দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আ. লীগের মনোনয়ন ঝুঁকিতে যে ১০ মন্ত্রী!
প্রকাশ: শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৫:২৭ পিএম আপডেট: ১৭.০৯.২০২২ ৫:৩১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ অর্থাৎ ২০২৩ সালের শেষ অথবা ২০২৪ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আর নির্বাচনে প্রস্তুতি হিসেবে সাংগঠনিক বিষয়গুলোর উপর জোরাল পদক্ষেপ নিচ্ছে দলটি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনয়নে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। এই কথা প্রধানমন্ত্রী গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনেই ঘোষণা করেছেন। এই কথার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন যে, পঙ্কজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট একটি বার্তা। কতগুলো আসনে পরিবর্তন করা হবে, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। বরং আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০০ আসনের ওপরই খোঁজ-খবর রাখছেন এবং এই আসনগুলোতে যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছেন, যাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে, যারা দলীয় কোন্দলে বিভক্ত হয়েছেন এবং যারা নানারকম বার্ধক্যজনিত কারণে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হবেন তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা প্রাথমিক হিসাব প্রাক্কলন করে বলেছেন যে, অন্তত একশ থেকে দেড়শ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। আর এই প্রার্থী পরিবর্তনে মনোনয়ন ঝুঁকিতে রয়েছেন অন্তত ১০ জন মন্ত্রী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং মন্ত্রীও আছেন, যাদের এলাকায় অবস্থান টলটলায়মান এবং নানা রকম বিতর্কের মধ্যে তারা জড়িয়ে পড়েছেন। এদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার নির্দয় হতে পারেন বলে জানা গেছে। মনোনয়ন ঝুঁকিতে থাকা ১০ জনের মধ্যে ৫ জনই পূর্ণমন্ত্রী। এদের মধ্যে একজন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। তার এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অত্যন্ত শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং নানা রকম কোন্দলের কারণে তিনি বিতর্কিত। তাছাড়া তার আত্মীয় এবং স্থানীয় সমর্থক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ একাধিক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। এই সমস্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে এবং প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন হওয়ার পরও তিনি মনোনয়ন ঝুঁকিতে আছেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন জাহাঙ্গীর কবির নানকও শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, আস্থাভাজন ছিলেন। কিন্তু তারপরও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। কাজেই, যাকে এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হবে, যিনি এলাকায় ঐক্য রাখতে পারবেন না, বিতর্কিত হিসেবে আবির্ভূত হবেন তাকে সরিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো কার্পণ্য করবেন না। পূর্ণমন্ত্রীদের মধ্যে সিলেট অঞ্চলের একজন মন্ত্রী রয়েছেন যিনি নানা কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচিত, বিতর্কিত এবং সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটেও তার বিরুদ্ধে একটা নতুন মেরুকরণ হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে একজন এমপি যিনি এবার মন্ত্রী হয়েছেন তার বিরুদ্ধেও এলাকায় ভূমি দখলসহ নানা অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এই অভিযোগগুলো এখন প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। তার বিরুদ্ধেও নারায়ণগঞ্জের নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন এবং তিনিও মনোনয়ন ঝুঁকির মধ্যে আছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী যিনি গত নির্বাচনে মনোনয়ন ঝুঁকিতে ছিলেন, এলাকায় তার জনপ্রিয়তা কম ছিল বলে শেষ জরিপে ফলাফল এসেছিলো। কিন্তু তারপরও প্রধানমন্ত্রী তাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। শুধু মনোনয়নই দেননি, মনোনয়নের পর তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। এবার তিনি নিজেও মনোনয়ন ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। অন্তত দুইজন প্রবীণ মন্ত্রী আছেন যাদের একজন সিলেট অঞ্চলে। তারা এবার মনোনয়ন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বার্ধক্যজনিত কারণে। হয়তো শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ নাও করতে পারেন। প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের একজন প্রতিমন্ত্রী, ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা অঞ্চলের একজন প্রতিমন্ত্রী, খুলনা অঞ্চলের দুইজন প্রতিমন্ত্রী, বরিশাল অঞ্চলের একজন মন্ত্রীও মনোনয়ন ঝুঁকিতে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রগুলো বলছে যে, মূলত মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে এবার পাঁচটি বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বিবেচনা করছেন। প্রথমত, এলাকায় তার জনপ্রিয়তা কতটুকু অটুট রয়েছে। দ্বিতীয়ত, তিনি এলাকায় যে সমস্ত অঙ্গীকারগুলো করেছে সে অঙ্গীকারগুলো কতটুকু পালন করেছেন। তৃতীয়ত, এলাকায় তিনি কোনো বিতর্কিত কর্মকাণ্ড যেমন নিয়োগ বাণিজ্য, কমিটি বাণিজ্য, গ্রুপিং ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত কিনা সেটি বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। চতুর্থত, তার নিজস্ব গ্রুপ এলাকায় কোনো অনিয়ম বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে কিনা সেটা বিবেচনা করা হচ্ছে। পঞ্চমত, বিবেচনা করা হচ্ছে অন্য যারা আছেন আওয়ামী লীগে প্রার্থী হওয়ার জন্য তারা কতটুকু উপযুক্ত এবং তাদের জনপ্রিয়তা কতটুকু। এই পাঁচটি বিষয় বিবেচনায় নিয়েই এই ১০ জন মন্ত্রী এখন মনোনয়ন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এখনও নির্বাচনের এক বছরের বেশি সময় বাকি আছে। এই সময়ের মধ্যে তারা নিশ্চয়ই সুযোগ পাবেন তাদেরকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য। তবে তারা যদি এই সময়ের মধ্যে বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে না উঠতে পারেন এবং এলাকায় তাদের জনপ্রিয়তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা না করতে পারেন সেক্ষেত্রে তাদের জন্য মনোনয়ন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।