প্রকাশ: শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৮:৫০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধকতা আটকাতে পারেনি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মিষ্টার মিয়াকে। সে সব বাধা ও প্রতিকূলতাকে জয় করে সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। মিষ্টার ঝিনাইগাতী উপজেলার জুলগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে এবং সে আহম্মদ নগদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। প্রবল ইচ্ছা শক্তি আর আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে প্রতিবন্ধি জীবনকে তিনি স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়ে লেখাপড়া করে যাচ্ছে।
মিষ্টার মিয়া বলেন, আমার বাবা জুলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মা ২০০২ সালে মারা যাওয়ার পর বাবা বিয়ে করেন। পরে ২০০৬ সালে বাবা মারা যান। রেখে যান প্রথমদিকে চার ভাই। এরমধ্যে সবার বড় ও মেজো ভাই ঢাকায় পোষাক শ্রমিক, আরেক ভাই কৃষি কাজ করে ও আমি সবার ছোট। পরের দিকে তিন বোন। অভাব-অনটনের সংসারে আমি পড়ালেখা বাদ না দিয়ে হাল ধরে থাকি। জুলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি ও ঘাগড়া এফ রহমান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়। পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য আহম্মদ নগদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সেখান থেকেই এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছি। আমার কেন্দ্র পড়েছে ডাঃ সেরাজল হক টেকনিক্যাল এন্ড কৃষি ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউটে। ভাইয়েরা সংসারে খরচ বহন করে। আমি প্রতিবন্ধি ভাতা পাই, তা দিচ্ছে নিজে ও পরিবারের কাজে লাগাই।
মিষ্টার আরও বলেন, আমার হাঁটতে ও কথা বলতে সমস্যা হয়। তারপরও আমি পড়ালেখা বাদ দিবো না। আমার ইচ্ছা আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবো। আমার এটাই আসল স্বপ্ন। আমি মনে করি সেই স্বপ্ন আজ পূরণ হতে চলেছে।
মানবাধিকার সংস্থা ও এনজিও সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সহকারী পরিচালক মো. নাঈম ইসলাম বলেন, এই সমাজের প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থীদের সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিশেষ সহযোগিতা করা প্রয়োজন। কারণ তারাও মানুষ, তাদেরকেও মূল¯্রােতে ফিরিয়ে আনা দরকার। ইচ্ছা শক্তির কারণে মিষ্টার যে এখনো পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে এতে আমরা তার থেকেও শিক্ষা নিতে পারি। ঝিনাইগাতীবাসী তার জন্য গর্বিত।
শেরপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রেজুয়ান বলেন, এবার এসএসসি পরীক্ষায় ঝিনাইগাতীর এক প্রতিবন্ধি পরীক্ষা দিচ্ছে। শুনেছি সে অত্যন্ত মেধাবী। তার পরীক্ষা আমরা গুরুত্বসহকারে নেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রতিবন্ধিরা যে সমাজের বোঝা নয়, তা সে প্রমাণ করে দিয়েছে সে। এসব প্রতিবন্ধিদের মূল ¯্রােতে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা। আমি তার সাফল্য কামনা করি।