প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২২, ৯:১৩ পিএম আপডেট: ১৩.১০.২০২২ ৯:১৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
পুরান ঢাকার মানুষের দিন শেষের ক্লান্তি কাটয়ে একটু সতেজ হওয়ার সুযোগ দেয় ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক। চারদিকে গাছ-পালায় ঘেরা মনোরম পরিবেশ থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা ভোরবেলায় ও প্রাতভ্রমণ করেন এ পার্কটিতে। এছাড়াও বিভিন্ন দর্শনার্থী ও আশ-পাশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ঘুরতে আসেন। অযত্ন ও অবেহেলায় বর্তমানে করুণ দশা এই পার্কটির। এর পাশাপাশি দিন দুপুরে চলে পথ শিশুদের মাদক সেবন, যাতে নষ্ট হচ্ছে পার্কের পরিবেশ।
জানা যায়, দীর্ঘ বছর অব্যবস্থাপনায় থাকার পর পুরান ঢাকার বাসীন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের মার্চ মাসের দিকে পার্কটি নতুনভাবে সংষ্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। দীর্ঘ এক বছরের সংস্কার কাজ শেষে ২০২০ সালের ১১ই মার্চ পার্কটি উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকন। তবে উদ্বোধনের দুবছরেই তার রূপ হারিয়েছে এই পার্ক।
সরেজমিনে পার্ক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পার্কের চারপাশের ফুটপাত ঘিরে বসেছে ফলের দোকান, চায়ের দোকান, যা প্রায়শই বাধা সৃষ্টি করছে জগগণের পথচলায়। পার্কের অধিকাংশ সিঁড়গুল ময়লার কারণে বসার অনুপযুক্ত হয়ে আছে, ভেঙ্গে গেছে অধিকাংশ স্থানের টাইলস। ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য স্থাপন করা ডাস্টবিন গুলোও ভেঙ্গে পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে। পার্কের ভিতরের মূল চারটি স্তম্ভের দেয়াল গুলোয় দাগ এবং পোস্টার লাগানোর ফলে নষ্ট হয়ে গেছে এর সৌন্দর্য। পার্কটির উত্তর পাশের উঁচু বসার স্থানের দেয়ালে লোকজন নিয়মিত মুত্রত্যাগ করায় এর দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে।
এদিকে মাদকসেবী পথ শিশুদের জন্য অভয়াশ্রম হয়ে উঠছে এটি। পার্কের ভিতর দিন-দুপুরে অবাধেই চলে নিয়মিত মাদকসেবন। ফলে এ মাদক সেবনকারীদের দ্বারা প্রায়ই চুরি-ছিনতাইয়ের শিকার হন পথচারীরা। সবদিক মিলেয়েই ঐতিহ্যবাহী এ বাহাদুর শাহ পার্কটি তার অতীত জৌলুশ, সুন্দর পরিবেশ ও সুনাম হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সকালে প্রাতঃভ্রমণে আসা স্থানীয় বাসিন্দা শাহীন বাদশা পার্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পার্কটিতে এখন আর সেই আগের পরিবেশ নেই। ময়লা, আবর্জনায় এর পরিবেশটাও নোংরা হয়ে গেছে। ঠিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না। মাদকসেবী ও উশৃঙখল ছেলে-পেলেদের জন্য তো এখানে এখন আসাই দায়। মাঝে মাঝেই মারামারি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। শত বছরের এ পার্কটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে দ্রুত এর যথাযথ পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৫৭ সালের আগে পর্যন্ত পার্কটি ভিক্টোরিয়া পার্ক নামে পরিচিত ছিল। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর এক প্রহসনমূলক বিচারে ইংরেজ শাসকেরা ফাঁসি দেয় অসংখ্য বিপ্লবী সিপাহিকে। তারপর জনগণকে ভয় দেখাতে সিপাহিদের লাশ এনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এই ময়দানের বিভিন্ন গাছের ডালে। ১৯৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের শতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে পার্কের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় "বাহাদুর শাহ পার্ক"।