সরকার বিশেষ করে দেশপ্রেমিক পুলিশ বাহিনীর কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট যখন সারাদেশে জঙ্গি দমনে জিরো টলারেন্স নীতিতে অগ্রসরমান, তখনই সিলেটের একটি গ্রামে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী (হুজি)’র তিন জঙ্গির সন্ধান পাওয়া গেছে।
ভোরের পাতার অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ থানার ঘোষগাঁও গ্রামে হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী (হুজি) থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি তিনজন হলেন- আবুল খায়ের জামালী (ছদ্মনাম- জালওয়ায়ে জামালী), হুমায়ুন কবির (ছদ্মনাম- হিমু) ও জুবায়ের আহমেদ (ছদ্মনাম শামীম)। তারা পরস্পর আত্মীয় - আবুল খায়ের জামালীর মামাতো ভাই হুমায়ুন কবির হিমু ও চাচাতো ভাই জুবায়ের আহমেদ শামীম। হুমায়ুন কবির হিমু হরকাতুল জিহাদ নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন - মুফতি আব্দুল হান্নানের নির্দেশে ও সিলেট অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলের পরিকল্পনায় সিলেটের গুলশান সেন্টার ও সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলায় সরাসরি জড়িত ছিলেন ও বর্তমানে পলাতক।
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি) প্রতিষ্ঠার পর এর প্রথম প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুর রহমান ফারুকী র তত্ত্বাবধানে আবুল খায়ের জামালী প্রশিক্ষণ সম্পাদন করেন ও কার্যক্রমে সক্রিয় হন। আফগানিস্তানের খোস্তে মাইন অপসারণের সময় মাওলানা ফারুকী নিহত হলে বাংলাদেশে সদ্য জন্ম নেয়া হরকাতুল জিহাদের কার্যক্রম স্থিমিত হয়ে পড়ে, এতে আবুল খায়ের জামালী কিছুটা নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। পরবর্তীতে বিগত ৩০ এপ্রিল ১৯৯২ সালে পুণরায় হুজির কার্যক্রম শুরুর প্রাক্কালে আবুল খায়ের জামালী মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব গমন করেন। হুজি/আল-কায়েদার প্রতি সমর্থন ও পরোক্ষভাবে এর কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করায় তিনি সৌদি আরবের মদিনা নগরীর কোন বাঙালি মেসে অবস্থান করতে পারেনি। নিজের দেশের মানুষ হলেও বাঙালিরা ভয়ে তাকে কোন বাঙালি মেসে থাকার সুযোগ না দেওয়ায় তিনি উক্ত নগরীর একটি পাক-আফগানিস্তানি মেসে অবস্থান করতেন।
পরবর্তীতে সৌদি আরবে অবস্থান অনিরাপদ হয়ে পড়লে তিনি দেশে চলে আসেন। মাঠে অপারেশন পরিচালনায় অংশগ্রহণের পরিবর্তে, ধর্মীয় বয়ান ও বই লেখার মাধ্যমে তিনি মূলত জঙ্গিবাদকে উসকে দিতেন। ফেইসবুকে তার নামে বিভিন্ন আইডি/পেইজ (কমপক্ষে চারটি আইডি যা নিম্নে উল্লেখিত আছে) খুলে তিনি জঙ্গিবাদ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রচারণা চালাতেন। সন্ত্রাসবাদের প্রতি বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে, তিনি জঙ্গিবাদ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রচারণা থেকে নিষ্ক্রিয় থাকলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাতে বর্তমান সরকার আর ক্ষমতায় না আসে, সেই প্রত্যাশায় আবার সক্রিয় হয়েছেন। জঙ্গি আবুল খায়েরের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বার্থে এসব জঙ্গিপনা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানালে, প্রথম স্ত্রী (বাহার বেগম, যিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা)-র সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
এছাড়া, ১৯৯২ সালে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি) পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর জুবায়ের আহমেদ শামীম প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকায় গমন করেন। তিনি জঙ্গি নেতা আবু খালেদ আইয়ুবীর তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ সম্পাদন করেন ও কার্যক্রমে সক্রিয় হন। পশ্চিম মিয়ানমারে রোহিঙ্গা বিদ্রোহের সমর্থনে এক অপারেশন পরিচালনার সময় আবু খালেদ আইয়ুবী নিহত হওয়ায় ও প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হওয়ায়, জুবায়ের আহমেদ শামীম বাড়ি ফিরে আসেন পরবর্তীতে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সম্পর্কে পরিবার অবগত হলে, তিনি কিছুটা পারিবারিক চাপে পড়েন। বড় ধরনের কোন অভিযানে অংশগ্রহণ না করলেও তিনি সিলেট বিভাগের বিভিন্ন কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক প্রশিক্ষণ সেন্টারে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) থেকে সংগৃহীত মিলিটারি পোশাকের ব্যবসা শুরু করেন। নিয়ম অনুসারে পোশাকগুলি প্রশিক্ষণার্থীর কাছে বিক্রি করার কথা থাকলেও অতি মুনাফার আশায় কিছু পোশাক তিনি সৌখিন ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। বিধি ভঙ্গের অপরাধে তিনি আর প্রশিক্ষন বা পোশাক সংগ্রহ-বিক্রয় সংক্রান্ত কাজে যুক্ত থাকতে পারেননি।
পরবর্তীতে জঙ্গি নেতাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে ও শর্তসাপেক্ষে নিজ পরিবারকে না জানিয়ে প্রায় পাঁচ বছর আত্মগোপনে ছিলেন। এই পাঁচ বছর তিনি মিয়ানমার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের মধ্যে অবস্থান করে জঙ্গি কার্যক্রমে আত্মনিয়োগ করেন। সুমিষ্ট ভাষী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে মিশে যাওয়ার যোগ্যতা থাকায়, হরকাতুল জিহাদ জুবায়ের আহমেদ শামীমকে সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত করেন। অর্থ সংগ্রহের প্রচেষ্টা হিসেবে আন্তঃসীমান্ত বিভিন্ন লেনদেন, যেমন ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক দ্রব্য, বার্মিজ আচার, জুতা ও কাপড় ইত্যাদির ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। টেকনাফে বসবাসরত এক রোহিঙ্গা পরিবারের মেয়ে লুৎফা বেগম ( সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির নিকটাত্মীয়) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নির্বিঘ্নে সংগঠন কর্তৃক দায়িত্ব পালন করেন। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধরা পড়লে দ্রুত স্থান ত্যাগের উদ্দেশ্যে ওমরা হজের ভিসা নিয়ে স্বপরিবারে সৌদি আরব গমন করেন। পরবর্তীতে ২০১২ সালে অবৈধ হিসেবে সৌদি পুলিশের কাছে ধরা পড়লে পরিবার ছাড়া একাকী দেশে ফেরত আসেন। দেশে নিজের বাড়িতে নিরাপদ বোধ করায়, বিগত ২০১৩ সালে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা দেশে ফেরত আসেন। বর্তমানে তিনি সেন্ট মার্টিন সি ফুড (সিলেটে) ও কাজী ফার্মস কিচেন (গোলাপগঞ্জে) নামক দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার পেছনে মুলতঃ ইয়াবা, সীমানা পিলার, কষ্টিপাথর, তক্ষক, ইত্যাদির গোপন ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। ফেইসবুকে বিভিন্ন নামে আইডি/পেইজ (কমপক্ষে নয়টি আইডি যা নিম্নে উল্লেখিত আছে) খুলে তিনি মাদক ও অবৈধ দ্রব্যের বিপণন, জঙ্গিবাদ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রচারণা চালাতেন। সন্ত্রাসবাদের প্রতি বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে বেশ কিছুদিন জঙ্গিপনা থেকে নিষ্ক্রিয় থাকলেও বর্তমানে তিনি আবার সক্রিয় হচ্ছেন।
এছাড়া, বিএনপি নেতা ইলিয়াছ আলীর ডান হাত একই এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে জামাল উদ্দীন, গ্রাম চরচন্ডি, বিশ্বনাথ, জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি আব্দুল মুকিত, পিতা আব্দুল বারী, মাতা জহুরা বেগম,৪২ ঝর্নার পার; এরাই দালালী করে টাকা আদায় করে হুজিতে অর্থায়ন করছে। নাম এসেছে মাসুদ আহমেদ, পিতা আতাউর রহমানগ্রাম চারাবই, আল মদিনা একাডেমির মাস্টার কট্টর জামাত জঙ্গীরও।
আবুল খায়ের জামালী কর্তৃক পরিচালিত ফেইসবুক আইডি/পেইজ সমুহঃ
1. জালওয়ায়ে জামালী: https://www.facebook.com/profile.php?id=100070410185551
2. Abulkhair Jamali: https://www.facebook.com/profile.php?id=100084242994976
3. আবুল খায়ের জামালী: https://www.facebook.com/profile.php?id=100038340789408 4. আবুল খায়ের জামালী: https://www.facebook.com/profile.php?id=100038375859824
জুবায়ের আহমেদ শামীম কর্তৃক পরিচালিত ফেইসবুক আইডি/পেইজ সমুহঃ
1. Jubayer Shamim: https://www.facebook.com/jubayer.shamim.96 2. Jubayr Ahmed: https://www.facebook.com/jubayr.ahmed.10 3. Ahnaf Tazwar: https://www.facebook.com/ahnaf.tazwar.9480
4. Md Jubair: https://www.facebook.com/profile.php?id=100082228759388
5. Ahnaf Tajwar: https://www.facebook.com/profile.php?id=100076315999035
6. Ahnaf Tazwar: https://www.facebook.com/ahnaf.tazwar.3194 7. সেন্ট মার্টিন সি-ফুড: https://www.facebook.com/profile.php?id=100078926828844
8. Saint Martin Sea Food: https://www.facebook.com/profile.php?id=100076824632080 9. Kazi farms kitchen,Golapgonj: https://www.facebook.com/profile.php?id=100027943045470