#আমাদের অগঠনতান্ত্রিকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল: তানজিল ভূঁইয়া তানভীর। #ছাত্রলীগের ত্যাগী সদস্যদের মূল্যায়ন করেনি জয়-লেখক: শাহরিয়ার কবির বিদ্যুৎ। #জয়-লেখক আমাদের সাথে অন্যায় করেছে: আবু সাঈদ আকন্দ। #নিয়মবহির্ভূতভাবে আমাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মাহমুদ আবদুল্লাহ বিন মুন্সি।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্বে যারা আছেন অর্থাৎ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য আমাদেরকে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে এবং অগঠনতান্ত্রিকভাবে আমাদেরকে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যে ইতিহাস সেই ইতিহাসের সবচে জঘন্য ও বেদনাদায়ক সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয়েছে সেটা হচ্ছে এই সামরিক ফরমান জারি করার মাধ্যমে এই ২১জন সদস্যকে বহিস্কারাদেশ দেওয়ার মাধ্যমে। আমরা আজও পর্যন্ত জানি না যে, আমাদের বিরুদ্ধে কি অভিযোগ ছিল বা আদৌ কোনো অভিযোগ ছিল কিনা?
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৮৩৩তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সদস্য তানজিল ভূঁইয়া তানভীর, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপ কমিটি সদস্য, শাহরিয়ার কবির বিদ্যুৎ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ আবু সাঈদ আকন্দ (সাস্ট), বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক উপ দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আবদুল্লাহ বিন মুন্সি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
তানজিল ভূঁইয়া তানভীর বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্বে যারা আছেন অর্থাৎ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য আমাদেরকে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে এবং অগঠনতান্ত্রিকভাবে আমাদেরকে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিন্তু আমরা এখনো জানি না যে আমাদেরকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। আমাদের দোষটা কি ছিল? আমাদের দোষ ত্রুটি থাকতে পারে কিন্তু সেই দোষটা কি সেটা তো আমাদের আগে জানাতে হবে। আমাদেরকে অব্যাহতি দেওয়ার পর আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের শরণাপন্ন হয়। তখন তিনি আমাদের বলে যে, আমিতো ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা নয়, তোমরা আমাদের আওয়ামী লীগের যে শ্রদ্ধেয় চার নেতা আছে তাদের সাথে যোগাযোগ করো। আমারা তখন তাদেরকে গিয়ে বললাম যে আমাদের কে কেন এভাবে অব্যাহতি দেওয়া হলো। তখন তারা স্বীকার করলো যে, হয়তো জয়-লেখকের ভুল হতে পারে। আগামীতে যে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আছে সেই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর পর এই বিষয়ে পুনঃ তদন্ত হবে। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর পর আমরা তাদের কাছে পুনরায় গেলাম। তখন তারা আমদেরকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের কথা বলে তখন বলল যে আমরা পুনঃ তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। আজ ভোরের পাতা সংলাপের মাধ্যমে একটি প্রশ্ন রাখতে চাই যে, বর্তমান ছাত্রলীগের অনেক বিতর্কিত কর্মীদের নাম আমাদের সামনে আসছে, কিন্তু জয়-লেখক তাদের চেয়ারকে ধরে রাখার জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
শাহরিয়ার কবির বিদ্যুৎ বলেন, আসলে আমরা এমন একটা সময় আজকের ভোরের পাতা সংলাপে অংশগ্রহণ করেছে যখন গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নিয়ে অনেক ধরণের নেতিবাচক সংবাদ দেখছি আমরা। আমরা যারা বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে একটা অনুভূতি হিসেবে ধারণ করে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎকে জলাঞ্জলি দিয়ে জয় বাংলা স্লোগানকে বুকে ধারণ করে নিজেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কয়েকটি ইউনিটের কারণে এই সংগঠনের অনেক গুলো নেতিবাচক দিক আমাদের সামনে চলে এসেছে। এগুলো দেখে আমাদের হ্রদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। বর্তমান বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য যখন এই সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব নেই তখন নেত্রী তাদের কিছু নির্দেশ দেই এই সংগঠনকে সাড়া বাংলাদেশ আরও সুসংগঠিত করার জন্য। কিন্তু তারা প্রথমেই যে কাজটা করলো সেটা হচ্ছে এই সংগঠনের যে সুস্পষ্ট ধারা ও গঠনতন্ত্র আছে সেই গণতান্ত্রিক ধারায় প্রথম পেরেক মেরে তারা তাদের কার্যক্রম শুরু করে। যারা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পরীক্ষিত, ত্যাগী এমনকি যাদের রাজনৈতিক পোর্টফলিও অনেক ভারী তাদেরকে একটা সামরিক ফরমান জারি করে অব্যাহতি পত্র দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের একজন সদস্যকেও বহিষ্কার করার এখতিয়ার রাখেন না বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের উপর। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের একজন সদস্যকেও বহিষ্কার করতে হলে ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং ডেকে রেজুলেশন পাশ করাতে হয়। তারপর সেটার উপর নির্ভর করে ভোটাভোটির আয়োজন করতে হয় এবং সেই ভোটের এক তৃতীয়াংশ ভোট পরা লাগে একজন সদস্যকে বহিষ্কার করার জন্য। যদি সেই ভোটের পরে কেউ দোষী সাব্যস্ত হয় তখন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ তখন একটি শোকজ নোটিশ জারি করে সেই দোষী ব্যক্তির উপর। তারপর শোকজের উত্তর যদি সেই দোষী ব্যক্তি যথাযথভাবে না দিতে পারে তখন আবার কেন্দ্রীয় সংসদের মিটিং ডেকে তখন ঐ দোষী সদস্যকে বহিষ্কার করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যে ইতিহাস সেই ইতিহাসের সবচে জঘন্য ও বেদনাদায়ক সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয়েছে সেটা হচ্ছে এই সামরিক ফরমান জারি করার মাধ্যমে এই ২১জন সদস্যকে বহিস্কারাদেশ দেওয়ার মাধ্যমে।
আবু সাঈদ আকন্দ(সাস্ট) বলেন, যেদিন আমাদের অব্যাহতি পত্র দেওয়া হয় সেদিন সেদিন খামারবাড়িতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একটি অনুষ্ঠান হচ্ছিলো। সেই প্রোগ্রামে আমরা ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গেই ছিলাম। প্রোগ্রাম শেষ করে আমরা যখন বাসায় ফিরি তখন আমরা একটা প্রেসের মাধ্যমে দেখলাম ওনারা একটি অব্যাহতি পত্র অনলাইনে প্রচার করলো। ঐ অব্যাহতি পত্রে একটি লাইন লেখা ছিল যে, উল্লেখিত নেত্রীবৃন্দের উপর আনিত অভিযোগের প্রমাণ সাপেক্ষে; এখন আমরা কথা হচ্ছে যে বিকাল পর্যন্ততো আমরা তাদের সাথেই ছিলাম। এখন এই সময়ের মধ্যে কখন অভিযোগ আসলো এবং কখনি বা অভিযোগের সত্যতা যাচায় করা হলো; এটা আমার বোধগম্যে আসছে না। আমাদের সংগঠনের কিছু গঠনতন্ত্র আছে এবং সেই গঠনতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে তারা আমাদের সংগঠন চালাবে। কিন্তু তারা কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে আমাদের অগঠনতান্ত্রিকভাবে অব্যাহতি পত্র দিয়ে দিল। আমাদের প্রতি যে অবিচার হচ্ছে সেটাই বা বাদ দিলাম কিন্তু সংগঠনের জন্যও যে তারা ভালো কিছু করছে এটাও কিন্তু না। তাদের এমন আচরণ দেখে আমরা সবাই কষ্ট পাই। এটা আমরা কোনভাবেই আশা করেছিলাম না। এটা সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্রপরিপন্থি এবং তারা আমাদের সাথে পুরোটায় অন্যায় করেছে।
মাহমুদ আবদুল্লাহ বিন মুন্সি বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কিন্তু কোন হাওয়ার উপর চলে না। গত সাত দশকেরও বেশী সময় ধরে বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের সংগঠনের কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে। সেই নিয়ম নীতির উপর শ্রদ্ধা ও আস্থা রেখেই আজ পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতি করে আসছি। আমাদের যখন অব্যাহতি পত্র দেওয়া হয় সেখানে উল্লেখ ছিল যে আমাদের উপর আনিত অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। এখন আমার কথা হচ্ছে যে, আমাদের সংগঠনের কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম নীতি আছে। এই নিয়ম নীতির মধ্যে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, সাংগঠনিকভাবে যখন কোন কর্মীর বিরুদ্ধে যখন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তখন তার আগে সেই ব্যক্তিকে অবশ্যই শোকজ প্রদান করা অর্থাৎ কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দেওয়া। অর্থাৎ আমি যদি অভিযুক্ত হয় তাহলে আমাকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে আমাকে আমার অভিযোগের পক্ষে আমাকে ওয়াকিবহাল করবে এবং সেখানে আমার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে ও একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি আমার উপর আনিত অভিযোগের ব্যাখ্যা না দিতে পারি তাহলে সেই মুহূর্তে আমার উপর যেকোনো ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে যে, আমাদের ২১জনের কাউকেই কোন কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়নি। আমরা আজও পর্যন্ত জানি না যে, আমাদের বিরুদ্ধে কি অভিযোগ ছিল বা আদৌ কোন অভিযোগ ছিল কিনা?