আজ শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) বৈঠকে বসছে আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদ। বৈঠকে ক্ষমতাসীন দলটির ২২তম ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের দিন-ক্ষণ চূড়ান্ত হতে পারে। এছাড়া গঠনতন্ত্র সংশোধন, প্রস্তুতিসহ সম্মেলন সংক্রান্ত উপ-কমিটিও গঠন হতে পারে। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বলেছেন—ডিসেম্বরে তারা দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন করবে। এদিকে, শুক্রবারের বৈঠক থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কাউন্সিলের তারিখের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তাই বিকালের এ বৈঠকের দিকে দলীয় নেতা-কর্মী সবার দৃষ্টি আজ গণভবনে। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা দেবেন সেদিকে তাকিয়ে আছে সবাই।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘ডিসেম্বরেই আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ধারণা করা হচ্ছে আজকের বৈঠকে দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে। দলের জাতীয় সম্মেলনের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন নিয়েও সিদ্ধান্ত দিতে পারেন দলীয় প্রধান। আমরা দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বৈঠকে মূলত ১১টি এজেন্ডা রয়েছে। এর মধ্যে আছে- শোক প্রস্তাব পাঠ, ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস, ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস, ২৭ নভেম্বর শহীদ ডা. মিলন দিবস, ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল-২০২২, দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, সাংগঠনিক কার্যক্রম ও বিবিধ। দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কার্যনির্বাহী বৈঠকের শুরুতে দলীয় সভানেত্রী সূচনা বক্তব্য দেবেন। এরপর রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হবে। বৈঠকের শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের রিপোর্ট পেশ করবেন। এতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, জেলা-উপজেলার সম্মেলনের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরা হবে। এরপর দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন নিয়ে কথা হবে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বৈঠকে জাতীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের পাশাপাশি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি, ঘোষণাপত্র, দফতর, প্রচার-প্রকাশনা, স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা, মঞ্চ ও সাজসজ্জা, গঠনতন্ত্র, সাংস্কৃতিক, খাদ্য ও স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি গঠন করে দিতে পারেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সাধারণত জাতীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গতবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে একই মঞ্চে তাদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবারও আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনের বিষয়ে দলীয় সভানেত্রী বৈঠকে নির্দেশনা দিতে পারেন। আওয়ামী লীগের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম বেশ কয়েকটি সংগঠন বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও ছাত্রলীগকে আগেই সম্মেলনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে এই তিন সংগঠনসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের বিষয়ে নির্দেশনা আসতে পারে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ নানা কারণে দলের বেশ কিছু নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিস এবং তৃণমূল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশও পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে দলীয় ফোরামে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। অতি সম্প্রতি জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়াদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হবে তাও আজ জানা যাবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘আজকের বৈঠকে দিবসভিত্তিক কিছু এজেন্ডা রয়েছে। এর বাইরে দলের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ চূড়ান্ত করা হবে। জাতীয় কাউন্সিল সফল করতে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি, ঘোষণাপত্র, দফতর, প্রচার ও প্রকাশনা, স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা, মঞ্চ ও সাজসজ্জা, গঠনতন্ত্র, সাংস্কৃতিক, খাদ্য এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি গঠন করার উদ্যোগ রয়েছে। পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্রাতৃপ্রতিম ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন করার নিদের্শনা রয়েছে। আশা করছি জাতীয় কাউন্সিলের আগেই সেসব সংগঠনের সম্মেলন হবে।’
দলের একাধিক নির্ধারণী ফোরামের নেতা জানিয়েছেন, চলতি বছরে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে মজবুত করে নতুন বছরের শুরু থেকেই নির্বাচনী প্রচারণায় নামবে আওয়ামী লীগ। দলের নতুন নেতৃত্বকে দিয়ে শুরু করবে নির্বাচনী প্রচারণা। বিএনপির সমাবেশের জবাবও দেওয়া হবে নির্বাচনী সমাবেশের মাধ্যমে। জেলায় জেলায় নির্বাচনী সভা করবে আওয়ামী লীগ। এতে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু জেলা ও বিভাগীয় সমাবেশে যোগদান করবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া চলতি বছরের ডিসেম্বরে রংপুর সিটি কপোরেশনের নির্বাচন রয়েছে। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেনি। এবার গ্রহণযোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের পাশাপাশি বিজয়ী হওয়ার কৌশল নিয়েও আলোচনা হতে পারে। জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুরে এবার সিটিতে জয় চায় আওয়ামী লীগ। ডিসেম্বর বিজয়ের মাসে নির্বাচনী জয় দিয়ে নতুন বছরে নির্বাচনী প্রচারে নামতে চায় আওয়ামী লীগ।
দলটির নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুধু নিয়ম রক্ষার সম্মেলন নয়। সম্মেলনে দলের ঘোষণাপত্রে জাতির সামনে ভিশন ও মিশন তুলে ধরা হয়। এই ভিশন ও মিশনকে প্রাধান্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করে। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ এবার কী চমক দেবে সেই দৃষ্টি দলীয় নেতা-কর্মীর পাশাপাশি দেশবাসীরও। অন্যদিকে সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পদপ্রত্যাশী নেতারা অধীর আগ্রহে দৃষ্টি রাখবেন গণভবনে। মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা নানা ছলছুতায় সময় ক্ষেপণ করতে চান। অন্যদিকে আগামী বছর সম্মেলন হলে বয়সের কারণে যারা প্রার্থী হতে পারবেন না তারা চান দ্রুত সম্মেলন। কারণ বর্তমান কমিটি ইতোমধ্যে চার বছর পার করেছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সম্মেলন করে। সম্মেলনে শুধু নেতৃত্ব পরিবর্তনই নয়, জাতির সামনে ভিশন ও মিশন থাকে। এবারও তাই হবে। জাতীয় সম্মেলন ছাড়াও আগামী বছর থেকে নির্বাচনী প্রচারে নামার কৌশল নিয়েও আলোচনা হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রতিটি বৈঠকেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসে। আজকেও তাই আসবে। সে কারণে সবার দৃষ্টি গণভবনের দিকে।’
আওয়ামী লীগ সবসময় রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—দাবি করেন দলটির জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা। তারা বলেন, আমাদের কর্মসূচি চলমান রয়েছে। তৃণমূলের সম্মেলন, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সেখানে বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছে না দলটি। তবে আগামী শনিবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর পুরাতন বাণিজ্যমেলার জায়গায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। সেখানে ব্যাপক শোডাউন করে বিএনপিকে জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ফারুক খান বলেন, আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে, রাজপথে আছি, থাকব এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যারা রাজপথ নতুন করে দখল করার কথা বলছে তাদের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করার দরকার।