রাজধানীর পল্লবীর সাংবাদিক আবাসিক এলাকার গেটের চায়ের দোকানি মামুন মিজি (৪০)। শুক্রবার তাকে তার বোনের একটি ঝামেলা মিটমাট করার কথা বলে দোকান থেকে পাশের এলাকায় নিয়ে যান পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জহির আহমেদ। পরে সেখান থেকে গাড়িতে তুলে তাকে থানায় নেওয়ার পর জানতে পারেন তার নামে মারামারির মামলা হয়েছে। এরপর থানায় আটকে তাকে নির্যাতনের একপর্যায়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে মামুনকে অচেতন অবস্থায় পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে তার জ্ঞান না ফিরলে তাকে নেওয়া হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। সেখানেও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। গতরাতে হাসপাতালে এমন অভিযোগ করেন মামুন মিজির স্ত্রী শারমিন আক্তার।তিনি বলেন, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার স্বামী জ্ঞান হারালে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ।
শুক্রবার রাতে মামুন মিজির গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম বলেন, মামুনকে মারধর করা হয়নি। হাসপাতালে নিয়ে গেলে মামুন অসুস্থতার নাটক করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, মামুনের নামে মামামারির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। পরে সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে বুকের ব্যথার নাটক করছে। প্রথমে তাকে স্থানীয় কিংস্টন হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা বলেন কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তার অসুস্থতার কথা বলায় আবার সোরওয়াদি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সেখানেও চিকিৎসকরা ইসিজি করার পরে একই কথা বলেন।
তারপরেও আমরা হাসপাতালে ভর্তি করে রাখছি। শনিবার সকালে কোর্টে চালান করে দিবো বলে জানান এই কর্মকর্তা।
মিজির স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, গত ১১ সেপ্টেম্বর এলাকার কয়েকজন মহিলা ঝগড়া করেছে। তার মধ্যে মামুনের এক বোন ছিলেন। ঝগড়া করে না পেরে আমার স্বামীর দোকানে এসে মারপিট করে। পরে থানায় গিয়ে জিডি করতে চাইলে পুলিশ জিডি নেননি। এরপর রানু ওরফে রিনা নামের এক নারী থানা থেকে এসআই জহিরকে আনেন। ওই দিন হুমকি-ধামকি দিয়ে চলে যায় জহির।
শুক্রবার দুপুরে আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে দোকান খুলি। পরে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায় এসআই জহির। ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় সে সুস্থ ছিলেন। দুপুরে থানায় খাবার খাইয়েছে পুলিশ। বিকালে খবর পাই বুকে ব্যথা উঠেছে। আমি থানায় যেতে যেতে পুলিশে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
পরিবারের অভিযোগ, পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে মিজি এখন পুলিশের তত্ত্বাবধানে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অচেতন অবস্থায় আছেন। ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় রিমান্ডে নেয়া হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।
স্থানীরা জানান, মামুনকে পল্লবীর কিংস্টন হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। দিন কয়েক আগে ওর বোনের সাথে আরেক মহিলার হাতাহাতি হয়। যদিও ওর বোনের নামে এলাকায় নানা অভিযোগ আছে। তবে এ নিয়ে ওরা চার ভাই-ই বিব্রত। সেই হাতাহাতির পর এক মহিলা এসে হঠাৎ করে মামুনের দোকানে এসে লোহার পাইপ দিয়ে কয়েকজন সাংবাদিকের সামনেই মামুনকে বেধড়ক পিটিয়ে যায়।
তারা বলছেন, এ ব্যাপার মামুন পল্লবী থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করে। কিন্তু সেটি আমলে না নিয়ে উল্টো সেই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে আজ ধরে নিয়ে যায়। এরপর সেখানে পুলিশি নির্যাতনে এখন সে অচেতন।
জানা গেছে, শরিয়াতপুর নড়িয়া থানার মামুন মিজি তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। আর সাংবাদিক আবাসিক এলাকার গেটে ১৫ বছর ধরে চায়ের দোকান চালান।
পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জহির বলেন, মিজির বোন ও তার ছেলে মেয়ের নামে এলাকায় অনেক অভিযোগ আছে। এছাড়া তারা মাদক ব্যবসায়ী। তাদের নামে একাধিক মাদক মামলা আছে। কিন্তু মামুনের নামে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কিন্তু মারামারি ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
থানায় মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে এসআই জহির বরেন, এটা মিথ্যা কথা। এখানে মারপিট করার কোনো সুযোগ নাই। নিজেদের বাঁচানোর জন্য এসব কথা বলছে তার পরিবার।