দুর্গাপূজা, ঈদে মিলদুন্নবী ও সপ্তাহিক টানা ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে। আর এটিকে পুঁজি করে অধিকাংশ হোটেল মোটেল-এ ভয়াবহ গলাকাটা বাণিজ্য শুরু করে দিয়েছে। যদিও বা হোটেল নেতৃবৃন্দ ও জেলা প্রশাসন এর পর্যটন সেল থেকে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন পর্যটন দিবস উপলক্ষে যে ছাড় ঘোষণা করেছিলো তা বহাল থাকবে। কিন্তু এগুলো শুধু কথার উপরে কথা!। বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ছাড় তো দূরের কথা, এখন অসাধু আবাসিক হোটেল মালিকরা ২ হাজার টাকার রুম ৬থেকে ৭হাজার টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে পর্যটকদের কাজ থেকে।
আবাসিক হোটেলগুলোতে রুম ভাড়ার তালিকা টাঙানোর নিয়ম থাকলেও হোটেলগুলো তা মানছে না।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে সৈকতপাড়ের হোটেলগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সী গাল, কক্স টুডেসহ তারকামানের হোটেলগুলোতে ৪০/৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে রুম ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। সেখানে সকালে ফ্রি নাস্তাও রয়েছে। কিন্তু এই হোটেলগুলোর পাশের হোটেল অভিসারে ২ হাজার ২৫০ টাকার রুম ৭ থেকে ৮ হাজার ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রুম নিতে হলে দুই রাতের জন্য নিতে হবে বলেও জানিয়ে দিচ্ছেন তারা। একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে হোটেল গ্রেস কক্স এবং কক্স হিলটনের বিরুদ্ধেও।
পর্যটক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম থেকে কয়েকজন বন্ধু কক্সবাজার এসেছি। এখানে এসে হোটেল অভিসারে রুম ভাড়া নিতে গেলে তারা প্রতি রুমের ভাড়া সাড়ে ৮ হাজার করে বলেন। রুম ভাড়া দুই রাতের জন্য নিতে হবে বলেও জানান। একপর্যায়ে তারা ১৭ হাজার টাকা দাবি করেন। অনেক করে বলেছি আমরা সবাই ছাত্র, এতো টাকা আমাদের নেই। তারপরও তারা ছাড় দেননি। অবশেষে রুম না নিয়ে আমরা অন্য হোটেলে চলে আসি। সেখানে সীমিত মূল্যে রুম নিয়েছি এক রাতের জন্য।’
পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত রুম ভাড়া আদায়ের বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেন হোটেল অভিসারের ম্যানেজার লিটন পাল।তিনি বলেন, ‘আমাদের হোটেলে রুমের ভাড়া সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৭৫০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২ হাজার ২৫০ টাকা। এখানে অতিরিক্ত দাম নেওয়ার কোনো মানে হয় না। আমরা পর্যটক বান্ধব। এক রাতের জন্য রুম বুকিং নেওয়া হয় না বিষয়টিও সঠিক নয়। আমরা ক্ষতি এড়াতে দুই রাতের জন্য যাদের রুম প্রয়োজন তাদের প্রাধান্য দিচ্ছি।’
বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে গ্রেস কক্স হোটেলের বিরুদ্ধেও। ওই হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্ক ম্যানেজার মো. হাসান বলেন, 'আমরা সর্বোচ্চ রুম ভাড়া নিচ্ছি ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এর চেয়ে কম দামেও রুম রয়েছে আমাদের। সেগুলো ভাড়া দিচ্ছি আমরা। আমাদের ব্যাপারে ওঠা অভিযোগ সত্য নয়।’
কক্স হিলটনের ফ্রন্ট ম্যানেজার ঊর্মি বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের হোটেলে উন্নতমানের কক্ষের ভাড়া ৩ হাজার ৮০০ টাকা। সেখান থেকে ডিসকাউন্ট দিয়ে ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। নিম্মমানের কক্ষগুলোর ভাড়া আরো কম। এরপরও পর্যটকরা যদি অতিরিক্ত দামে ভাড়া নিচ্ছি বলে থাকেন তাহলে সেটা দুঃখজনক।’
এ ব্যাপারে হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ‘হোটেল রুমের ভাড়া অতিরিক্ত না নেওয়ার জন্য আগে থেকেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। হোটেলগুলোর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি। হোটেলগুলো কোন ধরনেরর রুমের ভাড়া বেশি চেয়েছে তা দেখার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘যারা অতিরিক্ত দামে হোটেল রুম ভাড়া দিয়ে পর্যটন খাতকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন তাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।