টেকনাফ নাফ নদীতে ডুবোচর তথা নাব্যতা সংকটের কারণে চলতি মৌসুমে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের দাবীতে কক্সবাজার শহর-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ চলাচল পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে। তবে শুরুতেই “গোড়য় গলদ”। কর্ণফুলী জাহাজ কর্তৃপক্ষের প্রথম দিনে মাঝ সাগরে শতাধিক পর্যটক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এসব পর্যটকের অভিযোগ, জাহাজ কর্তৃপক্ষের অবহেলা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) সকাল ৭ টায় কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে পর্যটকদের বহনকারি এমভি কর্ণফুলি এক্সপ্রেস জাহাজটি সেন্টমার্টিনের উদ্দ্যেশে রওনা দেয়।
যাত্রা দেয়ার ৩ ঘন্টা পর মাঝ সাগরে শতাধিক পর্যটক অসুস্থ হয়ে পড়ার বিষয়টি জাহাজ থেকে কয়েকজন পর্যটক সাংবাদিকদের মুঠোফোনে জানান, “জাহাজটিতে কর্তৃপক্ষের অবেহলায় “আমরা বমি করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। কারণ অপরিচ্ছন্নতা, পর্যাপ্ত এসির সংকট, উত্তাল সাগর জেনেও এতো দূর থেকে জাহাজ ছাড়া এবং জাহাজে ছিলো না কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থাও। সব কিছু মিলে জাহাজটিতে সবকিছু অবব্যবস্থাপনায় ভরপুর”। অবশেষে জাহাজটি দুপুরে সেন্টমার্টিন পৌঁছার পর অসুস্থ পর্যটকদের প্যাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুর রহিম।
এবিষয়ে এমভি কর্ণফুলি জাহাজের কক্সবাজার অফিসের ইনচার্জ হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর জানান, “তিনি কক্সবাজার রয়েছেন। জাহাজের পরিস্থিতি জেনে বলতে পারবেন। অসুস্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে অনেক সময় জাহাজে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা না থাকলে বমি হতে পারে। বিষয়টি তিনি দেখছেন বলেও জানান”।
বাহাদুর বলেন, “সকালে কক্সবাজার থেকে সাড়ে ৭ শত যাত্রী নিয়ে কর্ণফুলি এক্সপ্রেস জাহাজটি রওনা দিয়েছে। বেলা ১২ টার মধ্যে জাহাজটি সেন্টমার্টিন জেটিঘাটে পৌঁছে। আর বিকাল সাড়ে ৩ টায় যাত্রীদের নিয়ে জাহাজটি সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজারের উদ্দ্যেশে রওনা দেয়। রাত সাড়ে ১০ টার দিকে জাহাজটি কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে পৌঁচাবে।জাহাজের যাত্রীদের জন্য ১০ ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন মূল্যের টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। সর্বনিন্ম ৩ হাজার থেকে ২৮ হাজার টাকা পর্যন্ত টিকেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া “মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এবং নাফনদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে সরকার চলতি মৌসুমে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে। তবে চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল অব্যাহত থাকবে”।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অ লের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান বলেন, সেন্টমার্টিনগামী জাহাজে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বিক ব্যবস্থা নিয়েছে। জাহাজে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি দলও পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।
এদিকে বছরের প্রথম পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্টমার্টিনে পৌঁছায় খুশি হয়েছেন দ্বীপের মানুষ। তবে দ্বীপবাসী ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল না করায় চরম হতাশ হয়েছেন। বেকার হয়ে পড়েছেন অনেকে।
সেন্টমার্টিন হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল না করলে হোটেল ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। মৌসুম সামনে রেখে অনেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে হোটেল-রেস্তোরাঁ করেছেন। সেখানে একটি জাহাজে ৬০০ থেকে ৭০০ পর্যটক গেলে কীভাবে ব্যবসা করবে? তাই অতি শীঘ্রই টেকনাফ থেকেও জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে আশা তাদের।
এ নিয়ে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, আশানুরূপ জাহাজ চলাচলে অনুমতি না হলে হাজারো মানুষ বেকার হয়ে পড়বে। তাই তিনি আশানুরূপ জাহাজ চলাচলে অনুমতি দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান।
এদিকে, নাফনদের নাব্যতার কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় নতুন রুটে পর্যটকদের সেন্টমার্টিনস ভ্রমণ করাতে চায় সী-ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (স্কোয়াব) ও ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অফ কক্সবাজার (টুয়াক)। তারা মনে করেন, বিকল্প পথ হিসেবে টেকনাফের সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক সংলগ্ন সৈকতে অস্থায়ী জেটি করে পল্টুন নির্মাণ করে সেন্টমার্টিন রুটে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করা সম্ভব।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজার শহরের একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি তোলা হয়েছে। এ ব্যাপারে স্কোয়াব ও টুয়াক প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, নাব্যতা সংকটের কারণে আপাতত টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ কর্ণফুলী এক্সপ্রেস পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করেছে। অবস্থা বুঝে পর্যাক্রমে আবেদন করা জাহাজগুলোকে অনুমতি দেওয়া হবে। তবে জাহাজ কর্তৃপক্ষকে সরকারের দেওয়া নিয়মকানুন অব্যশ্যই মেনে চলতে হবে।