প্রকাশ: শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২, ৯:৩৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। ছোট বড় সবার কাছে সমাদৃত এ ফুল। যে কোনো ডোবা নালায় জন্ম নিয়ে সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। কিন্তু আফসোস! প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব, মানবসৃষ্ট প্রতিবন্ধকতায় বিলুপ্ত হচ্ছে মুক্ত জলাশয় এবং হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল। শাপলা ফুলের সেই সমারোহ আর চোখে পড়ে না। খুলনার পাইকগাছায় যদিও এখনো দু’একটি শাপলা দেখা মিললেও অচিরেই তা বিলুপ্তর পথে। শাপলাসহ অন্যান্য উদ্ভিদ বিলুপ্তির মূল কারণ বিভিন্ন জলাশয় লবণ পানির চিংড়ি চাষ। দিনে দিনে শাপলা-শালুক যেন একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
অথচ আজ থেকে ২ দশক আগেও বড় বড় দীঘিতে ও বিলের বুকজুড়ে শাপলা ফুলের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য ছিল চোখে পড়ার মতো। শরৎকালে দীঘিতে ও বিলের বুক জুড়ে প্রকৃতি অন্যরকম সাজে সেজে উঠত। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখা যেত চারদিকে ফুটন্ত সাদা এবং লাল শাপলার সমারোহ। মনে হতো এ যেন শাপলা ফুলের জগৎ। শাপলা ফুল শুধু পরিবেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে তা নয় এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। এছাড়া এ ফুলের গাছ শিকড় ও মাথা কিছুই ফেলে দেওয়ার মতো নয়। শাপলার নরম ডাঁটা, মাথা ও গোড়ায় জন্ম নেওয়া ড্যাপ এবং শালুক সবই মুখরোচক পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান। শাপলার গাছ বা ডাঁটা পানির গভীরতায় ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। তাছাড়া মাছ-মাংস রান্নায় উৎকৃষ্ট তরকারি হিসেবে এর ডাঁটা বেশ জনপ্রিয়। শালুক আগুনে পুড়িয়ে কিংবা সেদ্ধ করে খাওয়া হয়। আগের দিনে শরতের শেষে পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিলজুড়ে শালুক তোলার ধুম পড়ে যেত। শালুক পোড়া গন্ধ এখনও প্রবীণদের শৈশবের কথা মনে করিয়ে দেয়। শাপলা, পদ্ম সাধারণত দিঘি বা বিলে ফুটে থাকে। তখন গ্রামের ছেলে-মেয়েরা সাঁতার কেটে এই ফুল তুলে আনত। শাপলাকে দু’ভাবে কেটে কেটে মালার মতো করে শিশু কিশোররা একজন অপরজনের গলায় পরিয়ে দিত। রসবোধ সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে মহাকালের অতল গহ্বরে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু ব্যাপক পরিবর্তন বিশেষ করে লবণাক্ত বৃদ্ধিতে উপজেলায় শাপলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্ত হচ্ছে। এছাড়া আবাদি জমিতে অপরিমিত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগে অনেক শাপলা বীজ বা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা মা শালুক বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন করে শাপলার গাছ জন্ম হচ্ছে না। এখন শরৎকাল শেষ হলেও বড় বড় দীঘি ও জলাশয়ে উপজেলার কোথাও সেই আগের মতো শাপলা-শালুকের দেখা মেলে না। জলজ উদ্ভিদ শাপলা আজ বিলুপ্তির পথে।