সিইসি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টায় আজকের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা নির্বাচন কমিশন ভবনে একটি পর্যবেক্ষণ কক্ষ করেছি। পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছি। আমরা কেন্দ্র থেকে এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি।
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারাও একটা সময় আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। আপনারা দেখেছেন। আমরা প্রথম থেকে লক্ষ করেছি—ভোটগ্রহণে অনিয়ম হচ্ছে। অনেক কেন্দ্রে আমরা গোপন ভোটকক্ষে অবৈধ অনুপ্রবেশ লক্ষ করেছি। অবৈধভাবে প্রবেশ করে ভোটারদের ভোট প্রদানে সহায়তা করছে, অথবা বাধ্য করছে। এটা আমরা সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করেছি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা দেখেছি, সম্ভবত পোলিং এজেন্ট, তাদের গায়ের গেঞ্জিতে নির্বাচনের প্রতীক ছাপানো ছিল। মেয়েদের একই রকমের শাড়ি নাকি একই রকমের ওড়না ছিল, যেটা নির্বাচন আচরণবিধি পরিপন্থি।
সিইসি বলেন, আমরা সহকর্মীরা সকাল ৮টা থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে এটি পর্যবেক্ষণ করেছি, আমরা কেউ কক্ষ ত্যাগ করেনি। অনিয়ম এবং অবৈধ কাজগুলো বেশ মোটা দাগে হয়েছে। যার ফলে আমরা প্রথমে তিনটি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছি। এরপরে ১৬টি কেন্দ্র এবং তৃতীয় দফায় আমরা ১২টি কেন্দ্র বন্ধ করেছি। চতুর্থ দফায় কয়টি এবং সর্বশেষ আরও তিনটি মোট ৪৩টি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দিয়ে আমরা সাড়ে ১২টায় পর্যবেক্ষণ কক্ষ ত্যাগ করেছি। এ সময় আমরা অফিসারদের দায়িত্ব দিয়ে এসেছি। এ সময় আমরা লক্ষ করলাম—আমাদের কতগুলো কেন্দ্রে সিসিটিভি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে আমরা তথ্য সংগ্রহ করতে পারছিলাম না।
তিনি আরও বলেন, কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষাপটে পরে আমরা আরও সাতটি ভোটকেন্দ্র বন্ধ করি। মোট ৫০টি ভোটকেন্দ্র বন্ধ করা হয়। এছাড়া রিটার্নিং অফিসারও একটি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করেন। বিষয়টি আমরা কমিশনের সব সদস্য বসে পর্যালোচনা করতে থাকি। আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করতে থাকি। আমরা নিশ্চিত হই—৫০টি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ হয়ে গেলে বাকি যেসব কেন্দ্রে থাকে, সেখানকার পরিবেশ বিচার করে সঠিক মূল্যায়ন হবে না।
সিইসি বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে ভোটগ্রহণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কোনও একটি পক্ষ বা কোনও একটি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রভাবিত করতে পারছেন। ফলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে ইমপার্শিয়ালি, ফেয়ারলি ভোটগ্রহণ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ৫১টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধের পর আইন-কানুন পর্যালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, আরপিওর ৯১ অনুচ্ছেদে যে দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আরপিওর ৯১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কমিশনের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় ভোটগ্রহণ সঠিকভাবে হচ্ছে না, ফেয়ারলি হচ্ছে না, তাহলে নির্বাচন কমিশন সব ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দিতে পারে। আমরা পরিশেষে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পুরো নির্বাচনি এলাকা গাইবান্ধা-৫-এর ভোট কার্যক্রম আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং সিদ্ধান্ত রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওখানে এখন আর ভোট হচ্ছে না। পরবর্তীকালে আমরা দেখবো বিধিবিধান অনুযায়ী কী করতে হবে। আমরা কমিশন বসে আইন-কানুন পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।
একটি আসনে ভোট করতে গিয়ে এই অবস্থা, ৩০০ আসনে ভোট হলে কী হবে, অনেকেই প্রশ্ন করছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘এটা অনেকেই করবে। তবে এটা সময় বলে দেবে। এখন একটি আসনে সঠিক হচ্ছে না বলে ৩০০ আসনে হবে সেটি বলা সমীচীন হবে না। এই নির্বাচন থেকে আমরা কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে পারবো। আগামী নির্বাচনগুলো যেভাবে সুন্দর-সুষ্ঠুভাবে করতে পারি, তার একটি নির্দেশনা এখানে পাওয়া যাবে। কাজেই ভবিষ্যতেরটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে।
এই নির্বাচনের কী পুনরায় তফসিল হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবো এবং যে সিদ্ধান্ত নেবো সেটা আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইভিএমের বিষয় নয়, এটি হচ্ছে হিউম্যান এলিমেন্ট। এখানে আমরা যান্ত্রিক বা মেকানিক্যাল কোনও সমস্যা দেখিনি। ভোটে ইভিএম কোনও সমস্যা সৃষ্টি করেনি। ভোটকেন্দ্র প্রিসাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনি কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
কাদের কারণে এই অবস্থা হয়েছে এ বিষয়ে আমরা এখনও সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি বলে সিইসি জানান।
গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের উপনির্বাচনে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন—আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. মাহমুদ হাসান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবার রহমান।