কেউ হত্যা মামলার মতো বড় অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত, কেউবা ডাকাতি মামলায়, আবার কেউ মন্দির ভাঙচুরের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় সংগঠন থেকে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কার হয়েছিলেন। তবে এসব কোনো কারণই তাদের জন্য ছাত্রলীগের বড় পদ পেতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বিশেষ কোনো স্বার্থে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের গ্রুপ থেকে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছেন ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত। এই আরাফাতের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসির নিচ তলায় অবস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপসনালয়ে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি মাদকসহ গ্রেপ্তার হওয়া আসামিকে পুলিশের কাছে ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। এমনকি ইবি ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার আগেই ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের বিরুদ্ধে পুরো ক্যাম্পাসে মাদকের রমরমা ব্যবসার খবর দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতকে সভাপতি এবং নাসিম আহমেদ জয়কে সাধারণ সম্পাদক করে ২৪ জনের কমিটি কমিটির অনুমোদন দেন জয় ও লেখক। ৩১ জুলাই রাতে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে দেয়া এই কমিটি অনুমোদনের ক্ষেত্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শই করেনি। এমনকি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের নিজ নির্বাচনী এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া স্বত্বেও তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। এ কারণে কমিটি হওয়ার পরও নতুন নেতৃত্বের সাথে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলেও বিতর্কিত সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়কে তিরষ্কার করে বের করে দেন ওই নেতা।
তবে ভোরের পাতার কাছে বিশ্বস্ত একটি সূত্র নিশ্চিত করে জানিয়েছে, বিতর্কিত ফয়সাল আহমেদ সিদ্দিকীকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি করতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের ব্যাক্তিগত কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া আমজাদ হোসেন রাজু নামের একজন ফয়সাল আহমেদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। এ বিষয়টি জানার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে রাজুকেও তিরষ্কার করেছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও তিনি বিষয়টা জানিয়েছেন। এমনকি ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতাকেও জানানো হয়েছে।
বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কয়েকদিন পর পর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীকে পর্যন্ত হেনস্তা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসারসহ বিভিন্ন নিয়োগে উপাচার্যকে চাপে রাখতেই ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছে আরাফাত এবং তার অনুসারীরা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখার নতুন কমিটির নেতার বিরুদ্ধেও ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। ইবিতে ২৪ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটির সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিক আরাফাত হত্যাচেষ্টা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি।
বিগত কমিটির সহ সম্পাদক আরাফাতকে ২০১৬ সালের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মন্দির ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত থাকায় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
এর প্রায় ২ বছর পর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে, মাদক নেওয়ার অভিযোগে আটককৃত তার কয়েক অনুসারীকে পুলিশ ভ্যান থেকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এরপর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইবি শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রকিবুল ইসলামকে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি করা হয় আরাফাতকে।
ভোরের পাতার অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতকে সভপতি বানাতে কুষ্টিয়ার আমজাদ হোসেন রাজুর পাশাপাশি বিপ্লব হাসান পলাশ নামের একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতাও অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন।
এসব বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের বিরুদ্ধে নানা সময় বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে। আমি এবং আমার সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কথা দিয়েছি, তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।
এসব বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিতর্কিত সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উল্লেখ করে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি তার প্রতিউত্তর করেননি।