চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রাস্তা শ্রেণিভুক্ত জমি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লিজ দিয়ে অবৈধভাবে ‘জেলা পরিষদ মিনি মার্কেট’ গড়ে তোলার অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশে অভিযোগের তদন্তে নেমেছে রাজশাহী কমিশনার কার্যালয়ের তদন্ত দল। রোববার বিকেলে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. এনামুল হক ‘জেলা পরিষদ মিনি মার্কেট’ পরিদর্শন করেন। তিনি মার্কেটটির খসড়া মানচিত্র, জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ও লিজ গ্রহীতাদের বক্তব্য নিয়েছেন। তদন্তে আসার খবরে আগে থেকেই নির্মাণাধীন মার্কেট এলাকায় অবস্থান নেয় জেলা পরিষদের লোকজন।
সরেজমিন তদন্তের সময় জেলা পরিষদ প্রশাসক মো. আশাফুল হক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আফাজ উদ্দীন, সাবেক সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম, আবুল বাশার, জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও লীজ গ্রহিতারা উপস্থিত ছিলেন। দুপুরে তদন্ত কর্মকর্তা জেলা পরিষদে গিয়ে জমির লিজ প্রক্রিয়ার নথি পর্যলোচনা করেন। পরে নির্মাণাধীন ‘জেলা পরিষদ মিনি মার্কেট’ ঘুরে দেখেন।
এ সময় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. এনামুল হক বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড়ে হুজরাপুর মৌজার রাস্তা শ্রেণিভুক্ত জমিতে ‘জেলা পরিষদ মিনি মার্কেট’ নির্মাণের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে এ অভিযোগ করেন। সড়ক নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা রোধ ও জনস্বার্থে মার্কেট নির্মাণকাজ না করতে অনুরোধ করেছে জেলা প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
এ মার্কেট নির্মাণে মহাসড়ক আইন মানা হয়নি জানিয়ে মো. এনামুল হক বলেন, আইন অনুযায়ী সড়ক সীমার ১০ মিটারের মধ্যে কোন স্থাপানা নির্মাণ বৈধ নয়। এসব কাগজপত্র ও জমির লীজ প্রক্রিয়ার নথি পর্যলোচনা করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
জানা গেছে, রাস্তা শ্রেণিভুক্ত জমিতে বেআইনিভাবে মার্কেট নির্মাণ বন্ধে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ। অভিযোগে তিনি বলেছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ‘নবাবগঞ্জ উত্তর মল্লিক গোমস্তাপুর (ত-৬৮০৬) সড়ক’ সংলগ্ন ফায়ার সার্ভিস মোড়ে রাস্তা শ্রেণিভুক্ত দাগের অংশে জেলা পরিষদ বেআইনিভাবে দোকানঘর নির্মাণকাজ করছে। যানজট নিরসনে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে এ রাস্তাটি প্রশস্তকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে টার্নিং পয়েন্টের ওপর রাস্তা শ্রেণিভুক্ত জায়গায় এভাবে দোকানঘর নির্মাণ করতে বন্দোবস্ত দেয়া একেবারে অন্যায় ও বেআইনি।
এমপি হারুনুর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা আর সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুরোধ উপেক্ষা করে চলছে ‘জেলা পরিষদ মিনি মার্কেট’ নির্মাণ কাজ। এসব দোকান নির্মাণের ফলে আ লিক মহাসড়কের ফায়ার সার্ভিস মোড়ের বাঁক সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ফলে সড়ক নিরাপত্তা বিঘিœত হয়ে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা।
অভিযোগ রয়েছে, এ জমি ৯ জনকে লিজ দিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রত্যেক লিজ গ্রহীতার পক্ষে প্রতি বর্গফুট ৯ টাকা হারে ১৭০ বর্গফুটে দোকানঘরের জন্য মাত্র ১৫৩০ টাকা করে সরকারি কেষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। লিজ গ্রহীতাদের কারো কাছ থেকে ৩ লাখ, কারো কাছ থেকে ৩ লাখেরও বেশি টাকা করে গ্রহণ করেছেন জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার মো. শফিকুল ইসলাম। তার মাধ্যমেই লিজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ টাকা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ প্রশাসক, সার্ভেয়ার ও প্রকৌশল বিভাগের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়েছে।