শুনতে অবাক লাগলেও এমনই হয়েছে সোনালী শিরোপা নিয়ে ঘরে ফেরা চ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে। চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের বসার জায়গা ছিল না বিশাল অর্জনের জানান দেওয়ার এই সংবাদ সম্মেলনে, কোচ ছোটও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থেকেছেন। অথচ ছাদখোলা বাসে তপ্ত রোদে পুড়ে কয়েক ঘণ্টার প্যারেড শেষে বাফুফে ভবনে পৌঁছান মেয়েরা।
যখন সাবিনাদের তাৎক্ষণিক বিশ্রাম দরকার, তখনই কিনা তাদেরকে দাঁড় করিয়ে রাখা হলো লম্বা সময় ধরে। এ ছাড়া পেশাদার দিক থেকে ভাবলেও সংবাদ সম্মেলনটা কোচ, অধিনায়ক ও খেলোয়াড়দের। কিন্তু যাদের লড়াকু পারফরম্যান্সে পুরো দেশজুড়ে উৎসব চলছে, তাদেরকেই পেছনে দাঁড় করিয়ে চললো সংবাদ সম্মেলন। প্রায় ৪৫ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনের বেশিরভাগ সময় পেছনে দাঁড়িয়েই থাকতে হয় সাবিনা, ছোটনকে।
মুখে না বললেও সাবিনাদের মনে এটা দাগ কাটতেই পারে। গোটা দেশকে এক বিন্দুতে নিয়ে আসার নায়ক তো তারাই। অবশ্য এর আগেই মেয়েদের অবাক হওয়ার কথা। ট্রফি প্যারেড শেষে বাফুফে ভবনে গিয়ে উৎসবের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ছিল না কোনো আলোকসজ্জা, উল্টো অন্ধকার পরিত্যক্ত বাড়ির মতো দেখাচ্ছিল দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভবনটিকে।
ভবনে ঢুকে দুই তলার একটি রুমে বসানো হয় ফুটবলারদের। কেউ কেউ অবশ্য সরাসরি চলে যান নিজেদের থাকার জায়গা চার তলায়। কিছুক্ষণ পর বাকিদেরও উপরে পাঠানো হয় সংবাদ সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত হতে।
তিন তলায় সংবাদ সম্মেলন কক্ষ, সেখানে কিছুক্ষণ পরপরই ভেসে আসছিল মেয়েদের আনন্দ উল্লাসের চিৎকার। সাড়ে আটটার পরে ট্রফি হাতে কয়েকজন সতীর্থকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সাবিনা। কোচ ছোটন ছাড়াও উপস্থিত হন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী, সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মানিক ভূঁইয়া ও বাফুফের উইমেন উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
প্রাথমিক পর্বে কথা বলার সময় এদের সবাই চেয়ারে বসা ছিলেন। বাফুফে সভাপতির পাশে বসা সাবিনার পরে ছোটনকে কথা বলতে বলা হলে তাকে মাঝে নিয়ে বসানো হয়। কোচকে জায়গা দিতে গিয়ে সাবিনা যে পেছনে দাঁড়ান, আর বসা হয়নি তার। ছোটনের কথা বলার কিছুক্ষণ পর সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। তাকে জায়গা দিতে উঠে যান গোলাম রব্বানী ছোটন। ততোক্ষণে আগে বসা তার চেয়ারটি আর খালি ছিল না।
সাবিনা ও বাকি ফুটবলারদের সঙ্গে ছোটনও পেছনে দাঁড়ান। বাফুফে কর্তাদের বক্তৃতা শেষে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। এরপর পুরোটা সময় পেছনে দাঁড়িয়ে থাকেন সাবিনা ও ছোটন। মাঝে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী সাবিনাকে বসতে বললেও হয়তো অস্বস্তিতে তিনি বসেননি। কারণ পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন তাদের কোচ ছোটন। তবে চেয়ারে বসা ছিলেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, কাজী সালাউদ্দিন, সালাম মুর্শেদী, আতাউর রহমান মানিক ভূঁইয়া, মাহফুজা আক্তার কিরণসহ আরও দুজন।
সঙ্গত কারণেই হয়তো সংবাদ সম্মেলনে সাফজয়ী সব ফুটবলারকে হাজির করা হয়নি। ঋতুপর্ণা চাকমা যেমন ছাদখোলা বাসে উল্লাস করতে গিয়ে মাথায় আঘাত পান, তিনটি সেলাই লাগে তার। স্বভাবতই তার আসার সুযোগ ছিল না, বাকিরাও ক্লান্ত ছিলেন। সাবিনার সঙ্গে যারা ছিলেন, তারা হয়তো উৎসাহী হয়েই গিয়েছিলেন। একটা সময়ে গিয়ে অবশ্য তারা সংবাদ সম্মেলন কক্ষ ছেড়ে চলে যান।
সংবাদ সম্মেলনে সাবিনা বা বাকি ফুটবলারদের কাছে সাফ মিশন, পরবর্তী লক্ষ্য বা দল সংক্রান্ত কোনো প্রশ্নই রাখা হয়নি সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে। ৭-৮টি প্রশ্নের মধ্যে সাবিনার উদ্দেশ্যে ছিল মাত্র একটি প্রশ্ন, সেটাও ট্রফি প্যারেড নিয়ে। যে প্রশ্নের উত্তর পেছনে দাঁড়িয়েই দেন সাবিনা। বাকি সব প্রশ্ন করা হয় বাফুফে সভাপতি ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে।
ইতিহাস গড়ে দেশে ফেরা মেয়েরা ইতোমধ্যে দেড় কোটি টাকা পুরস্কার জিতেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। কিন্তু অভিভাবক বাফুফের পক্ষ থেকে পুরস্কার বা সংবর্ধনার কোনো ঘোষণা আসেনি এখনও। এটা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কাজী সালাউদ্দিন জানান, বাফুফের টাকা নেই। তিনি বলেন, 'মেয়েদের বাবা-মা যাই বলেন, সেটা বাফুফে। আমরা ওদের জন্য ভোর থেকে রান পর্যন্ত দেখি, আবার দেখবো, দেখতেই থাকব।'
'আর্থিক পুরস্কার, আমাদের কাছে টাকা নেই আপনারা সবাই জানেন। কিন্তু এর মধ্যে আমার দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট ৫০ লাখ করে দিয়ে দিচ্ছে, মানিক এবং সালাম। এক কোটি টাকা হচ্ছে। আরও বাইরে থেকে যে টাকাই আসবে, সব টাকা একখানে করা হবে। এরপর দলের যে ৩১ জন সদস্য আছে, সবার মধ্যে সমানভাবে বন্টন করা হবে। ওখান থেকে ১০ টাকাও বাফুফের লাগবে না।' যোগ করেন কাজী সালাউদ্দিন। সূত্র: টিবিএস