বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের মিয়ানমারের অভ্যন্তরে শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে হেলিকপ্টার থেকে ব্যাপক গুলাগুলি চলে,আর বিকালে কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। সন্ধ্যা ৬টায় আবারও গুলি ছোড়া হয়েছে। ঘুমধুম ইউনিয়নের মোঃ সরওয়ারসহ অনকে জানান গত কিছু দিন ধরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমার বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল লড়াই যেন দিন দিন ভয়ঙ্কর ভাবে রুপ ধারণ করেছে। ফলে ওপার থেকে যুদ্ধ বিমান থেকে ছোড়া মর্টার শেল ও গুলির খোসা এসে পড়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রুং সীমান্তে। এ ঘটনায় সীমান্ত জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে সীমান্ত জনপদে বসবাসকারীদের মাঝে। এছাড়াও সীমান্তের আরো কঠোরভাবে নিরাপত্তা জোরদার করেছেন বিজিবি।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, আজ সকালের সীমান্তের ওপারের গোলাগুলি হচ্ছিল থেমে থেমে। সকাল ১০ টা পর থেকে গোলাগুলি আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেছে। পরিস্থিতি এখন ঠান্ডা রয়েছে। কিন্তু এখনো মিডিয়া ও সাংবাদিকদের তুমব্রুং সীমান্তে ডুকতে দিচ্ছে না বিজিবি।
তারা আরো জানিয়েছেন, গতকাল নো ম্যান্স ল্যান্ডে ৩ টি মর্টার শেল পড়লে সেখান থেকে একটি বিস্ফোরিত হয়ে ইকবাল নামের এক রোহিঙ্গা মৃত্যু হয়েছিল তার পোষ্ট মর্ডাম এখনো আসেনি ও দাফনও দেয়া হয়নি। আর শিশুসহ আহত ৬ জনের মধ্যে ২ জন কক্সবাজার মেডিক্যাল হাসপাতালে। ৩ জন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ও অপর ১ জন চট্টগ্রাম এমএস এফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্ত ঘেষা নো ম্যান্স ল্যান্ডে রোহিঙ্গা শরনার্থী বসবাস করছে ৪ হাজার ৬শত ৬৩ জন। সীমান্ত ঘেষা জমি চাষ ও জুম চাষীরা তাদের কৃষি কাজে যাওয়া দুরের কথা ওপারের গুলির আওয়াজ শুনে এলাকা ছেড়ে নিজ আত্বীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে শূণ্যরেখায় বসবাসকারি রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা দিল মোহাম্মদ আরো বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে শূন্য রেখায় বসবাসকারি রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে এসে পড়ে ৩টি মর্টার শেল। ক্যাম্পের নিটকর্বতী এলাকায় এসে পড়ে আরো ২টি। ৫ টি মর্টার শেল পরপর বিস্ফোরণ হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে সীমান্তে থাকা বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরনার্থীরা ওই এলাকা ছেড়ে অনেকে অন্যত্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এখনো ২টি মর্টার শেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় আছে। সেগুলো ঘিরে রাখা হয়েছে। ওই এলাকায় চলাচলে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।
তিনি বলেছিলেন, মিয়ানমারে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষ বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। আমরা শুরু থেকেই সতর্ক আছি। মিয়ানমারের কোনো নাগরিক যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারেন, সে বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্ক আছি। তাদের গোলা যেন আমাদের দেশে না আসে সে বিষয়ে তাদেরকে আগেও জানানো হয়েছে। নতুন করে আবারো জানানো হবে এবং কূটনৈতিকভাবেই এটি বন্ধ করার জন্য আলোচনা হচ্ছে।'
বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজী বলেন, প্রশাসন পক্ষ থেকে ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে জনগন নিরাপদে থাকার জন্য নির্দেশনা দেয়। আর আমরা জরুরী সভা আহব্বান করেছি সকলে বসে সিদ্ধান্ত নিবো কিভাবে সেখানকার বসবাসকারীদের নিরাপদ রাখা যায় সেই বিষয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এছড়াও সীমান্ত ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪৯৯ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং পরীক্ষা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। সকাল থেকে যারা এসএসসি পরিক্ষার্থীরা রয়েছেন তাদেরকে প্রশাসন পক্ষ চলাচলের জন্য যানবাহন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল সকালে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের বাইশফাঁড়ি সীমান্তের কাছে 'মাইন বিস্ফোরণে' বাংলাদেশি যুবক অং ঞোথোয়াইং তঞ্চঙ্গার (২২) একটি পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেও বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ আগস্ট সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি সীমান্তের ৩০০ থেকে ৪০০ গজ ভেতরে মিয়ানমারের একটি হেলিকপ্টার বেশ কয়েকবার ঘুরতে দেখা যায়। সে সময় মিয়ানমার থেকে কয়েক রাউন্ড গোলাবর্ষণ করা হয়।
তার আগে গত ২৮ আগস্ট দুপুরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিলার এলাকায় মিয়ানমারের ২টি মর্টার শেল এসে পড়ে। ৩ সেপ্টেম্বর ওপার থেকে গুলি খোসা এসে পড়ে তুমব্রুং এলাকায়।
সর্বশেষ গতকাল ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে মর্টার শেলের গোলা এসে পড়ে ৭ রোহিঙ্গা হতাহতের ঘটনা ঘটে।