বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব পরিচয় দিয়ে প্রতারণা ও চাঁদাবাজীর অভিযোগে ০১ জনকে গ্রেফতার করেছে কেএমপি'র গোয়েন্দা পুলিশ।
জানা যায়, গত ০২ অক্টোবর অজ্ঞাত ব্যক্তি তার মোবাইল থেকে ফেনী জেলার সোনাগাজী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নবীর হোসেনকে ফোন দিয়ে নিজেকে ফেনী জেলার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয় দিয়ে সোনাগাজী বাজারে বিভিন্ন দোকানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলে জানায়। পরে তার মাধ্যমে ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মদিনা মিষ্টিমেলার দোকানের মালিক মোঃ হেদায়েত উল্যাহ’কে ফোন দিয়ে তার মিষ্টির দোকানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলে জানায়। তখন হেদায়েত উল্যাহ কথিত ম্যাজিস্ট্রেটকে তার দোকানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা না করার জন্য অনুরোধ করেন। এরপর সেই কথিত ম্যাজিস্ট্রেটকে ২,০০০ টাকা প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে তিনি পার্শ্ববর্তী দোকানদারদের সাথে আলোচনা করলে তারাও জানায়, তাদেরকেও উক্ত ব্যক্তি ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা না করার আশ্বাস দিয়ে টাকা চেয়েছেন। তখন তাদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হলে স্থানীয় সোনাগাজী বাজার বণিক সমিতির সদস্যরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা সংক্রান্তে কোন পরিকল্পনা নাই।
সিজিএম পরিচয় দিয়ে কোন অজ্ঞাত প্রতারক টাকা হাতিয়ে নেয়া বিষয়ে সন্দেহ হলে তারা তাৎক্ষনিক ভাবে সংশ্লিষ্ট সোনাগাজী মডেল থানায় বিষয়টি জানান। তৎপ্রেক্ষিতে ফেনী জেলা পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জানতে পারেন যে, উক্ত প্রতারকের অবস্থান খুলনা মহানগরী এলাকায়। পরে খুলনা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের একটি চৌকস টীম আসামী সনাক্ত ও গ্রেফতারের কার্যক্রম শুরু করে। উক্ত টীম সেই প্রতারককে সনাক্ত পূর্বক খুলনা সদর থানাধীন ১নং ইস্পাহানী লেন থেকে গ্রেফতার করে।
ধৃত প্রতারককে জিজ্ঞাসাবাদে তার নাম-সুমন সাহা (৩২), পিতা-শ্যামল কুমার সাহা, মাতা-তারা রানী সাহা, সাং-উত্তরমাছুয়া খেজুরবাড়িয়া. পোষ্ট-বড়মাছুয়া থানা-মঠবাড়িয়া, জেলা-পিরোজপুর, বর্তমান ঠিকানা- হোল্ডি নং-৪৮/৪ ১নং ইস্পাহানী লেন নাফিজউদ্দিন এর বাড়ীর নিচতলার ভাড়াটিয়া, থানা-খুলনা সদর, মহানগর খুলনা মর্মে প্রকাশ করে।
ধৃত প্রতারককে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জানায় যে, সে দীর্ঘদিন যাবৎ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), জেলা প্রসাশক, পুলিশ সুপার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভাপতি-সেক্রেটারি হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে দেশের বিভিন্ন স্থানের হোটেল, মিষ্টির দোকান, ভোগ্যপন্যের ও বিভিন্ন ধরনের দোকানদারদের ফোন দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান/মোবাইলকোর্ট পলিচালনা করার কথা বলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের আতঙ্কিত করে সুকৌশলে মোবাইল ফোন (বিকাশ/নগদ) নাম্বারে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিনব কৌশল অবলম্বন করে। সে গুগল সার্চ দিয়ে এসকল ব্যক্তিদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে তাদেরকে ফোন দেয়। এছাড়া বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উচ্চ মূলে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রিকৃত মোবাইল সিম সংগ্রহ পূর্বক তার প্রতারণার কাজে ব্যবহার করেন। গ্রেফতারকৃত আসামীর নিকট থেকে প্রতারনার কাজে ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল সেট ও দুইটি সীম উদ্ধার করা হয়।
প্রতারক আরো জানায় যে, প্রতারনার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ও সীম প্রতারণা শেষে ভেঙ্গে বা বিনষ্ট করে ফেলে। গ্রেফতারকৃত প্রতারককে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তার অপরাধকৃত কর্মের কথা স্বীকার করেছে।
তার অপরাধের প্রেক্ষিতে মোঃ হেদায়েত উল্যাহ বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করলে ফেনী জেলার সোনাগাজী মডেল থানার মামলা নং-১১ তারিখ-১৪/১০/২০২২ ধারা-১৭০/৪০৬/৪১৯/৪২০ পেনাল কোড রুজু হয়। ইতোঃপূর্বে উক্ত প্রতারক নিজেকে পিরোজপুর জেলার, মঠবাড়িয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার(ভূমি) পরিচয় মঠবাড়িয়া থানা এলাকায় বিভিন্ন দোকান থেকে বিকাশ/নগদ এর মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অপরাধে মঠবাড়িয়া থানার মামলা নং-১৬ তারিখ-১৭-০৫-২০২২খ্রিঃ ধারা-১৭০/৪০৬/৪২০ মামলা হয়েছে।