সুপার সাইক্লোন সিডর আক্রান্ত উপকূলীয় জেলা বরগুনার সর্বত্র ১০ নম্বর বিপদ সংকেত সিত্রাং ঘুর্ণিঝড় আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে আমাবস্যা,সুর্য গ্রহন ও সিত্রাং মিলে উপকূলের মানুষকে বেশী করে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলেছে।
বিশেষ করে, জেলার নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা সিত্রাংয়ের খবরে বেশী আতঙ্কে রয়েছে। তাদের ধারণা, সিডরের মতোই প্রবল জলোচ্ছ্বাস ধেয়ে আসছে আবারও বরগুনায়।
বরগুনার উপকূল জুড়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে সিত্রাং মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।সভায় জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি উপলক্ষে জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, আমদের ৬৪২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। ঝূঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের আশ্রয়ন কেন্দ্রে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনা খাবার ও নগদ ৫ লাখ ৭০হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন দেখা দিলেই সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউএনওদের বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এদিকে কোস্টগার্ড, সিপিপি, রেডক্রিসেন্ট, সহ স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
কোস্ট গার্ড সূত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগর ও বিভিন্ন নদ-নদীতে থাকা নৌযানগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ঝুঁকির মধ্যে থাকা বাসিন্দাদের স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে।
জেলার বিষখালী, বলেশ্বর এবং পায়রা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনার কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দারা মনে করছেন, সিত্রাং সিডরের চেয়েও ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়।
এ ছাড়াও নদী তীরবর্তী বেশ কিছু এলাকায় সুরক্ষা বেড়িবাঁধ নেই। কোথাও কোথাও ভাঙা বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় স্বাভাবিক জোয়ারেই প্লাবিত হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয়ের তথ্যমতে, সুপার সাইক্লোন সিডর, আইলা, মহাসেন, বুলবুলসহ সিডর-পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ে জেলার ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ৪৫০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৫৪ কিলোমিটার সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে। গত ১৫ বছরে এর অধিকাংশ মেরামত করা হলেও এখন পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত ও ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
এ অবস্থায় বরগুনা সদর উপজেলার বড় ভাইজোড়া গ্রামের মিলি বেগম বলেন, ‘সিডর আমাদের সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন কোনোমতে বেঁচে আছি। শুনছি, সিডরের চেয়েও বড় বন্যা আসবে। খবরটা শুনে ডরের চোটে কলিজা কাঁপছে।’
সিডরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পাথরঘাটা পদ্মা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল আলী মিয়া বলেন, ‘মোগো দ্যাশে বোলে আবার বড় বইন্যা আইবে। হুনছি সবাই কয় সিডরের চাইতেও বড় বইন্যা। হাছা-মিছা কইতে পারি না, তয় পরাণডা কাঁপতাছে খবরডা হোনার পর।’
বরগুনা সদরের নলটোনা ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা আবদুস সাত্তার শেখ জানান, সিডরে তাদের এলাকায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সে সময় এক কবরেই ওই এলাকার ৩৮ জনকে দাফন করা হয়েছিল।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বরগুনা জেলার ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে এখনও প্রায় ৫০ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার হয়নি। এ ছাড়াও বাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা বাড়ানোর প্রয়োজন। আমরা বেশ কিছু এলাকার বাঁধ সংস্কার করেছি, এখনও কাজ চলছে। মূলত এই এলাকার মানুষ সিডরের পর ঘূর্ণিঝড়ের খবর পেলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এখন অমাবস্যার প্রভাবে নদীর পানি বেড়ে যাওয়াও আতঙ্ক ছড়ানোর আরেকটি কারণ।’
জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রমহান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমরা এখন আগের চেয়ে অনেক সক্ষম। আমাদের পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র আছে। প্রয়োজনে এসব কেন্দ্রে মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। তাই এলাকার লোকজনকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’