#ইতিহাস গড়েছে ৬ লেনের মধুমতি সেতু: অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন। #বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয়েছে কালনা সেতু: অধ্যাপক কর্ণেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দীন।
নড়াইলের লোহাগড়ার মধুমতী নদীর ওপর নির্মিত বহুল প্রত্যাশিত মধুমতী কালনা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কালনা সেতু চালুর ফলে যশোর, বেনাপোল, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, মাগুরাসহ পাশের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বদলে যাবে। খুব সহজেই রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যাতায়াত করা যাবে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৮৫৩তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন, রাপত্তা বিশ্লেষক ও কলামিস্ট, পরিচালক, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর অধ্যাপক কর্ণেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দীন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন বলেন, নড়াইলের লোহাগড়ার মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত বহুল প্রত্যাশিত মধুমতি কালনা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুর ১টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর থেকে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। উদ্বোধনের পর সেতুটি দিয়ে পায়ে হেঁটে পার হতে মানুষের ঢল নামে। সেতুটির জন্য মুখিয়ে ছিলেন সেতু কর্তৃপক্ষসহ গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ এবং যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহন সংশ্লিষ্টরা। কালনা দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। নেলসন লোস আর্চ ধরনের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। এশিয়ান হাইওয়ের ওপর অবস্থিত এটি। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কোলকাতা পর্যন্ত সরাসরি যোগাযোগে ভূমিকা রাখবে। কালনা সেতু চালু না হওয়ায় এতদিন নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, নোয়াপাড়া শিল্পনগর, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরসহ আশেপাশের কয়েকটি জেলার লোকজন পদ্মা সেতুর সরাসরি সুফল পাননি। কারণ, কালনাঘাটে এসে ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সবধরনের যানবাহনকে। কালনা সেতু চালুর ফলে যশোর, বেনাপোল, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, মাগুরাসহ পাশের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বদলে যাবে। খুব সহজেই রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যাতায়াত করা যাবে। দেশের ইতিহাসে সার্ভিস লেনসহ ৬ লেনের সেতু এটিই প্রথম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে উপহার দিয়েছেন এটি।
অধ্যাপক কর্ণেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয়েছে আরেকটি পালক" কালনা সেতু "। এ দেশের সর্ব প্রথম ছয় লেনের একটি সেতু। রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার সড়কপথে যোগাযোগের জন্য নির্মিত কালনা সেতু আজ উদ্বোধন হয়েছে। এটি বদলে দেবে নড়াইল সহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পর্যটন, কৃষি ও অর্থনীতি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা থেকে বেনাপোল, যশোর, নড়াইল ও লোহাগড়া রুটে নিয়মিত বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। তাছাড়া এ অঞ্চলের ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন পন্যবাহী যানবাহনও এই পথে চলাচল শুরু করেছে। এই মহাসড়কটি ইতিমধ্যেই দেশের ব্যস্ততম সড়কে পরিণত হয়েছে। এর ফলে বদলে যাবে নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পর্যটন, কৃষি ও অর্থনীতি। নড়াইল ও গোপালগঞ্জকে বিভক্তকারী নদী মধুমতীর কালনা পয়েন্টে এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৯৫৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কালনা সেতু চালুতে জেলার উদ্যোক্তারা আগে থেকেই বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন যাতে করে সেতু উদ্বোধনের পরপরই এর সুফল পাওয়া যায়। সম্প্রতি নড়াইল-যশোর আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে নড়াইল অংশে জমির দাম বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। ইতোমধ্যে বেঙ্গল গ্রুপ, কিষান গ্রুপসহ কয়েকটি কোম্পানি জমি কিনেছে। নড়াইল অংশে গড়ে উঠেছে কয়েকটি কলকারখানা। নড়াইল সদরের ধোপাখোলা এলাকায় মহাসড়কের পাশে ৩৫০ একর জমিতে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তুলতে অধিগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) নড়াইল জেলা কর্তৃপক্ষ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইল কার্যালয়ের উপপরিচালক (ডিডি) দীপক কুমার রায় জানান, কালনা সেতু চালু হলে কৃষি পরিবহণ ও বিপণন সহজ হবে। চাঙা হবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এর সুফল পাবে নড়াইলের কৃষক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। জেলা শহরের অদূরেই বিসিক শিল্পনগরী হতে যাচ্ছে। এসবের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। নড়াইল জেলা একটি সম্ভাবনাময় জেলা। কালনা সেতু চালুর মাধ্যমে এলাকার চিত্র পাল্টে যাবে।