প্রয়াত সাংবাদিক ও কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমান ছিলেন একজন স্পষ্টবাদী ও সাহসী কলমযোদ্ধা। সত্য প্রকাশে তিনি কখনো পিছপা হননি, কাউকে ছাড় দেননি। তাঁর অকালমৃত্যুতে সাংবাদিকতা জগতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। লেখনী ও কর্মের মধ্য দিয়ে তিনি ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবেন। মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন।
শনিবার (১৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ প্রতিদিন কার্যালয়ে আয়োজিত ‘স্মরণে-আড্ডায় পীর হাবিবুর রহমান’ শীর্ষক স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। পীর হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, পীর হাবিবুর রহমানের ভাই সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সাবেক সিনিয়র সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, ডেইলি সানের সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী, কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক আবু তাহের, উপসম্পাদক মাহমুদ হাসান, কবি মোহন রায়হান, বাংলানিউজের সম্পাদক জুয়েল মাজহার, ঢাকা প্রকাশ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, ডেইলি সানের নির্বাহী সম্পাদক রেজাউল করিম লোটাস, প্রয়াত পীর হাবিবুর রহমানের একমাত্র ছেলে আহনাফ ফাহমিন অন্তর, বন্ধু ও পূর্বপশ্চিম.নিউজের সম্পাদক জাকিরুল হক টিটন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার রফিকুল ইসলাম রনি। প্রসঙ্গত, ক্যান্সার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে আকস্মিক মারা যান খ্যাতিমান সাংবাদিক ও কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমান।
স্মরণসভায় কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও সাংবাদিকতায় সে প্রভাব পড়ত না পীর হাবিবুর রহমানের। তিনি অনেকের বিরুদ্ধে লিখেছেন যাদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিয়ে লিখতেও তিনি কার্পণ্য করেননি। তাঁর মতো সাহসী সাংবাদিকের অভাব রয়েছে।
পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকার সময়ও বাংলাদেশ প্রতিদিনে কলাম লিখেছেন তিনি। তাঁর অন্য চাকরির সুযোগ থাকলেও সেখানে যোগদান না করে সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি জনমানুষের কাছে অনেক প্রিয় ছিলেন। মৃত্যুর পর হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিল তাঁকে একনজর দেখতে।
আহনাফ ফাহমিন অন্তর বলেন, বাবা খুব প্রিয় ছিলেন আমার কাছে। ক্যান্সার থেকে সুস্থ হলেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা পেয়েছেন বাবা।
সভাপতির বক্তব্যে নঈম নিজাম বলেন, পীর হাবিবুর রহমানের সঙ্গে আমার বন্ধন ছিল দীর্ঘদিনের। তাঁর মতো সাহসী লেখনী খুব কম পাওয়া যায়। পীর হাবিবুর রহমান থাকবেন আমাদের মনে, পাঠকের মাঝে। শুধু বাংলাদেশ প্রতিদিন নয়, পুরো বাংলাদেশ পীর হাবিবুর রহমানের শূন্যতা অনুভব করে।
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, এত দ্রুত তিনি চলে যাবেন ভাবতে পারিনি। সত্য কথা লিখতে দুঃসাহস ছিল তাঁর মধ্যে। তিনি তাঁর কর্মের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন।
এনামুল হক চৌধুরী বলেন, পীর হাবিব ছিলেন পলিটিক্যাল এনসাইক্লোপিডিয়া। রাজনীতির সব তথ্য তাঁর মুখস্থ ছিল।
সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, পীর হাবিবুর রহমানের লেখার অভাব অনুভব করি। তাঁর লেখাগুলো গ্রন্থাবদ্ধ করলে ভালো হবে।
শাহেদ মুহাম্মদ আলী বলেন, পীর হাবিবুর রহমান সাহসী সাংবাদিকই ছিলেন না, তিনি খুব সহজেই মানুষকে আপন করে নিতেন।
জুয়েল মাজহার বলেন, বাংলাবাজার পত্রিকায় পীর হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। অনেক চ্যালেঞ্জিং অনুসন্ধানী রিপোর্ট করতে দেখেছি তাঁকে। টিভি টকশোয় রাজনীতি নিয়ে অকপট কথা বলতেন।
জাকিরুল হক টিটন বলেন, পীর হাবিবের সঙ্গে আড্ডায় যতটুকু ছিল মজা, ততটুকু ছিল জ্ঞান। একসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। তাঁর মতো বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
মোস্তফা কামাল বলেন, আপসহীন লেখনীর মাধ্যমে তিনি এ দেশের মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু সাংবাদিকতায় বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি করেছে।