বৈশ্বিক সর্বোচ্চ ফোরাম ৭৭তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে অবস্থিত সংস্থাটির কার্যালয়ে শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক যাওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে, ব্রিটিশ রানি এলিজাবেথের অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া এবং ব্যক্তিগত সফরে বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা ছেড়ে লন্ডন যাওয়ার কথা রয়েছে। এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান বৈশ্বিক সঙ্কট এবং রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জোড় দিবেন বলে ঢাকার কূটনীতিকরা জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের ৭৭তম সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হচ্ছেন দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এবং এফবিসিসিআই পরিচালক ড. কাজী এরতেজা হাসান, সিআইপি। এ ছাড়াও সফরসঙ্গী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যাবেন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিবসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একদল প্রতিনিধি। থাকবেন ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরাও।
জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হওয়া প্রসঙ্গে ড. কাজী এরতেজা হাসান বলেন, আমার পরম সৌভাগ্য যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বারবার আমাকে তার রাষ্ট্রীয় সফরগুলোতে সঙ্গে নেন। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসাবেই সারাজীবন আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করে যেতে চাই। জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে ভালোবেসে স্বাধীনতার ৫১ বছর পর সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয় করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে নেত্রী আমাকে যা বলবেন তাই করবো। সাতক্ষীরার মতো জামায়াত বিএনপি অধ্যুষিত আওয়ামী লীগকে আরো বেশি সুসংগঠিত করতে আমৃত্যু কাজ করে যাবো। এবার আমি লন্ডন হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছি। সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
প্রসঙ্গত, ড. কাজী এরতেজা হাসান এর আগে এই মাসে চার দিনের সফরে ভারতে, মার্চে ছয় দিনের সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাত, গত বছর ৩১ অক্টোবর থেকে ১৪ দিনের ইউরোপের তিন দেশ (যুক্তরাজ্য, স্কটল্যান্ড ও ফ্রান্স); এর আগেও সুইডেন, ব্রুনাই, জাপান, ভারত, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব ও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন।
উল্লেখ্য, পূর্ব নির্ধারিত সফরসূচি অনুযায়ী আগামী ১৫ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত সফর শেষ করে নিউইয়র্ক যাবেন এমনটাই কথা ছিল। কিন্তু এরমধ্যে ব্রিটিশ রানি না ফেরার দেশে চলে যাওয়ায় তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে রানি এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিটিশ রানি এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া লন্ডনে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। পরিবর্তিত সফরসূচি অনুযায়ী, আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে ওইদিনিই নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। সেক্ষেত্রে নিউইয়র্কে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা সংক্রান্ত ‘ট্রান্সফর্মিং এডুকেশন সামিট’ শীর্ষক একটি ইভেন্টে যোগ দিতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী, যা পূর্ব নির্ধারিত সূচিতে ছিল। তবে জলবায়ু সঙ্কট, রোহিঙ্গা সঙ্কট, ভূমিহীনদের ক্ষমতায়ন করা এবং চ্যাম্পিয়নস গ্রুপ অব গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স প্ল্যাটফর্মের সদস্যদের সঙ্গে জাতিসংঘের এসব সাইড ইভেন্টে যোগ দিবেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি একাধিক বিশ্ব নেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ এবং জাতিসংঘে দেশের পদ্মাসেতু উন্নয়নের একটি আলোকচিত্র প্রদর্শণীতে যোগ দিবেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতিসংঘ অধিবেশনে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলায় ভাষণ দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের ফলে বিভিন্ন ইস্যুতে চলমান সঙ্কটের সমাধান ও রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্ব পাবে। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপি সরবরাহ যোগাযোগ, খাদ্য, জ্বালানিসহ যেসব সঙ্কট চলছে তা সমাধানের জন্য বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ থাকবে সংলাপের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার প্রতি। পাশাপাশি জলবায়ু সঙ্কট ও রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়েও কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে, মিয়ানমার ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছে না এবং ইদানিংকালে সীমান্তে মিয়ানমারের যে কর্মকাণ্ড এসব বিষয় জাতিসংঘে তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী।