প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৪:০২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
চাকরিজীবনের শেষ কর্মদিবসে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, বিভিন্ন অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, আমাদের দেশে এক ধরনের নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট চর্চা ছিল; বা এখনও আছে। এক শ্রেণির মানুষের নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট চর্চায় যারা আমাকে অন্যায়ভাবে, অযোক্তিকভাবে তাদের বিপক্ষে আবিস্কার করেছেন, তাদের প্রতি আজ আমি বলতে চাই; কোনো অভিযোগ নাই, কোনো অভিযোগ নাই। তারাও ভালো থাকবেন, সে প্রত্যাশা করি। কারণ, সবাইকে মিলেই আমার এই ভালোবাসার বাংলাদেশ। সবাইকে নিয়েই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
আগামী শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আইজিপি বেনজীর আহমেদ দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৩৪ বছরের পুলিশের কর্মজীবন শেষে অবসরে যাচ্ছেন। অবসরে যাওয়ার আগে শেষ কর্মদিবসে নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের নানা অর্জনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, আমার ৩৪ বছর ৫ মাস ১৬ দিন কর্মজীবনের মধ্যে ২০১০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ১২ বছর পুলিশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদে দায়িত্ব পালন করেছি। ডিএমপি কমিশনার, র্যাব ডিজি ও সর্বশেষ আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনারা সমর্থন জুগিয়েছেন, দেশবাসীও সমর্থন জুগিয়েছেন। তাই সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এ সময়ের মধ্যে যা কিছু অর্জন, সব রাষ্ট্রের ও রাষ্ট্রের মানুষের। আর যা কিছু ব্যর্থতা সব দায় আমার।
চাকরি জীবনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব চ্যালেঞ্জই চ্যালেঞ্জ। যতক্ষণ না পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম না করতে পারবো ততক্ষণ পর্যন্ত সেটাই নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ। আপনারা মনে করতে পারছেন কিনা ফরমালিনের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম। ম্যাজিস্ট্রেটদের সহযোগিতা নিয়ে শত শত টন ফরমালিন মেশানো মাছ-মাংস-ফল-সবজি ধ্বংস করে জাতিকে ফরমালিনমুক্ত খাবার উপহার দিয়েছি। ওই সময়ে দেশে বছরে প্রায় ৭০০ টন ফরমালিন আমদানি হতো। এখন আমদানি হয় কম-বেশি ১০০ টন। এছাড়া সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করা আরেকটি চ্যালেঞ্জ ছিল। এ সমস্যা প্রায় ৪০০ বছরের, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪০ বছর পর্যন্ত দস্যুরা সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। সুন্দরবনে যারা জীবিকা নির্বাহ করতো তারা দস্যুদের কাছে জিম্মি ছিলেন। মৌসুমের সময় নিয়মিত অপহরণ হতো সাধারণ মানুষ। আমরা তিন ডজন ডাকাতকে আত্মসমর্পণ করিয়েছি।
দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাকে সফলতা ব্যর্থতার মাপকাঠি হিসেবে না দেখি। আমি দেখতে চাই অর্জন কতটা হয়েছে, আর অর্জনের কী বাকি আছে? অর্জনের বিষয়টা হচ্ছে একটা প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া কখনো শেষ হবার নয়। আমি দৌড়িছি, এখন আমার সহকর্মীর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর হলে তিনি দৌড়াবেন। থিউরি অব পারফেকশন বলে পৃথিবীতে কোনো কিছুই পারফেক্ট না। মানুষের মানবিক সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের যা কিছু করতে হয় মানবিক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েই করতে হয়।
কক্সবাজারের কাউন্সিলর একরাম নিহত হওয়ার ঘটনার সময় র্যাবের মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদ। একরামের নিহত হওয়ার ঘটিনাটি তাকে অনুতপ্ত করে কিনা জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, এ বিষয়টি একটি লিগ্যাল বিষয়। যে পর্যন্ত বিষয়টি অন্যায্য বা অনৈতিক প্রমাণিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে আমার অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমার ব্যক্তিগত ক্যাপাসিটিতে ঘটেনি, ঘটনাটি ঘটেছে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার ফিল্ড লেভেলের লোকজনের মাধ্যমে। যেই ভদ্রলোক নিহত হয়েছেন তার সঙ্গে ওই মাঠ পর্যায়ে লোকজনের ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ ছিল না। তাই বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে আমরা একটি বিষয় দেখি আমাদের কোনো সহকর্মী দায়িত্বের বাইরে গেছে কিনা। কেউ যদি দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কাজ করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। একরামের বিষয়েও একাধিক তদন্ত হয়েছে।
পুলিশের মধ্যে মানবাধিকার উন্নয়নের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশকে মানবাধিকার প্রশিক্ষণ দেবে বলে এদেশের এনজিওগুলো শত শত কোটি টাকা নিয়ে এসেছে। এখন এ হিসাব বের করলে দেখা যাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা হবে। এসব টাকা আমরা আনিনি এনেছে এনজিওগুলো পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। এনজিও কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, তবে যখনই তারা ডেকেছে পুলিশ গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। পুলিশের মানবাধিকার প্রশিক্ষণ সব সময় দেওয়া হয়। এছাড়া সরকার থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে পুলিশের জবাবদিহিতা আছে।
অবসরে যাওয়ার পর কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ পর্যন্ত দায়িত্বে আছি। অবসর নেব আগামীকাল। আগামীকালের পরে অবসর নিয়ে ভাববো। তবে অবসরের পর এ সমাজের অংশ হিসেবে মানুষের সঙ্গে বসবাস করবো বাকি সারাটা জীবন।
অনেকে বলে ড. বেনজীর আহমেদ চাকরি জীবন শেষে রাজনীতিতে আসবেন, তিনি রাজনৈতিক নেতাদের মতো বক্তব্য দেন। এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, আমি তো এমন কথা কখনো বলেনি। অন্যের বক্তব্যের বিষয়ে আমি কোনো উত্তর দিতে আগ্রহী না।
বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে অনেক সময় মানুষ মারা যায়, এ বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো আনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমাদের প্রাথমিক ও প্রধান লক্ষ্য থাকে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য। এর জন্য আমাদের হাতে অস্ত্র থাকে। এছাড়া এসব ঘটনার বিষয় নির্বাহী ও বিভাগীয় তদন্ত হয়।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ পুলিশের দুটি বিষয় বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কীভাবে আমরা সফলভাবে করোনা ক্রাইসিস অতিক্রম করেছি এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের সাফল্যের বিষয়ে সবাই জানতে চায়। কিছুদিন আগে জাতিসংঘে কাউন্টার টেরোরিজম ডিপার্টমেন্ট আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে, আমরা কীভাবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সফল হয়েছি।