একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন এ টি ম পেয়ারুল ইসলাম। তবে এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও পরে দলের মনোনয়নের বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিলেও পরে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা চালাননি। এ কারণে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) হলফনামা জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। হলফনামায় উঠে এসেছে, গত চার বছরে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এটিএম পেয়ারুল ইসলামের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার কাছাকাছি। এ অর্থ দিয়ে তিনি দুটি পোল্ট্রি ও ফিশ প্রজেক্টের মালিক হয়েছেন। তবে এ সময়ের মধ্যে তাকে কোনো ব্যাংকঋণ নিতে হয়নি।
এছাড়া বিগত নয় বছরে তার আয় বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৩ গুণ। বেড়েছে স্ত্রীর নগদ অর্থের পরিমাণও। শেষ চার হলফনামা অনুযায়ী, বিএনপি জোট সরকারের আমলেও কোনো মামলার শিকার হতে হয়নি এ আওয়ামী লীগ নেতাকে।
জানা যায়, ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপির প্রার্থী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কাছে হেরে যান পেয়ারুল। ২০১৪ সালে দলীয় মনোনয়ন পাননি। ওই নির্বাচনে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরে প্রত্যাহার করে নেন।
একইভাবে ২০১৮ সালেও দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। নির্বাচনে তাকে আপেল প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেসময় তিনি ২৮১ ভোট পান। তবে তার দাবি, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে গিয়েছিলেন। নির্ধারিত সময়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় ব্যালটে তার প্রতীক চলে এসেছিল।
চলতি ২০২২ সালের জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন তিনি।
বিগত নির্বাচনগুলোতে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০০৮ সালের ১৯ নভেম্বরের হলফনামা অনুযায়ী, তার বার্ষিক আয় ছিল তিন লাখ ৬০ হাজার ৪০০ টাকা। পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন মৎস্য হ্যাচারি ও বনায়ন খাতের ব্যবসায়ী।
ওই বছর তিনি নিজের ব্যবসা থেকে দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা ও মৎস্য হ্যাচারি থেকে ৯৫ হাজার ৪০০ টাকা আয় করেন। তখন তার নগদ ছিল ৮৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫৮৭ টাকা। তবে স্ত্রীর নগদ অর্থ ছিল তার চেয়ে বেশি। ওই সময় তার স্ত্রীর নগদ অর্থ ছিল ৯১ লাখ ৫০ হাজার ২৫০ টাকা।
ডায়নামিক ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানে স্বামী-স্ত্রী দুজনের আড়াই লাখ করে পাঁচ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। বর্তমানে তার স্ত্রীর নগদ অর্থ কোটি টাকা পেরিয়ে গেছে। এখন তার স্ত্রীর নগদ অর্থের পরিমাণ এক কোটি ১৩ লাখ ১৯ হাজার ২৭০ টাকা।
২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর হলফনামায় দেখা যায়, পেয়ারুলের বার্ষিক আয় চার লাখ ৬৩ হাজার ২৫০ টাকা। তবে পরের চার বছরে তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বরের হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ৫১ লাখ ৩৬ হাজার ১০৫ টাকা।
চার বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জমা দেওয়া হলফনামায় তার আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯ লাখ ৫৬ হাজার ১১৮ টাকায়। হিসাব অনুযায়ী নয় বছরে পেয়ারুলের বার্ষিক আয় বেড়েছে প্রায় ১২ গুণ।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৮ সালে পেয়ারুল ইসলামের ডায়নামিক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানে আড়াই লাখ টাকার শেয়ার থাকলেও ২০১৩ সালে ‘কি অন ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে ৫০ হাজার টাকার শেয়ারের মালিক হন।
তবে ২০১৮ সালে তার ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন ঘটে। আয়ের পাশাপাশি তার অস্থাবর সম্পদও বাড়ে। এ বছরের হলফনামায় দেখা যায়, নতুন করে তিনি দরবার এগ্রো ফার্মার্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানে চার লাখ টাকা ও ফনিক্স সিরামিক অ্যান্ড অটো ব্রিকস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ারের মালিক হন।
একই সঙ্গে তার স্ত্রীও ফনিক্স সিরামিক অ্যান্ড অটো ব্রিকস লিমিটেডের ১০ লাখ টাকার শেয়ারের মালিক হন। তবে একই বছর ব্যাংকঋণের ১৬ লাখ ৯০ হাজার টাকায় একটি জিপ গাড়ি থাকার কথা উল্লেখ করলেও দায়ের ক্ষেত্রে কোনো ঋণ নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন তিনি।
২০২২ সালে এসে নতুন করে যুক্ত হয়েছে প্রয়াত বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত আবুল ফজল ডাক অ্যান্ড পোল্ট্রি ফার্ম ও আবুল ফজল ফিশ প্রজেক্ট নামের আরও দুটি প্রতিষ্ঠান। যেগুলোতে আর্থিক মূল্যমান ধরা হয়েছে, তিন কোটি ৩১ লাখ ৩৬ হাজার ২৯৬ টাকা। বর্তমানে তার পাঁচটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ২০০৮ সালে তিনি দুই লাখ ৯০ হাজার টাকার প্রাইভেটকারে চড়লেও বর্তমানে তার রয়েছে ২৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫৫ টাকা দামের গাড়ি।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে, ২০০৮ সালে পাওয়া পৈতৃক আট একর জমি, ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা মূল্যের ১৫ একরের বনায়ন, ১৫ লাখ টাকার পৈতৃক বাড়ি ও সাত লাখ ১২ হাজার টাকা মূল্যের ৬ দশমিক ২১ একরের মৎস্য প্রকল্প। ওই সময়ে প্রাইম ব্যাংক, ফটিকছড়ি, বিবির হাট শাখায় ৪৭ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৫ টাকার ঋণ ছিল পেয়ারুলের। পরবর্তীসময় সে ঋণ তিনি শোধ করে দিয়েছেন।
২০১৩ সালের পর থেকে কোনো হলফনামায় তাকে ঋণগ্রস্ত হিসেবে দেখা যায়নি। গত ১৫ সেপ্টেম্বরের হলফনামায় তার ১৩ লাখ টাকার কৃষিজমি, ২৯ লাখ ৪৮ হাজার ৭২৫ টাকার অকৃষিজমি, পয়েন্ট টু টু বোর রাইফেলের মূল্য দেখানো হয়েছে ৭০ হাজার টাকা।