ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় "সিত্রাংয়ের প্রভাবে সারাদেশের ন্যায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে শরীয়তপুরের ৫৮ টি ইউনিয়নের বেশীরভাগ এলাকা, ক্ষতির মধ্যে পরেছে ৭২৫০০ জন মানুষ, আংশিক বিধ্বস্ত ৮৫৩টি ঘর সেই সাথে প্রাণ হাড়িয়েছে এক বৃদ্ধা। সোমবার দিবাগত রাতে উক্ত ঝড়টি আঘাত হানে শরীয়তপুরে। এতে বেশ কিছু ঘরবাড়ির পাশাপাশি অসংখ্য বাশঝাড় ও গাছপালা ভেঙে পড়েছে। ঘরের নিচে চাপা পরে শাফিয়া বেগম(৬০) নামে একজন মারা গিয়েছে।
জানা যায়, সাফিয়া বেগম জাজিরার দূর্গম এলাকা কুন্ডেরচর ইউনিয়নের পদ্মানদীর মধ্যে অবস্থিত চিটারচরের সোরহাব মল্লিকের কান্দি গ্রামের হালান মুসল্লীর স্ত্রী ও আলী জব্বর মুসল্লীর মা। তিনি রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে না গিয়ে তার নিজ বসত ঘরেই অবস্থান করেছিলেন। গভীর রাতে ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন সময়ে হঠাৎ তার ঘড়ের উপর আছড়ে পড়ে পাশে থাকা একটি কাঠ গাছ। আর তাতেই চাপা পড়ে মৃত্যু হয় সাফিয়া বেগমের।
কুন্ডেরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন বেপারি বলেন, আমরা গতকাল থেকে প্রতিনিয়ত মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করেছি যাতে তারা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করে। এমনকি নদীর পাড়ে বসবাসকারী অনেক বাসিন্দাদের জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়েছি। তবুও সাফিয়া বেগম বাড়িতে থেকে যায়, রাতে ঘড়ের উপর গাছ পড়ে তিনি মারা যান, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
অম্যদিকে রাস্তার মধ্যে অসংখ্য বাশঝাড় আর বড় বড় গাছপালা ভেঙে পড়ে থাকায় শরীয়তপুরের বিভিন্ন জায়গায় আটকে আছে ছোটখাটো যাননাহনের পাশাপাশি গণপরিবহনও। বিশেষ করে জাজিরা থেকে নড়িয়া যাতায়াতের আঞ্চলিক সড়কটির বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় বড় গাছ পড়ে থাকায় সকাল থেকে আটকে আছে এই রুটে চলাচলকারী বাসগুলো। জাজিরা ছারাও শরীয়তপুর সদর, গোসাইরহাট, ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা ও নড়িয়ায় রাস্তায় পড়ে থাকা গাছগুলো দ্রুত সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের চেষ্টা চালাচ্ছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা বন কর্মকর্তা কালবেলা কে জানান, আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনসাধারণের সহযোগিতা নিয়ে রাস্তা থেকে গাছ গুলো কেটে দ্রুত রাস্তা পরিস্কার করার চেষ্টা করছি। আশা করি বিকেলের মধ্যেই রাস্তাগুলো সব পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং আগের মতই গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হবে।
অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন হয় কৃষিজমিতে। শীতকালীন বিভিন্ন শাক-সবজির পাশাপাশি প্রচুর ক্ষতির স্বীকার হয়েছে মৌসুমি ফসল। বিশেষ করে ইতিমধ্যেই যেসকল কৃষকেরা পিয়াজ-রসুন বুনেছিলেন, বৃষ্টির পানিতে তাদের সব ফসল তলিয়ে গিয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জামাল হোসাইন বলেন, আমরা আগেই আমাদের কৃষকদেরকে ২৮ তারিখের পূর্বে কোন ধরনের নতুন ফসল বুনতে নিষেধ করে দিয়েছিলাম, তবুও যারা বুনেছে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এখনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানা সম্ভব হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হবে কৃষকেরা।
এছাড়া গতকাল থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ থেমে থেমে বিচ্ছিন্ন থাকলেও রাত থেকে পুরোই বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা। বহু যায়গায় ইন্টারনেটের ক্যাবল ও বিদ্যুৎ সংযোগের ক্যাবল ছিড়ে পড়ে রয়েছে যত্রতত্র। যা দ্রুত ঠিক করার জন্য সকাল থেকেই কাজ করে যাচ্ছে ইন্টারনেট ক্যাবল অপারেটররা ও বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন।
জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা (ডিআরও) সৈয়দ মোঃ আজিম উদ্দীন কালবেলা কে বলেন, আমরা সিত্রাংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোর জন্য নগদ ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ২৪০ টন চাল, শুকনো খাবার ১০০০ প্যাকেট, ৩০০ কার্টুন ড্রাই কেক ও ৩০০ কার্টুন বিস্কুটের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়াও যাদের ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের জন্য নগদ অর্থ ও টিনের ব্যবস্থা আছে।
অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় পূর্ণ প্রস্তুতি থাকা সত্বেও একজনের মৃত্যুবরণে দুঃখ প্রকাশ করেছে শরীয়তপুরজেলা প্রশাসন। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ পারভেজ হাসান কালবেলা কে জানান, আমরা রবিবার থেকে বারবার সবাইকে সতর্ক করেছি এবং আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়ার জন্য বারবার মাইকিং করেছি। এবং প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দিয়ে জেলার সকল আশ্রয় কেন্দ্র গুলো প্রস্তুত রেখেছি।