প্রকাশ: রোববার, ৬ নভেম্বর, ২০২২, ৯:১৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে আগাম জাতের আমন ধান কাটা-মাড়াই পুরোদমে শুরু হয়েছে। ফলনও হয়েছে বাম্পার। ধানের দাম ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভায় ব্রি ধান-৭০, ৭১, ৭৫, বিনা ধান-১১, ১৭, হাইব্রিড এরাইজ-৭০১ ও হিরা ধান-১০ আগাম জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। আগাম জাতের এ ধান চাষের শুরু থেকে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত কৃষকদের নানা প্রতিকুলতার মূখোমূখি হতে হয়েছে। বৃষ্টি নির্ভর আমন চাষের শুরুতেই খরার কারণে সেচের মাধ্যমে ধান গাছ বাঁচিয়ে রাখতে হয়েছে কৃষকদের। এরপর সঠিকভাবে পরিচর্যা করা হলেও ধান পাকা ও কাটার সময় হঠাৎ করে ঝড় হাওয়ায় যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দেয়। এত কিছুর পরেও উপজেলায় আগাম জাতের ধান চাষে সাফল্য এসেছে কৃষকের। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের ঘরে ঘরে আগাম জাতের ধান উঠতে শুরু করেছে। আশ্বিন-কার্তিক মাসে এ ধান ঘরে তুলে বাজার মূল্য বেশি পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসির ফোটেছে। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিমন আমন ধান ১ হাজারা ১৫০টাকা থেকে ১ হাজারা ২’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় আগাম জাতের আমন চাষ করা হয়েছে ১ হাজার ৭’শ ৩৫ হেক্টর জমিতে।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এক যুগ আগেও আশ্বিন-কার্তিক মাসে এ অ লে দরিদ্র, দিনমজুর ও কৃষকের কাছে মঙ্গার মাস বলে বিবেচিত ছিল। সেসময় কৃষকদের হাতে কোন কাজ ছিল না। কিন্তু এখন আর সেদিন নেই। এখন বিভিন্ন জাতের আগাম ধান এখন কৃষকের ঘরে ঘরে। আগে অগ্রায়ণের প্রথম সপ্তাহের পর ক্ষেতের ধান কাটা-মাড়াই শুরু করা হত। কিন্তু এখন আর আমন ধান কাটার জন্য অগ্রহায়ণ মাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। আগাম জাতের বিশেষ করে হাইব্রিড এজেড-৭০১ ধান কৃষকরা ঘরে ঘরে তুলছে আশ্বিন মাসেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অসময়ে বৃষ্টিপাত ও প্রচন্ড খরায় চাষ উপযোগী নতুন নতুন জাতের ধান চাষ হচ্ছে এলাকায়। বীজ তলায় বীজ বপনের দিন থেকে মাত্র ১ ’শ ২০ দিনের মধ্যেই আগাম জাতের এসব ধান ঘরে তোলা হচ্ছে।
তাই কৃষকরা এখন মান্ধাতা আমলের পানি সাইল, পাইজাম, বিআর-১১, ২২, সহ বিভিন্ন জাতের ধান চাষাবাদ না করে এই আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহী। কৃষকরা জানায়, আগাম জাতের আমন ধান ১ ’শ ১০ থেকে ১ ’শ ২০ দিনের মধ্যে এই ধান কাটা-মাড়াইয়ের উপযোগী হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ফলন আসে সাড়ে ৪ থেকে ৫ মেট্রিক টন। পোকামাকড়ের আক্রমনের আগেই এই ধান কাটা শেষ হয়ে যায়। আবার এই ধান কেটে দ্রুত ওই জমিতে আলু, গম, সরিষা, তিল ও তিষিসহ নানান জাতের সবজি আবাদ করা সম্ভব।
থেতরাই ইউনিয়নের আদর্র্শ কৃষক মহসীন আলী বলেন, এবার তিনি ৫ একর জমিতে আগাম জাতের ব্রি-৭১ ধান রোপন করেছেন। ইতোমধ্যে আগাম জাতের ধান কাটা-মাড়াই প্রায় শেষ। প্রতি একরে তিনি ৬০ থেকে ৬১ মণ ধান পেয়েছেন। বাজারে ধানের দাম ভালো হওয়ায় তিনি খুশি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মুকিত বিন লিয়াকত বলেন, আগাম জাতের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কম সময় ও অধিক ফলনের কারণে কৃষকরা এই জাতের ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।