আবারও দূর্নীতির স্বর্গরাজে পরিণত হয়েছে সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না দূর্নীতির স্বর্গরাজ্য নামে পরিচিতি পাওয়া পাসপোর্ট অফিসের দূর্নীতি। এ অফিসে দালালদের এসএমএস ছাড়া কোন কাজ হয় না। আর এই ছোট এসএমএস কাজ করে অনেক বড়। প্রতিদিন অবৈধ আয় প্রায় ৪ লক্ষ টাকা।
এই দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা সরকারের সকল নির্দেশনা অমান্য করে প্রসাশনের নাকের ডগায় বসে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে তার সকল অপকর্ম। আর এই ঘৃর্ণিত অপকর্মে সুনিপুন কারুকার্যে তিনি, দিনপ্রতি অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন ৪ লক্ষ টাকা।মাসে আয় প্রায় ৯২ লক্ষ টাকা।
কর্মপরিকল্পনা “সকাল ৮টায় অফিস শুর”চা পানি খেয়ে সবাই মিটিং রুমে। কিভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে দূর্ণীতি বাস্তবায়ন করে লক্ষ লক্ষ কালো টাকা উপার্যন করা যায় তার কর্মপরিকল্পনা। প্রথমে কোন দালালের কয়টি পাসপোর্টের এসএমএস গ্রহন করা হবে, কোন দালালের কয়টি পাসপোর্ট এন্ট্রি করা হবে, কোন দালালের কয়টি পাসপোর্টের ছবি তোলা হবে। এসব ঠিক করা হয়।কোন দালাল টাকা কম দিলে তার জবাবদিহিতা করতে হয় মিটিং শেষে, পাসপোর্ট অফিসের দূর্নীতিবাজ সহকারী পরিচালকের রুমে। দালাল চক্রের প্রতিনিধি ও অফিসের নির্ধারিত কর্মচারীর আলোচনার মাধ্যমে। দৈনিক পাসপোর্ট প্রতি কমিশন কত টাকা হবে সেটাও পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। পাসপোর্টের সংখ্যা কমবেশি হলে কমিশন ওঠানামা করে। তবে বেশিরভাগ সময় পাসপোর্ট প্রতি কমিশন ১ থেকে ৩ হাজার টাকা থাকে।
সরজমিনে অফিস কমপাউন্ডে পাসপোর্ট অফিসের নাম না প্রকাশের শর্তে পদবি (ডিআইপি) বলেন, এ অফিসে দৈন্দিন প্রায় চারশ ফরম জমা হয়। নির্ধারিত দালাল ছাড়া সরাসরি কোন ফরম জমা নেওয়া হয়না। দালালদের এসএমএস ছাড়া ফরম জমা দিতে গেলে ফরমের নানারকম ভুল বের করে আবেদনকারীকে বার বার ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ওই একই ফরম কোনো দালালের মাধ্যমে জমা দিলে সব ভুল হাওয়া হয়ে যায়। মুহুত্বে জমা হয়ে যায় নিদিষ্ট মডিউলে। পাসপোর্টের আবেদন ফরম জমা দেওয়ার মডিউল দুইটা। আবেদনকারীদের ফরম জমা দেওয়ার লাইন একই কিন্তু কম্পিউটার এন্ট্রির মডিউল আলাদা। একটা মডিউলে জমা হয় সম্পূর্ণ সহকারি পরিচালক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত দালাল চক্রের এসএমএস প্রাপ্ত ফরমগুলো। আর অন্য মডিউলে দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার ঘৃর্নিত কবল থেকে এক থেকে তিন হাজার টাকা বাচানোর জন্য বারবার ঝাড়–দার লাভলুর (আউটসোর্সিং এ নিয়োগ) ঠোকর খেয়েও দাড়িয়ে আছে জমা দেওয়ার আশায় সাধারন মানুষ। যদি হুজুরের মর্জি হয়।
তিনি আরো বলেন, শুধু এসএমএস প্রাপ্ত ফরমগুলো নিদিষ্ট সময়ে স্ক্যানিং করে ঢাকায় পাঠানো হয়।গ্রাহকরা যাতে যথাসময়ে বই পায়।আর এসএমএস ব্যতিরেকে ফরমগুলো ফেলে রাখা হয় ফ্লোরে। এই বইগুলো কতদিনে গ্রাহকরা পাবে তার কোন হদিছ নাই। অনেক অসুস্থ মানুষের পাসপোর্ট আবেদন ফরমও দীর্ঘদিন পড়ে থাকতে দেখা যায়। কোন পাসপোর্টধারী সংশোধনের জন্য আসলে একাদশে বৃহস্পতি এই চক্র নিয়ন্ত্রনকারী লাভলু ও আমিনুরের (ডিআইপি) জন্য। তারা ইচ্ছামত দর হাকেন। সাধারনত নাম সংশোধনে ৮ হাজার। বয়স সংশোধনে বছর প্রতি ৮হাজার। আর ৫বছর হলে ৪০ হাজার টাকা ঢাকায় পাঠানোর কথা বলে পাসপোর্টধারীদের কাছ থেকে নেন।যেটা সম্পূর্ণ অবৈধ।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, লাইনের (দালাল) মাধ্যমে আসা অর্থাৎ দেড় হাজার থেকে তিন হাজার টাকা দিলে দ্রæত সময়ে তৈরি হয়ে যায় পাসপোর্ট। আবেদনকারীর ফরমে কোন ভুল নেই, ছবি ফিংগারে কোন বাধা নেই। দ্রæত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ। যত ভুল, ভোগান্তি সাধারন মানুষের। যদি হুজুরা দয়া করে জমা নেন,পাসপোর্টের দেখা কবে মিলবে বলা খুবই কষ্টের। এভাবে বর্তমান সহকারি পরিচালক শাজাহান কবির, ঝাড়–দার লাভলুর মাধ্যমে জেলা সদরসহ ৬টি উপজেলায় গড়ে তুলেছে শক্তিশালি দালালচক্র। এই চক্রের মাধ্যমে প্রতিদিন সহকারী পরিচালক বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এই দূর্নীতি অনিয়ম এখনই রোধ করা না গেলে,উন্নয়নমুখি সরকারের ভাবমুর্তি নষ্টের অন্যতম কারন হতে পারে বলে করেন সচেতন মহল।
সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকা থেকে ইমরান,আজিজুল,জিয়া,সালাহ্,বাবুসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়,তারা কোন না কোন দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে এসেছে।তাদের অধিকাংশের দাবি দালালের মাধ্যমে না আসলে এখানে পাসপোর্ট করা যায়না।সেক্ষেত্রে তাদের গুনতে হয় অতিরিক্ত তিন থেকে চার হাজার টাকা।
এদিকে, সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সরাসরি দূর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়ায় জেলার প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে অসহায়, দরিদ্র মানুষ পাসপোর্টের জন্য ফরম জমা দিতে এসে দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাদের পাসপোর্ট জরুরি দরকার হওয়ায় কেউ অভিযোগ দিতে সাহস পায় না। সাধারণত এ অঞ্চলের মানুষের জরুরি চিকিৎসা, শিক্ষার্থীদের ভিসা সংক্রান্ত বিষয়, আবার অনেকের বিদেশে ব্যবসায়িক কাজে এবং কারো জরুরি বিদেশ ভ্রমণের মতো বিষয় থাকায় সহকারী পরিচালকের দূর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারছে না।
এসব দূর্নীতি, অনিয়মের বিষয়ে সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সাজাহান কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি প্রতিদিন চার’শ ফরম জমার হওয়ার স্বীকারোক্তি দিয়ে অন্য বিষয়গুলো এড়িয়ে যান। আপনারা শুধু এই গুলো দেখতে পান? আমার এখানে জনবল সংকট সেটা দেখতে পাননা।এসএমএস এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এসব বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।