প্রজণন বৃদ্ধির লক্ষে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও সমুদ্রে ইলিশ মাছ আহরনের উপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার সময়ে ভিনদেশী বিশেষ করে ভারতীয় জেলেদের উৎপাত দেখা যায়। মাছ ধরতে এসে ধরাও পড়েন তারা। তবে এইসব ভিনদেশি জেলেদের দাবি, সমুদ্রে বাতাসের তোড়ে তারা বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়েন। তাদের দাবির প্রসঙ্গে বাংলাদেশের জেলেরা বলছেন, তারা মিথ্যা অযুহাত দিচ্ছেন। বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে মাছ ধরার ওপর যখন নিষেধাজ্ঞা থাকে সেই সময় ইচ্ছে করেই তারা (ভারতীয় জেলে) বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যান।
তারা আরও অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের আগ্রাসনে নিষিদ্ধ সময়ে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি নয় বরং মাছ শুণ্য হয়ে পড়ছে। তাই ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়কাল পরিবর্তন এবং বাংলাদেশের জলসীমায় আটক ভিনদেশী জেলেদের সাজা বাড়াতে হবে।
উপকূলীয় এলাকা বরগুনা জেলা মৎস্যজীবি ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের এখানে যখন ইলিশ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় তখন ভারতে নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়। এই সময়টাকেই কাজে লাগিয়ে কৌশলে ভারতের জেলেরা আমাদের এখানে ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যায়’। তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের ২২ নিষেধাজ্ঞা চলছে, কিন্তু ওদের (ভারত) ওখানে নিষেধাজ্ঞা নাই। একই সময়ে দুই দেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য অনেক আন্দোলন করেছি কিন্তু কোনও সুফল হয়নি বলেও আক্ষেপ করেন তিনি।
এদিকে ইলিশ মাছের প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলতি মাসের ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ মাছ আহরন ও বিপনন করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। এর ফলে বেকার হয়ে পড়েছে মোংলা উপকুলের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত প্রায় ১৫ হাজার জেলে। এসব জেলেরা বলছেন, মৎস্য সম্পদ বাড়াতে বারবার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ফলে ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা।
মোংলা উপজেলা জাতীয় মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি বিদ্যুৎ মন্ডল বলেন, নিষিদ্ধ সময়ে সাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় চলে ভীনদেশী জেলেদের অগ্রাসন। তাই পাশ^বর্তী দেশ গুলোর সাথে মিল রেখে ইলিশে নিষেধাজ্ঞা সময়কাল ঠিক করা উচিৎ।
এ প্রসঙ্গে মোংলা উপজেলা জেষ্ঠ্য মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, পার্শবতী দেশগুলোর সাথে মিল রেখে সমুদ্রে মাছ আহরন বন্ধের সময় নির্ধারন করার দায়িত্ব মৎস্য গবেষনা অধিদপ্তরের। আর বাংলাদেশে আটক ভিনদেশী জেলেদের সাজা ও জরিমানা বাড়ানোর কার্যক্রম চলছে বলেও জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপকূলের একাধিক জেলেরা বলেন, নদী-সাগরে মৎস্য সম্পদ বাড়াতে বাংলাদেশের জলসিমায় ভিনদেশী জেলেদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। তারা নিষেধাজ্ঞার সময়ে আমাদের দেশে মাছ শিকার করে নিয়ে যান। মাঝে মধ্যে নৌ বাহিনী এবং কোস্টগার্ডের হাতে আটক হলেও পরে তারা জামিনে বেরিয়ে আবার একই কাজে নেমে পড়েন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তব্যরত ব্যক্তিদের আরও কঠোর হওয়ার দাবি জানান তারা।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মোংলা সদর দপ্তর) স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মহিউদ্দিন জামান বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময়ে ভিনদেশি জেলেরা অসৎ উপায়ে দেশীয় জলসীমায় ঢুকে মাছ শিাকারে আসে এটা সত্য। কিন্তু তার সংখ্যা খুবই কম’। তবে তাদের ঠেকাতে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের ১২ টি ষ্টেশন ও আউটপোষ্টের সদস্যরা যৌথ অভিযানে খুবই তৎপর রয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নিরাপদ সমুদ্র সীমা নিশ্চিত করতে কোস্টগার্ডের ইনশোর পেট্রোল ভ্যাসেলসহ বিভিন্ন জাহাজ টহলে থাকে।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মহিউদ্দিন জামান আরও বলেন, বাংলাদেশে ইলিশ আহরনে নিষেধাজ্ঞার সময়ে কোনও ভিনদেশি জেলেরা যাতে দেশীয় জলসীমায় না ঢুকতে পারে সে ব্যাপারে ভারতের কোস্টগার্ডের ‘নর্থ ইষ্ট রিজিয়ানে’র কমান্ডেন্ট বিবেক শর্মার সাথে গত বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) কথা হয়েছে। তিনি বিবেক শর্মাকে নিষেধাজ্ঞার সরকারি প্রজ্ঞাপন এবং কিছু লিফলেট দিয়ে বলেছেন, এই সময়ে তাদের (ভারত) কোনও জেলে বাংলাদেশের জলসীমায় যেন প্রবেশ না করে। এজন্য যেন তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করে এবং যদি তা না করে তাহলে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে বলেও জানান তিনি।