প্রকাশ: শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৩:০৩ এএম | অনলাইন সংস্করণ
বিভাগীয় শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত উত্তরাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসার সেবার অন্যতম ভরসাস্থল রাজশাহী মেডিকেলে কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। যাদের হাত বা পা ভেঙে গেছে, কোমরে ব্যথা আছে, হাঁটতে বা রিকশায় ভ্যানে চলতে পারেন না তাদের হাসপাতালে আনা-নেওয়ার জন্য চালু আছে 'গরিবের অ্যাম্বুলেন্স' তিন চাকার ভ্যান। এসব রোগীদের ভ্যানে বসতে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য নরম গদি লাগিয়ে করা হয়েছে বেশ আরামদায়ক।
অসচ্ছল ও কম দূরত্বে রোগী আনা-নেওয়ার কাজে অল্প টাকায় ভালো বাহন এই ভ্যান। তাই চালকরা নামও রেখেছেন ‘গরিবের অ্যাম্বুলেন্স'। জরুরি চিকিৎসা সেবায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার হলেও নিম্ন মধ্যবিত্ত ও গরিব রোগীদের যাতায়াতে আশীর্বাদ এই ভ্যানগুলো। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দেখা মেলে এই স্বল্প খরচে ও সুন্দর আয়োজনের এ বাহনটি। হাসপাতালে উন্নয়নের ছোঁয়া ও রোগীদের অনাগ্রহে কালের বিবর্তনে এই অ্যাম্বুলেন্স আর আগের মতো ভাড়া পাচ্ছে না। ভাড়া না পাওয়ায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে ভ্যানগুলো। গত ৫-৬ বছরের ব্যবধানে কমেছে এ অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা। এখন চ হাসপাতালের সামনে মাত্র ৩-৪টি এমন বাহন দেখা যায়। এ বিষয়ে কথা হয় হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভ্যানচালকদের সঙ্গে।
তারা জানান, ৬-৭ বছর আগেও এ ধরনের ১৫-১৬টি ভ্যান ছিল। এখন সেই সংখ্যা অনেক কমে গেছে। অ্যাম্বুলেন্স ভ্যানের উদ্ভাবক শহিদুল ইসলাম জানান, ১৫ বছর আগে তিনি হাসপাতালের একটি প্রজেক্টে কাজ করেছিলেন। প্রজেক্ট শেষ হলে তিনি কর্মহীন হয়ে পড়েন।
এ সময় হাসপাতালের রোগী পরিবহনের জন্য একটি ভ্যান কেনেন। কিন্তু কাঠের ভ্যান হওয়ায় রোগীরা ৪ আসতে চাইতো না। হাত-পা ভাঙা, কোমরে ব্যথা রোগীদের এই ভ্যানে বসতে সমস্যা হতো। তখন রোগীদের কথা চিন্তা করে ভ্যানের ওপরে মোটা গদি বসান। এরপর থেকে যাত্রী সংখ্যাও বাড়তে থাকে। শহিদুলের দেখাদেখি আরও কয়েকজন এ ধরনের ভ্যান তৈরি করেন। এই ভ্যান চালিয়ে তারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। একসময় তাদের সংখ্যা বেড়ে ১৫-১৬ জনে দাঁড়াই। সময়ের আবর্তনে এখন রয়েছে মাত্র চারটি ভ্যান।
শহিদুল ইসলাম বলেন, এ ভ্যান চালিয়েই তার পরিবারের চার সদস্যের পেট চলে। তবে এখন এ পরিবহনে তেমন ভাড়া হয় না। বাকি চালকদেরও একই অবস্থা। এদের অনেকেই এ পেশা পরিবর্তন করেছেন। কথা হয় আরেক ভ্যানচালক আরিফের সঙ্গে।
তিনি বলেন, 'এই ভ্যানে একটি সমস্যা আছে। ওপরে ছাদ নেই। প্রখর রোদ-বৃষ্টিতে সমস্যা হয়। এ কারণে যেদিন ভারী বৃষ্টি হয় কিংবা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি লেগেই থাকে সেদিন আর তাদের ভাড়া হয় না। রোদ থাকলে কাছের ভাড়া হয়। দূরের রোগীরা অন্য পরিবহন খুঁজে নেন।'