে পূজার্চনা, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও মহানাম কীর্তনে মেতে ওঠেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এদিকে রাস উৎসব উপলক্ষে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় সচেষ্ট ছিলো আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।
সনাতন ধর্ম মতে, দাপর যুগে কংশ রাজাকে বস করে রাধাকৃষ্ণের প্রেম থেকেই শুরু রাসলীলা। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে প্রায় ২০০ বছর ধরে এ উৎসব উদযাপন হয়ে আসছে।
রংপুর থেকে পূণ্যস্নান দিতে আসা শ্রাবন্তী রানী জানান, রাসলীলা উদযাপন করতে পরিবার পরিজন নিয়ে সৈকতে এসেছি। রাতভর পূজা অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় সঙ্গীতানুষ্ঠান শেষে সকালে পূণ্যস্নান সম্পন্ন করেছি। গৌতম চন্দ্র সাহা জানান, সব অশুভ শক্তি ও করোনা থেকে মুক্তির আশায় বিশেষ প্রার্থনা করেছি।
রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নিহার রঞ্জন মন্ডল জানান, বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এই দেশে সবাই মিলে একটি সুন্দর লোকজ সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে তুলেছে। যা আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। আমাদের এই মন্দিরের পাশেই একটি মসজিদও রয়েছে। আমাদের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। রাসলীলা উৎসব আমরা সুন্দর পরিবেশে সম্পন্ন করতে পেরেছি।
কুয়াকাটা ট্যুরিষ্ট পুলিশ জোনের ওসি হাসনাইন পারভেজ জানান, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই রাস উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সৈকত এলাকায় ট্যুরিষ্ট পুলিশের টহল অব্যহত রয়েছে। আগত পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপুর্ণ এলাকায় সিসি ক্যামেরা আওতায় ছিলো।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র বৈদ্য জানান, পুণ্যার্থীদের সুপেয় পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ব্যবস্থা,পুণ্যস্নান শেষে কাপড় পাল্টানোর জন্য অস্থায়ী গোসল খানা, নলকুপ বসানোসহ তিনদিন ব্যাপী নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সুন্দন ও সুষ্ঠভাবে গঙ্গাস্নান সম্পন্ন হয়েছে।