কপোতাক্ষনদ খননে দুর্নীতি, অনিয়ম-অব্যস্থাপনার প্রতিবাদে ও বিভিন্ন দাবিতে কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের ব্যানারে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার(২০অক্টোবর) বিকালে ঝিকরগাছা প্রেসক্লাবে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্ঠা ইকবাল কবির জাহিদ। কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন ঝিকরগাছা উপজেলা কমিটির আহবায়ক আঃ রহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের যশোর জেলা কমিটির আহবায়ক বর্ষীয়ান রাজনীতিক বাবু অনিল কুমার বিশ^াস।
বক্তব্য রাখেন কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের ঝিকরগাছা উপজেলা শাখার সদস্য সচিব মোখলেছুর রহমান কেটি, সেবা সংগঠনের সভাপতি মাষ্টার আশরাফুজ্জামান বাবু, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী গদখালি শাখার সাধারণ সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র ভক্ত, সহ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহীন আহম্মেদ, কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য শরীফুজ্জামান আগা খান, পানিরাসা ইউপি সদস্য ও সংগঠক মোছাঃ তরুণা বেগম, সংগঠক শফিকুল ইসলাম স্বপন, সেবক সংগঠনের সভাপতি মতিয়ার রহমান প্রমুখ।
বক্তারা কপোতাক্ষনদ খনন চলমান প্রকল্প ঘিরে ব্যাপক দুনীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে ধরেন। একই সাথে নদখননে স্বচ্ছতার সাথে জনতদারকির মাধ্যমে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীন জমি নদীকে ফিরিয়ে দেওয়া, খননের মাটি নদীর সীমানার বাইরে অপসারণ ও নদীর আইন মেনে খনন ও সংষ্কার করাসহ উজানের মাথাভাঙ্গার সাথে নদী সংযোগ স্থাপন করে জোয়ারভাটা চালু করতে হবে।
কপোতাক্ষ খননে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের মচ্ছব চলছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, জনগণের দেওয়া করের টাকায় এসব প্রকল্পের লুটপাট মেনে নেওয়া হবেনা। এসব লুটপাট বন্ধ করতে হবে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না হলে প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। মতবিনিময় সভায় স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধনসহ নদ অববাহিকার বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
কপোতাক্ষ খনন প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশয় প্রকাশ, ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করে কথাগুলো বলছিলেন, ‘কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন’ যশোর জেলা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ। তিনি শুক্রবার সকালে কপোতাক্ষ নদের ঝিকরগাছা-চৌগাছা অংশের খনন কাজ সরেজমিনে পরিদর্শনে এসে এসব কথা বলেন। তিনি কপোতাক্ষ নদ খননে অনিয়ম অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করেন।
ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, নদের দু’পাড়ের পুরনো সীমানা সঠিকভাবে নির্ধারণ করে নদ খনন করার দরকার ছিলো। অথচ, সেটি করা হচ্ছেনা। মাঝ বরাবর কাটার ফলে নদের জায়গা আরো সংকুচিত হচ্ছে। পরিণত হচ্ছে সরু খালে। নদের মাঝ বরাবর মাটিকেটে দু’পাড়ে বিক্ষিপ্তভাবে ফেলে রাখা হচ্ছে। ফলে সমাগত বর্ষা মৌসুমে উজানের পানির ঢল মানলে এসব মাটিতে খননকৃত জায়গা আবার ভরাট হয়ে যাবে। মাঝ বরাবর খননের ফলে নদের মূল সীমানার অবশিষ্ট জায়গা দখলবাজ ভূমিদস্যুরা স্থায়ীভাবে দখলদারবনে যাবে। কর্তৃপক্ষের অপরিকল্পিত ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দখলবাজদের আরো উৎসাহিত করবে। এটি উদ্বেগের বিষয়।
কপোতাক্ষ বাাঁচাও আন্দোলনের এই নেতা উষ্মা প্রকাশ করে আরো বলেন, পাউবো নিজেরাই নদীর তট আইন মানেনা। তারা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, কপোতাক্ষের ২য় পর্যায়ের খনন কাজের সিডিউল বোড ‘লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখা হয়েছে’। ফলে সাধারণ মানুষ এই প্রকল্প সম্পর্কে কিছুই জানতে পারছেনা। কাজের সিডিউল বোডটি ঝিকরগাছা সড়ক ব্রিজ সংলগ্ন জনবহুল এলাকায় স্থাপন করা দরকার। আমরা এই বিষয়টি পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ আলোচনা করে ঝিকরগাছার গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে কাজের সিডিউল অনুযায়ী আমাদের বিস্তারিত দাবি-দাওয়া তুলে ধরবো।
তিনি বলেন, যশোর ঐতিহ্যের নদ কপোতাক্ষ যখন মৃতপ্রায়, জলাবদ্ধ মানুষের মানবেতর জীবন-যাপন ঠিক তখন আমরা ২০০৩/০৪সালে কপোতাক্ষ বাঁচাও নামে একটি বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তুলি। যাতে কপোতাক্ষ অববাহিকার হাজার হাজার মানুষ অভিন্ন দাবিতে আমাদের সাথে একাত্ত প্রকাশ করে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করেন। আজকের এই কপোতাক্ষ খনন তারই একটি অংশ। আমরা আশা করছি, কাজের সিডিউল অনুযায়ী কপোতাক্ষ খনন অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেন, কপোতাক্ষ নদের নাব্য ফেরাতে এবং টেকসই উন্নয়নে ভৈবর-মাথাভাঙ্গা সংযোগ কপোতাক্ষ না হলে এর স্বাভাবিক প্রবাহ ফেরানো অসম্ভব। ভৈবর-মাথাভাঙ্গার সাথে পদ্মার সংযোগ স্থাপন জরুরী।
চৌগাছার তাহেরপুর থেকে দর্শনার ভৈরব ও মাথাভাঙ্গার সংযোগ স্থাপন করা হলে কপোতাক্ষকে আবারও তার অতীত ঐতিহ্যের ধারায় ফেরানো সম্ভব। এব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ২২কিঃ মিঃ প্রায় ৪’শ কোটি টাকার পূণর্খননের একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু সেটি কেন বাস্তবায়ন করা হলো না সেটি আমাদের বোধগম্য না। ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, আমাদের জানামতে, ঝিকরগাছা সড়কসেতু থেকে উজান অংশে ৮১কিঃ মিঃ ও রেলসেতু থেকে ভাটি অংশে ৭৯কিঃ মিঃ নদ খননের কথা।