প্রকাশ: শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৯:২৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
কোন অবস্থাতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ায় বিভিন্ন বাসা বাড়িতে দেওয়া অবৈধ গ্যাস সংযোগ। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আধারে গ্যাস চোর সিন্ডিকেট নিম্ন মানের পাইপ দিয়ে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে। যার ফলে বৈধ গ্রাহকরা গ্যাসের প্রেসার কম পাচ্ছেন। গ্যাস চোর সিন্ডিকেট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ না করায় দিন দিন বাড়ছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। এসব অবৈধ সংযোগ দিয়ে প্রতিমাসে গ্যাস ন্ত্রাসীরা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এতে অপচয় হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ তিতাস গ্যাস।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে জানান, গত কয়েকদিন যাবৎ আশুলিয়ার কাঠগড়া.জামগড়া.চিত্রশাইল,তাজপুর,বাংলাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় এক শ্রেণীর প্রতারক চক্র রাতের আধারে বিভিন্ন বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা নিয়ে তিতাসের মুল লাইন থেকে নিম্ন মানের পাইপ দিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদান করে। যার ফলে বৈধ গ্রাহকরা ও বিভিন্ন গার্মেন্টসে গ্যাসের প্রেসার কম দেখা যায়। পরে এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিত্বে বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার বাসা বাড়ির অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন করে সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু সাদাৎ মোহাম্মদ সায়েম। অভিযানের সময় কয়েক হাজার নিম্ন মানের পাইপ ও রাইজার জব্দ করা হয়। প্রতিনিয়ত যে সব এলাকায় গ্যাসের লাইন সংযোগ বিছিন্ন করা হয়েছে এর আগে বেশ কয়েকবার সেখানে গ্যাসের লাইন বিছিন্ন করে কর্তৃপক্ষ। কোন অবস্থাতেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ করতে না পারায় সাভার তিতাস গ্যাস অফিসের কর্মকর্তারাও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। শ্রমিকদের দিয়ে রাষ্ট্রীয় টাকা খরচ করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন করণ কার্যক্রমে কোন সুফল মিলছে না। এদিকে নিম্ম মানের অবৈধ পাইপ দিয়ে গ্যাস সংযোগ দেওয়ায় বিভিন্ন বাসা বাড়িতে বিস্ফোরণ ও অনেক সময় মানুষ হতাহতের ঘটনাও ঘটছে।
দেখা গেছে, প্রতি বছর সরকারী অর্থ ব্যয় করে লক্ষ লক্ষ অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তারপরেও রয়ে যায় এসব অবৈধ সংযোগ। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের অনেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও কর্মচারীরা এই অবৈধ সংযোগের মূল হোতা বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে, সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গত বছর অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান পরিচালনা করা হয় ৪২টি। প্রতিটি অভিযানে ব্যয় হয়েছে ৯৩ হাজার ৯০ টাকা। ১২৩টি স্পটে এসব অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ৭৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। জব্দ করা হয় ৫৭ হাজার ৪৮০টি বিভিন্ন সাইজের পাইপ ও ৪৩ হাজার ৩১৮টি বার্নার। প্রতিটি বার্নারে মাসিক ৯৭৫ টাকার গ্যাস রক্ষা হয়েছে। এসব অভিযানে আড়াই হাজারের বেশি অভিযুক্তকে আসামি করে ১২টি মামলা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৩ জনকে গ্রেফতার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল দেওয়া হয়।
এবিষয়ে সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী (জোবিঅ) আবু সাদাৎ মোহাম্মদ সায়েম বলেন,অবৈধ গ্যাস সংযোগ কারীদের বিরুদ্ধে সাভার ও আশুলিয়ায় প্রায় দশটিরও বেশী মামলা দায়ের করা হয়েছে কিন্তু তার পরেও অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া থেমে নেই। তাই তারাও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ কারীদের বিরুদ্ধে মামলা হলে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু অবৈধ গ্যাস সংযোগের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অবৈধ সংযোগের শেকড় রয়ে গেছে। কেউ যদি কোন বাসা বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদান করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।