প্রকাশ: শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০২২, ৮:১৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
নীল আকাশে সাদা মেঘ আর নদীর বুকে দোল খাওয়া কাঁশবন মনে জাগায় অন্য রকম অনুভূতি। কুড়িগ্রামের বিস্তৃত চরাঞ্চল ঢেকে গেছে কাশ ফুলে।সদর উপজেলা ভোগাডাঙ্গা ইউনিয়নের ধরলা নদীর জগমনির চরে দোল খাচ্ছে কাঁশ বন।শুধু ধরলার চরেই নয় এ চিত্র এখন কুড়িগ্রাম জেলার ১৬টি নদ নদীর সাড়ে চারশত চরাঞ্চলের বুকে।এই কাঁশবন গুলো শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলে নি, কাশগাছ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকেই।এ কাশবন শুধু বিনোদনের জন্য নয় কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলবাসীর অর্থনৈতিক উন্নয়েন ব্যাপক ভুমিকা রেখেছে।
জানা গেছে,কোন প্রকার খরচ ছাড়াই এক বিঘা জমির কাশ বন বিক্রি করে ১৪-১৫ হাজার টাকা আয় করা যয়। অনাবাদী বালু চরে বন্যার পরে এস্ কাঁশ গাছ জন্মে।৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে গাছগুলো বড় হয়ে বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে। কাঁশ বন বিক্রি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন এখানকার মানুষজন।
কাঁশবন দেখতে আসা আরিফ হোসেন সঙ্গে কথা হয় তিনি বলেন, আমার বাড়ি এখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। এখানে বেড়াতে এসেছি।এসে কাশফুলের বাগান দেখলাম। খুব ভালো লাগল। পরবর্তী পরিবার নিয়ে দেখতে আসবো।
জগমনের চরের বাসিন্দা আয়নাল হক বলেন, আমার দুই বিঘা জমিতে কাঁশ বন আছে। পাঁচ থেকে ছয় মাস পর কাশ গাছের ফুল পড়ে গেলে গাছগুলো কেঁটে আঁটি বাঁধি।প্রতি হাজার আঁটি ৪ থেকে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি করা যায় বলে জানান তিনি।
ব্রহ্মপুত্র নদের কালির আলগা চরের মতিয়ার রহমান বলেন, আমার ১০ বিঘা জমিতে কাশিয়ার (কাঁশ) আবাদ হয়েছে। প্রতিবছর বন্যার পর এমনিতেই জমিতে জন্ম নেয়।আর মাত্র এক থেকে দেড় মাস পর জমির কাশিয়া বিক্রি করতে পারবো।আশা করছি এই টাকা দিয়েই ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও সংসারে খরচ চালাতে পারবো।
যাত্রাপুর ভগবতী চরের আব্দুল আজিজ বলেন, কাঁশ বনের এখন অনেক চাহিদা।১০ বছর আগে মানুষ কাঁশের ছন দিয়ে ঘর,বেড়া বানাতো।এখন তা বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে।এগুলো খুলনা ও বরিশাল বিভাগের লোকজন নিয়ে পানের বরজের কাজে লাগাচ্ছেন। অনেকে আবার কিনে ঘরের ছাউনি ও ঘরের বেড়া দেয়।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যাক্ষ মির্জা নাসির উদ্দীন বলেন, ঋতুপরিক্রমায় এখন শরৎকাল। আর সেই শরৎকালের বৈশিষ্ট্য কাশফুল। কাশফুলের আদিনিবাস সুদূর রোমানিয়ায়। এটি বাংলাদেশেরও একটি পরিচিতি উদ্ভিদ। আমাদের কুড়িগ্রামে এটি অতিপরিচিত। যেহেতু কুড়িগ্রামে ৪২০টিরও বেশি চরাঞ্চলে রয়েছে। এসব চরে এখন কাশফুলের সমারোহ। কাশফুলের ইংরেজি নাম ক্যাটকিন। কাশফুলে রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। কাশ সাধারণত শুকিয়ে খর হিসেবে গোখাদ্যর ব্যবহারও করা হয়।
তা ছাড়া গ্রামাঞ্চলে ঘরের ছাউনি, বেড়া নির্মাণ করা হয়ে থাকে। আমাদের অর্থনৈতিক ফসল পানগাছের ছাউনি ও বরজেও ব্যবহার হয়ে থাকে কাশ। আমরা জানি কাশে অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। পিত্তথলিতে পাথর হলে কাশের মূল পিশিয়ে খাওয়ানো হয়। ব্যথা বা ফোঁড়া হলে কাশের মূলের রস উপশম করে। তা ছাড়া পরিবেশ দূষণ, বিশেষ করে যেখানে শিল্প-কারখানার ছাই থাকে, সেখানে কাশ জন্ম নিলে পরিবেশ পরিশোধিত হয়।